যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি নিয়ে পাকিস্তান পার্লামেন্টের পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যুদ্ধাপরাধীর
জন্য পাকিস্তানের পার্লামেন্টে প্রস্তাব গ্রহণের প্রতিক্রিয়ায় দেশজুড়ে
ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে বুধবার সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এই অবস্থান জানানো হল।
কাদের
মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের পর পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভের পর ১৬ ডিসেম্বর
দেশটির জাতীয় পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হয়, যাতে জামায়াত নেতার ফাঁসিতে উদ্বেগ
জানানো হয়।
একে
অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ উল্লেখ করে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকায়
পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে ডেকে এনে কড়া প্রতিবাদ জানায়।
এদিকে
গণজাগরণ মঞ্চের পাকিস্তান দূতাবাস ঘেরাও এবং বিভিন্ন জেলায় পাকিস্তানের পতাকা
পোড়ানোর মধ্যে বুধবার সন্ধ্যায় গণভবনে ১৪ দলের এক সভায় এ বিষয়ে প্রথম বক্তব্য নিয়ে
আসেন শেখ হাসিনা।
তিনি
বলেন, “আমার দেশের
যুদ্ধের সময় যারা অপরাধী, তারা আমার দেশের নাগরিক। তারা জনবিরোধী কাজ করেছে। আমরা
বিচার করেছি, এখানে পাকিস্তান পার্লামেন্ট নিন্দা প্রস্তাব নেয়ার কে?”
“তারাও
(পাকিস্তান) তো অপরাধী। তাদের সেনাবাহিনী এদেশের জনগণকে হত্যা করেছে, নারী ধর্ষণ
করেছে, নির্যাতন চালিয়েছে। আর তারা (জামায়াত নেতা) ছিল তাদের দোসর।”
“পাকিস্তানের
পার্লামেন্ট যে প্রস্তাব নিয়েছে, তার তীব্র নিন্দা জানাই। তাদেরকে আমি বলব,
বাংলাদেশ এখন স্বাধীন দেশ।”
যুদ্ধাপরাধী
কাদের মোল্লার জন্য হরতাল ডেকে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় নামে জামায়াত। অন্যদিকে
পাকিস্তানে প্রতিবাদ জানায় জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান।
জামায়াতের
সঙ্গে বিএনপির জোটের কথা ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “তাদের (পাকিস্তান)
নিন্দা প্রস্তাব নেয়া এটাই জানিয়ে দিল, এতদিন ধরে বিএনপির যে রাজনীতি এবং জামায়াতে
সঙ্গে গাঁট বাধা, একই ধরনের রাজনীতি।
“তাদের
দোসর আছে, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও গোলাম আযম গং জামায়াতে ইসলামীর জন্য তাদের
মায়াকান্না।”
কাদের
মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পর পাকিস্তান পার্লামেন্টে নিন্দা প্রস্তাব নেয়ায় খালেদা
জিয়ার ‘মুখোশ উন্মোচন’ হয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
“এটা
যে সেই কাদের মোল্লা, তা প্রমাণ হয়ে গেছে পাকিস্তানে। পাকিস্তানের পার্লামেন্টে
ইমরান খান, ওই নিয়াজির ভাতিজা, প্রস্তাব তুলেছে। এনিয়ে তিনিই আলোচনার সূত্রপাত
করেছেন।”
জামায়াত
ও বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “পাকিস্তানের
দালালদের ঠাঁই আর বাংলাদেশের মাটিতে হবে না। এদের বিচার অবশ্যই হবে। এই
বিচার আমরা করবই।”
গণভবনে
শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১৪ দলের বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে ছিলেন সৈয়দা
সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আব্দুল লতিফ
সিদ্দিকী, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, মাহবুব-উল আলম হানিফ, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির
নানক, নূহ-উল আলম লেলিন প্রমুখ।
ওয়ার্কার্স
পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের
সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, গণআজাদী লীগের সভাপতি আব্দুস সামাদ, জাসদের কার্যকরি
সভাপতি মঈন উদ্দিন খান বাদল, সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া, শিরিন আক্তার,
গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুর রহমান সেলিম, কমিউনিস্ট কেন্দ্রর
যুগ্ম-আহ্বায়ক অসিত বরণ রায়, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান
মল্লিক, ফজলে হোসেন বাদশা, ন্যাপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বৈঠকে
উপস্থিত ছিলেন।