Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Wednesday 25 December 2013

কপ্টারে উড়ে এসে কপ্টারেই ফিরে গেলেন প্রার্থী

গোলাম মর্তুজা, এম. জে. আলম ও এ বি এম রিপন | আপডেট: ০৪:১৪, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৩ | প্রিন্ট সংস্করণ
লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব এম এ আউয়াল। হেলিকপ্টারে চড়ে তিনি গতকাল  নির্বাচনী কাজে ঢাকা থেকে রামগঞ্জে আসেন। পরে পৌরসভার একটি গাড়িতে মীরন শাহ পীরের মাজারে যান। বিকেলে তিনি হেলিকপ্টারেই ফিরে যান ঢাকায় ছবি: প্রথম আলো
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কোনো আমেজই নেই লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় (লক্ষ্মীপুর-১ আসন)। আলোচনা বা উৎসাহও নেই সাধারণ মানুষের মধ্যে। এক প্রার্থীকে তো মানুষ তেমন চেনেই না। তবে সেই প্রার্থী তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব এম এ আউয়াল গতকাল সোমবার হেলিকপ্টারে উড়ে এলাকায় এসে এবং হেলিকপ্টারেই ঢাকায় ফিরে চমক দেখিয়েছেন।
এই প্রার্থীকে নিয়ে হয়েছে মোটর শোভাযাত্রাও। এতে ছিল পৌরসভার একটি পিকআপও। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী প্রার্থীর হেলিকপ্টার ব্যবহার ও মোটর শোভাযাত্রা অবৈধ। ‘একতরফা’ এই নির্বাচনেও আচরণবিধি লঙ্ঘনের এমন ঘটনা ঘটল।
আগামী ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন। কিন্তু এখনো এলাকায় নির্বাচনের আমেজ না থাকা নিয়ে দুপুরে রামগঞ্জ উপজেলা সদরের একটি চায়ের দোকানে কথা হচ্ছিল কয়েকজনের সঙ্গে। এমন সময় আকাশে সশব্দে উড়তে থাকে একটি হেলিকপ্টার। পরে সেটি নামে রামগঞ্জ পৌরসভার দোতলা ভবনের ছাদে। হেলিকপ্টার দেখতে ছোটে তরুণ, কিশোর আর শিশুর দল। হেলিকপ্টার থেকে ছাদে নামেন নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে নামা এম এ আউয়াল। আগে থেকে প্রস্তুত থাকা উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা স্বাগত জানান জেলায় আসা নতুন প্রার্থীকে। তাঁর সঙ্গেই ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে আসেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহজাহান ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনির চৌধুরী।
পরে এম এ আউয়াল পৌর ভবন মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি হেলিকপ্টার ভ্রমণের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল। হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে শাহজাহানসহ কয়েকজন এসেছেন। বাড়ি থেকে এসে আমি ছাদের ওপর ছিলাম।’
এরপর এম এ আউয়াল পৌরসভার একটি পিকআপসহ (প্রকল্প থেকে দেওয়া) শতাধিক মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের মীরন শাহর (স্থানীয় পীরের মাজার হিসেবে পরিচিত) মাজারে গিয়ে জিয়ারত করেন। পরে মোটর শোভাযাত্রা রামগঞ্জ সদরের দিকে যায়। প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দিতে রামগঞ্জের জিয়া শপিং কমপ্লেক্সের মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় পরিচিতি সভার। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা আউয়ালকে পরিচয় করিয়ে দেন এবং নৌকা প্রতীকে ভোট চান। সভা শেষে বিকেলে হেলিকপ্টারে চড়েই আবার ঢাকায় ফেরেন এম এ আউয়াল।
বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মুঠোফোনে আউয়ালের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি ঢাকায় পৌঁছে গেছেন। তিনি তখন প্রথম আলোকে বলেন, আসলে তিনি হেলিকপ্টারটি ভাড়া করেননি। চড়েছেন মাত্র। তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী মূলত হেলিকপ্টারটি ভাড়া করেছিলেন কুমিল্লার লাকসামে নির্বাচনী সভায় যাওয়ার জন্য। তাঁকে কুমিল্লায় নামিয়ে দিয়ে তাঁরা তিনজন রামগঞ্জে যান। তাঁর সঙ্গে রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা ছিলেন। তাঁরাই তাঁকে মাজারে নিয়ে যান।
অবশ্য ওই হেলিকপ্টার পরিচালনা সংস্থা বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন সূত্রে জানা যায়, ওই হেলিকপ্টারে পাইলটসহ চারজন বসার সুযোগ রয়েছে।
রামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বেলাল আহমেদ বলেন, প্রার্থী নয়, উপজেলার আওয়ামী লীগের দুই নেতা হেলিকপ্টারে করে এসেছেন। তাঁরা আসার পর তিনিসহ সবাই মীরন শাহর মাজারে যান। সেখানে পৌরসভার কোনো গাড়ি ব্যবহার করা হয়নি। একটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) গাড়ি তাঁরা ব্যবহার করেছেন।
তবে ওই বেসরকারি সংস্থা পৌরসভার ব্যবহারের জন্য একটি প্রকল্পের আওতায় ওই গাড়ি দেয় বলে জানা গেছে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জসীমউদ্দীন বলেন, হেলিকপ্টার এবং মোটর মহড়ার বিষয়টি জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে।
রামগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী মাহাবুবুল আলম বলেন, ‘প্রার্থী হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে আসার বিষয়টি শুনেছি। জেলার দুজন বিচারককে নিয়ে গঠিত একটি নির্বাচনী তদন্ত কমিটি রয়েছে। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি অথবা যে কেউ কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করলে ওই কমিটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি (আনারস প্রতীক) শফিকুল ইসলাম তাঁর প্রচারকাজ ব্যাহত করার অভিযোগ এনেছেন। গতকাল তিনি বলেন, রোববার রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোস্তফা ভূঁইয়ার বাড়িতে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সৈকত মাহমুদ শামসুর নেতৃত্বে চার-পাঁচজন হামলা করে। মোস্তফা ভূঁইয়া তাঁর পক্ষে কাজ করছেন। এ ছাড়া তাঁর নির্বাচনী কর্মীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি উপজেলা নির্বাচনী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন।