Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Friday 20 December 2013

বিরোধী দল হাজার হাজার গাছ কাটল, পরিবেশবাদীরা নিশ্চুপ

হরতাল অবরোধ প্রত্যাহার ও জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে

বিরোধী দল হাজার হাজার গাছ কাটল, পরিবেশবাদীরা নিশ্চুপ

........ প্রধানমন্ত্রী

ইত্তেফাক রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে আলোচনা চলছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরও আলোচনা চলবে। আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা হলে দশম সংসদ ভেঙ্গে প্রয়োজনে আবার নির্বাচন দেয়া হবে। তবে এর আগে বিএনপিকে অবশ্যই হরতাল-অবরোধ, মানুষ হত্যা বন্ধ এবং জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। একই সঙ্গে তিনি পরিবেশবাদীদের বর্তমান ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, আন্দোলনের নামে বিরোধী দল হাজার হাজার গাছ কেটেছে। কিন্তু একজন পরিবেশবাদীও এ নিয়ে কিছু বলল না। একটা প্রতিবাদ তাদের কাছ থেকে পাইনি। মানুষ হত্যার প্রতিবাদও পাইনি। কোন সংগঠন একটা বিবৃতি দিল না। অথচ সরকার কোন ভাল উদ্যোগ নিতে গেলেই তারা (পরিবেশবাদীরা) লংমার্চসহ বিভিন্ন কিছু করে ফেলে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। এ নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ার সুযোগ নেই। খালেদা জিয়া নির্বাচনের 'ট্রেন মিস' করেছেন। তিনি এই নির্বাচনে আসতে পারবেন না। সংবিধান অনুযায়ী ঘোষিত তফসিল মোতাবেক যথাসময়েই নির্বাচন হবে। ১২টি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট ৫৪০ জন প্রার্থী এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। মানুষের জীবন নিয়ে খেলা বন্ধ করার জন্য তিনি বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন বানচালের মাধ্যমে দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে বিএনপি-জামায়াত জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাদের মূল লক্ষ্য যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করা। আর এ জন্য আন্দোলনের নামে তারা মানুষ হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলছে। যা সম্পূর্ণ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। তিনি বলেন, বিএনপির মূল শক্তি জামায়াত। বিএনপি কর্মসূচি ঘোষণা করে আর পালন করে জামায়াত।
তিনি বলেন, জামায়াত উচ্চ আদালতের মাধ্যমে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা হওয়ায় খালেদা জিয়াও নির্বাচনে আসলেন না। তাকে নির্বাচনে আনার জন্য সর্বোচ্চ ছাড় দেয়া হয়েছে, আলোচনার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু উনি আমার আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে একের পর এক হুমকি ও আল্টিমেটাম দিয়ে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের ধৈর্য ও সহ্যের একটা সীমা থাকে। হরতাল-অবরোধের নামে মানুষ হত্যা বন্ধ না করলে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দেয়ার স্বার্থে যত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন তার সবই করবে সরকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের অবরোধ কিসের জন্য? তারা তো সরকারি কার্যক্রম বন্ধ করতে পারছে না। ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া ও খেটে খাওয়া মানুষের রুটি রোজগার বন্ধ এবং সাধারণ মানুষ হত্যা ছাড়া তারা কিছুই অর্জন করতে পারছে না।
যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির প্রতিবাদে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে গৃহীত 'নিন্দা প্রস্তাবের' তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাত্তরের যারা জনবিরোধী কাজ করেছে সেসব মানবতাবিরোধীদের বিচার আমাদের দেশে হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়ায় পাকিস্তানের দরদ কেন উথলে পড়ছে? বাংলাদেশের একজন নাগরিকের বিচার হচ্ছে এটা নিয়ে তাদের এত মাথা ব্যথা কেন? ইমরান খান নিয়াজীর দরদ উতলে উঠেছে। অবশ্য এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে বিএনপি-জামায়াত পাকিস্তানের অন্তরাত্মা। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেশের জনগণের দাবি। এ বিচার অব্যাহত থাকবে। একজন যুদ্ধাপরাধীর রায় ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে। বাকিদের রায়ও কার্যকর করা হবে।

সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের পর মার্শল ল' জারি করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন জিয়াউর রহমান। এরপর থেকে ৩৮ বছর দেশে নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য কোন স্থায়ী ব্যবস্থা ছিল না। এডহক বেসিসে নির্বাচন হয়েছে। এবার আমরা বিশ্বের সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মতো নির্বাচনের একটি স্থায়ী ব্যবস্থা চালু করে যাচ্ছি। যাতে ভবিষ্যত্ প্রজন্ম যুগ যুগ ধরে এর সুফল ভোগ করতে পারে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের অধীনে ৫ হাজার ৮০৩টি জাতীয়সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন হয়েছে। একটি নির্বাচন নিয়েও কোন ধরনের অভিযোগ উঠেনি। অনেক নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। আমরা মাগুরা মার্কা নির্বাচন করিনি। তিনি বলেন, বিরোধী দলকে এবার আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিয়েছি। তাছাড়া এবার কোন ভুয়া ভোটারও নেই।

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের সাফল্য তুলে ধরে বলেন, আমরা সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন করেছি বলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেল। ক্ষমতায় আসার পর আমরা প্রতিশোধ নেয়নি। দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে ইনশাল্লাহ।
নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে মনে করেই আমরা মহাজোট আসন ভাগাভাগি করেছিলাম। অনেক স্থানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারও করে নিয়েছিল। এ কারণে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছে।

বিরোধী দলীয় নেত্রীর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী আপ্লুত কণ্ঠে বলেন, যেদিন আমি বাবা-মাসহ সবাইকে হারিয়েছি সেই ১৫ আগস্ট বিরোধী দলীয় নেত্রী তার মিথ্যা জন্মদিন পালন করেন। অথচ তার স্কুলে ভর্তির রেজিস্টেশনে, বিয়ের তারিখে, আর্মি অফিসারের স্ত্রী হিসেবে দাখিলকৃত কাগজপত্রের কোথাও ১৫ আগস্ট জন্মদিন নেই। ১৯৯৩ সাল থেকে উনি এই দিন জন্মদিন পালন করেন। মূলত খুনিদের উত্সাহিত করতেই তিনি এটা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর তার সভাপতিত্বে নেতৃবৃন্দের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, ওবায়দুল কাদের, নূহ-উল-আলম লেনিনসহ দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, সংবিধানের মধ্য থেকেই বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা হলে সময় অনুযায়ী আবার নির্বাচন দেয়া হবে-আওয়ামী লীগের স্ট্যান্ড এটাই হওয়া উচিত। এ সময় বৈঠকে উপস্থিত সবার সঙ্গে একমত পোষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের মধ্যেই আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা হলেই সংসদ ভেঙ্গে নির্বাচন দেয়ার কথাই আমি বলেছি। বৈঠকে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যদের দায়িত্ব বণ্টন করা হয়। উপ-কমিটি কমিটি গঠন করতে আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় আবার আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
জানা গেছে, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুর জন্য সকলকে সজাগ ও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ের টিম গঠন করে তৃণমূলে সাংগঠনিক সফর করার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।

আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দশম জাতীয় নির্বাচনে ৫০ ভাগের বেশী ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে রবিবার থেকেই সর্বাত্মক নির্বাচন যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে ক্ষমতাসীন এ দলটি। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন সম্পন্ন করতে দৃঢ় অবস্থানে থেকেই ঢাকায় বসে না থেকে সকল বিজয়ী ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের যার যার এলাকায় গিয়ে নির্বাচনের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে যেসব আসনের প্রার্থী ইতিমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন, তাদেরও নির্বাচন হচ্ছে এমন আসনগুলোতে গিয়ে প্রচার কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। বৈঠক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের বর্তমান নির্বাচন পরিচালনা কমিটি কিছুটা পুনর্গঠন করা হবে। নির্বাচনের জন্য যেসব সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে সেগুলোরও পুনর্গঠন করা হবে। এতো দিন আওয়ামী লীগের নির্বাচন সংক্রান্ত সমস্ত কাজ করে আসছিলেন সাবেক সচিব রশিদুন্নবী। পুনর্গঠিত যে কমিটি হবে সেখানে তিনি প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর অধীনে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে একটি টিম কাজ করবে।

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, নতুন যেসব তরুণ নেতাকে সহ-সম্পাদক করা হচ্ছে তাদের মধ্য থেকে একটি বড় অংশ নির্বাচনে কাজ করবে। এসব নেতাদের নেতৃত্ব দেবেন রশিদুন্নবী। বর্তমানে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ের কাজ করছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচ টি ইমাম।

আমুর বাসায় ১৪ দল নেতৃবৃন্দের বৈঠক

এদিকে সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের চিত্র তুলে ধরে লিফলেট, পোস্টার ও বই ছাপাবে ১৪ দল। নির্বাচনের আগেই এই বই এবং লিফলেট সারাদেশে পাঠানো হবে। গতকাল বিকালে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমুর ইস্কাটনের বাসায় শরীক দলের নেতাদের সঙ্গে এ সংক্রান্ত এক বৈঠক করে আওয়ামী লীগ। ঘন্টাব্যাপী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, মইনুদ্দিন খান বাদল।
বৈঠকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, জামায়াত-শিবির কর্তৃক সারাদেশে রাস্তার পাশে গাছ কাটা, আওয়ামী লীগ ও শরীক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের হত্যা, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া, পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ মারা, রেল লাইনের ফিসপ্লেট তুলে ফেলাসহ সব ধরনের চিত্র ওই বইয়ে কিভাবে তুলে ধরা যায় সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।