Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Sunday 15 December 2013

ভোট ছাড়াই মহাজোট সংখ্যাগরিষ্ঠ?

logoভোট গ্রহণের আগেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রায় ১৪৯টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি (জাপা), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় পার্টির (জেপি) সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলেই তাঁরা সাংসদ নির্বাচিত হবেন।
বিশেষজ্ঞদের দেওয়া তথ্যমতে, ১৯৮৮ সালে এরশাদ সরকার ও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে বিএনপি সরকারের একতরফা নির্বাচনেও এত বিপুলসংখ্যক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হননি।
বিভিন্ন জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্যমতে, ভোলা-১ তোফায়েল আহমেদ, ভোলা-৪ আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, ঝালকাঠি-২ আমির হোসেন আমু, বরিশাল-১ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, বরিশাল-৫ শওকত হোসেন হিরণ, পিরোজপুর-১ এ কে এম এ আওয়াল (সাইদুর রহমান), সিলেট-১ আবুল মাল আবদুল মুহিত, সিলেট-৬ নুরুল ইসলাম নাহিদ, সিলেট-৩ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, মৌলভীবাজার-৪ উপাধ্যক্ষ মো. আবদুস শহীদ, সুনামগঞ্জ-২ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আনিসুল হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ এ বি তাজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম-১ প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম-৭ হাছান মাহমুদ, চাঁদপুর-১ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, চাঁদপুর-২ মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, চাঁদপুর-৩ দীপু মনি, চাঁদপুর-৫ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রফিকুল ইসলাম, মাদারীপুর-২ শাজাহান খান, মাদারীপুর-৩ থেকে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, শরীয়তপুর-২ শওকত আলী, নোয়াখালী-৫ যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কুমিল্লা-১০ আ হ ম মোস্তফা কামাল, রংপুর-৫ এইচ এন আশিকুর রহমান, রাজশাহী-১ ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৪ এনামুল হক, রাজবাড়ী-২ কাজী কেরামত আলী, নারায়ণগঞ্জ-২ নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-৪ শামীম ওসমান, ঢাকা-৯ সাবের হোসেন চৌধুরী, ঢাকা-২ কামরুল ইসলাম, ঢাকা-৩ নসরুল হামিদ, ঢাকা-১০ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা-১৩ জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা-১৯ মো. এনামুর রহমান, মুন্সিগঞ্জ-৩ মৃণাল কান্তি দাস, যশোর-১ শেখ আফিল উদ্দিন, সাতক্ষীরা-৩ আ ফ ম রুহুল হক, সাতক্ষীরা-৪ জগলুল হায়দারসহ আওয়ামী লীগের ১২৬ জন প্রার্থীর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলেই তাঁরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন।
এ ছাড়া সিলেট-৫ সেলিম উদ্দিন, হবিগঞ্জ-১ এম এম মনিম চৌধুরী, সুনামগঞ্জ-৪ পীর ফজলুর রহমানসহ জাতীয় পার্টির ১৭ জন প্রার্থীর আসনে অন্য কেউ প্রার্থী নন। ফলে এই আসনগুলোর সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলে তাঁরা বেসরকারিভাবে সাংসদ নির্বাচিত হবেন। যদিও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
কুষ্টিয়া-২ থেকে হাসানুল হক ইনুসহ তিনজন নৌকা প্রতীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। এ ছাড়া ঢাকা-৮ রাশেদ খান মেনন, রাজশাহী-২ ফজলে হোসেন বাদশা ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে নৌকা প্রতীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হচ্ছেন। জাতীয় পার্টি (জেপি) থেকে পিরোজপুর-২ আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে যাচ্ছেন।
ইলেকশন না সিলেকশন?
নির্বাচনের আগেই এ ধরনের অবস্থা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘এই নির্বাচন “নির্বাচন” হলে প্রহসন কোনটা? এখন ইলেকশন হচ্ছে না, সিলেকশনে হচ্ছে। এই নির্বাচন আমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। এটা দেশের জন্য কাম্য হতে পারে না।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মিজানুর রহমান শেলী বলেন, ‘এটা চমকপ্রদ, উদ্দীপক ব্যাপার। ১৯৮৮ ও ১৯৯৬ সালের একতরফা নির্বাচনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সুযোগ পায়নি। ফলে এই সরকার কতখানি টেকসই হবে সেটা নিয়ে সন্দেহ থাকবে।’
সহিংসতার পটভূমিতে নির্বাচনে হচ্ছে উল্লেখ করে মিজানুর রহমান শেলী আরও বলেন, এ নির্বাচন জাতির জন্য, অর্থনীতি ও শান্তির জন্য কতটা সহায়ক সেটা প্রশ্ন থেকেই যাবে। এ জন্য সর্বদলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু যিনি চালকের আসনে বসে আছেন, নিজ অবস্থানে অটল না থেকে জাতিকে উদ্ধার করতে হবে।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘এ ধরনের অবস্থা বাংলাদেশ কখনো দেখেনি। এর বেশি মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।’