Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Monday 16 December 2013

প্রতিবাদী ব্যবসায়ীরা রাজপথে

সহিংসতা বন্ধ করতে না পারলে নেতৃত্ব আমাদের দিতে হবে
অর্থনীতি রক্ষা করার কথা যাদের তারাই ধ্বংস করছে
আমাদের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে গেছে। শিল্পও অসুস্থ হয়েছে
সমঝোতা ও শান্তির জন্য রাস্তায় নামলেন ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকরা। সংঘাত নয়-সহাবস্থান, সহিংসতা নয়- শান্তির মিছিলে শরীক হতে রাজনীতিবিদদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
দেশজুড়ে শান্তির মিছিল ও সাদা পতাকা হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকরা রাজনীতিবিদদের বলেছেন, দয়া করে আমাদের রেহাই দিন। কেউ কেউ আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেছেন, অবরোধ-সহিংসতা চলতে থাকলে দোকানপাট বন্ধ করে দিতে হবে। কারাখানা চালু রাখা যাবে না। বেতনভাতা তো নয়ই, বরং কাজের সুযোগ হারাবে লাখ লাখ কর্মী। আর ব্যাংকের ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে দেউলিয়া হতে হবে অনেককে। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত শান্তির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে ছিল স্বতস্ফূর্ত মানুষের ভিড়। তাতে অনুপ্রাণীত হয়ে ব্যবসায়ী নেতারা আরো এক ধাপ এগিয়ে বললেন, আপনারা সমাধান করতে না পারলে আমাদেরকে রাস্তায় নামতে হবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের মানুষ ও অর্থনীতি রক্ষা করার দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের কিন্তু তারা সে দায়িত্ব পালন না করে উল্টো কাজ করছেন। রাজনীতি এখন মানুষ মারার নীতিতে পরিণত হয়েছে। সহিংসতা বন্ধে রাজনীতিবিদরা ব্যর্থ হলে নেতৃত্ব ব্যবসায়ীদের দিয়ে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। প্রয়োজনে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়া হবে বলেও হুমকি দেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল রবিবার রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। হরতাল ও অবরোধের প্রতিবাদে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত এ কর্মসূচি রাজধানীর ফেডারেশন ভবনে পালিত হয়। একই সঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের অধিভুক্ত ১৯টি জয়েন্ট চেম্বারসহ মোট ৯৩টি চেম্বার ও ৩৪০ এসোসিয়েশনের ব্যবসায়ী নেতাসহ সাধারণ ব্যবসায়ীরা দেশব্যাপী এ কর্মসূচি পালন করেন। শান্তির প্রতীক হিসেবে সাদা পতাকা হাতে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ান ব্যবসায়ীরা।
কর্মসূচিতে এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহ্মদ বলেন, আমরা অসুস্থ রাজনীতি চাই না, আমরা শান্তি চাই। বিভিন্ন স্থানে মানুষ হত্যা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ চলছে। সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কোনো মানুষই এখন নিরাপদে পথ চলতে পারছে না। ব্যবসায়ীরা নিরাপদে ব্যবসা করতে পারছে না। মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, আমরা দেশের রাজনৈতিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। তিনি বলেন, আমরা আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে চাই। সরকারকে এর নিরাপত্তা দিতে হবে। খেটে খাওয়া মানুষ বর্তমান সহিংসতার অবসান চায়।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমান বলেন, চলমান সহিংসতা বন্ধে রাজনীতিবিদরা ব্যর্থ হলে নেতৃত্ব আমাদের দিতে হবে। সমঝোতার মাধ্যমে যদি সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে আমাদের রাস্তায় নামতে হবে। তিনি বলেন, আমরা আর সহ্য করব না। এই রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।

আরেক সাবেক সভাপতি আনিসুল হক বলেন, মানুষ বাঁচানোর, অর্থনীতি বাঁচানোর কথা যাদের, তারাই মানুষ মারছে। অর্থনীতি ধ্বংস করছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে আমরা ভয়ে কথা বলতে পারছি না। রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনা করে অন্তত সাত দিন হরতাল-অবরোধ বন্ধ রাখুন। যাতে আমরা পণ্য আনা-নেয়া করতে পারি। শ্রমিকদের বেতন দিতে পারি।
সাবেক সভাপতি একে আজাদ বলেন, বর্তমানের সহিংস রাজনীতির কারণে ব্যাংক, বীমা, পোশাক শিল্পসহ সকল শিল্প ধ্বংসের পথে। দুই নেত্রী যদি সমস্যা সমাধানে না আসেন তাহলে আমরা তাদের দুই বাস ভবনের সামনে অবস্থান নেব। সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা সেখানেই থাকব।
বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, টানা হরতাল-অবরোধের কারণে আমাদের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে গিয়েছে। আমরা জানি না তা সোজা করব কিভাবে।
এফবিসিসিআইয়ের মতিঝিলস্থ প্রধান কার্যালয়ে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহেমদের সভাপতিত্বে এবং সহ-সভাপতি মোঃ হেলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহ-সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী, প্রাক্তন সভাপতি মাহবুবুর রহমান, মীর নাসির হোসেন, সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল কাশেম আহমদ, জসিম উদ্দিন, আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্স ইন বাংলাদেশের সভাপতি আফতাব-উল-ইসলাম, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি সবুর খান, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান মঞ্জু, রিয়েল এস্টেট এন্ড হাউজিং এসোসিয়েশনের (রিহ্যাব) সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভুঁইয়া, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল আজিম চৌধুরী পারভেজ, সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কর্মসূচিতে শান্তি, শান্তি শান্তি চাই; পোশাক শ্রমিক জনতা, গড়ে তোল একতা; শিল্প মালিক জনতা, গড়ে তোল একতা; সহিংস রাজনীতি নয়, দেশবাসী শান্তি চাই প্রভৃতি স্লোগান দেন ব্যবসায়ীরা। দৈনিক বাংলা মোড়, মৌচাক, মালিবাগ, নবাবপুর রোড ও সদরঘাটে শান্তিপূর্ণভাবে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
সাদা পতাকা হাতে মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আওয়াল মিন্টুর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ।