Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Friday 20 December 2013

নির্বাচনে আ'লীগ জিতলেও হারবে বাংলাদেশ


সমকাল ডেস্ক
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ জয়ী হলেও হারবে বাংলাদেশ। এমনটাই মূল্যায়ন বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিটেনের প্রভাবশালী 'দি ইকোনমিস্ট' ম্যাগাজিনের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত এক নিবন্ধের।
'দ্য ক্যাম্পেইন ট্রেইল_ দ্য রুলিং পার্টি উইল উইন বাংলাদেশ'স ইলেকশন, দ্য কান্ট্রি উইল লস' শীর্ষক নিবন্ধটি ইকোনমিস্টের আগামীকাল শনিবারের সংখ্যায় প্রকাশ হওয়ার কথা। নিবন্ধের শুরুতে বলায় হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে প্রক্রিয়ায় তার শাসন ক্ষমতার মেয়াদ বাড়াতে চাইছেন একজন ইউরোপীয় কূটনীতিক সেই প্রক্রিয়াকে 'ধাপে ধাপে অভ্যুত্থান' হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ইকোনমিস্ট লিখেছে, প্রধান বিরোধী দল (বিএনপি) ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করবে। এর ফলে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত। যদিও বৈধতার প্রশ্নটি ভিন্ন বিষয়। এতে আরও বলা হয়, নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক সহিংসতায় শতাধিক লোক নিহত হয়েছে। সর্বশেষ নিহতের ঘটনা ঘটছে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার পর। কাদের মোল্লাকে একটি জনপ্রিয় তবে ত্রুটিপূর্ণ যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
নিবন্ধে বলা হয়, শেখ হাসিনার অজনপ্রিয় সরকার দেশের ব্যাপক এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। শেখ হাসিনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি রাজপথে রাজনীতি করছে। তারা একের পর এক সাধারণ ধর্মঘট ডাকছে। এতে দেশের পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। আর বিএনপির মিত্র জামায়াত লড়ছে অস্তিত্বের লড়াই। রাজনৈতিক বিরোধীদের হাত-পায়ের রগ কাটার জন্য কুখ্যাত জামায়াতের গুণ্ডাবাহিনী এখন সরাসরি হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনীও সরাসরি গুলি করে প্রত্যুত্তর দিচ্ছে। ১৬ ডিসেম্বর তারা জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সাতক্ষীরায় ৫ জামায়াত সমর্থককে হত্যা করেছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে জামায়াতের যুব সংগঠনের সদস্যরা (ছাত্রশিবির) হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও দোকানপাট জ্বালিয়ে দিয়েছে। আর আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা পালিয়ে চলে এসেছে রাজধানীতে। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাতে ইকোনমিস্ট বলছে, 'জামায়াতের সব নেতার ফাঁসির রায় কার্যকর করতে শেখ হাসিনা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে কৃতিত্ব দেওয়া যায় খুবই কম। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি শেখ হাসিনাকে ফাঁসি কার্যকর না করতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু সমঝোতা তার (হাসিনা) স্টাইল নয়।'
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে ইকোনমিস্টের নিবন্ধে বলা হয়, 'শেখ হাসিনা পাঁচ বছর আগের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছিলেন। ২০১১ সালে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধান থেকে ছেঁটে ফেলা হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অবিশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৬ সালে নির্বাচনকালীন সরকারের এ ব্যবস্থা সংবিধানে যুক্ত হয়েছিল। এ সরকারব্যবস্থা বাতিল করে সংবিধান সংশোধনী বাংলাদেশে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে। শেখ হাসিনা ইচ্ছাকৃতভাবে সর্বময় শাসক হতে চাননি। সম্ভবত সংবিধান সংশোধনীই তাকে সে সুযোগ করে দিয়েছে। তার পদ থেকেই সরকার একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করে। আগামী নির্বাচনের সবচেয়ে বড় অসুবিধার দিক হলো ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪ আসনেই কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। বিএনপি ও তাদের জোটের ১৭টি দল নির্বাচন বয়কট করেছে। নির্বাচন বয়কট করায় দেশের তৃতীয় বৃহত্তম দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে হাসপাতালে বন্দি করে রাখা হয়েছে। দেশের এরপরের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল জামায়াতের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। দলটির গঠনতন্ত্রের ধর্মীয় বিধান বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে দলটির ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।'
'আওয়ামী লীগ অন্তত নির্বাচনে জিতবে। ৫ জানুয়ারি যা-ই হোক না কেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে বরণ করার সংসদ সদস্যের অভাব হবে না। দেশে-বিদেশে এ নির্বাচন বৈধতার সংকটে পড়বে। বাংলাদেশের বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতই একমাত্র বিদেশি শক্তি, যারা একদলীয় নির্বাচন সমর্থন করছে। নির্বাচনের আগেই ফল নিশ্চিতের (হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এ ধরনের ব্যবস্থা চালু করেন) নির্বাচনী ব্যবস্থার পৃষ্ঠপোষকতার ভারতীয় সিদ্ধান্ত অপরিণামদর্শী প্রমাণিত হতে পারে। বাংলাদেশে এরই মধ্যে ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্ট জোরদার হয়েছে। শেখ হাসিনার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার বিষয়ে ভারতীয় পৃষ্ঠপোষকতা ভারতবিরোধীদের সুযোগ করে দিতে পারে। এতে অধিকতর কট্টর এবং কম ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের উদ্ভব হতে পারে।'
ইকোনমিস্ট বলছে, এ অবস্থায় (বাংলাদেশের) সেনাবাহিনী কোনো পদক্ষেপ নিতে ইচ্ছুক নয়। তারা ২০০৭ সালে একটি অনির্বাচিত টেকনোক্রেট প্রশাসনকে সমর্থন দিয়েছিল, যখন খালেদা জিয়া নির্বাচন হাইজ্যাক করতে চেয়েছিলেন। এমনকি এবার বিদেশি শক্তিরাও অভ্যুত্থান সমর্থন করবে না, যেমনটি তারা তখন করেছিল। সুতরাং মাসজুড়েই চলতে পারে লড়াই। এমনকি আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতাও স্বীকার করছেন, একটি যথার্থ নির্বাচন হওয়া উচিত। এক জনমত জরিপ মতে, মাত্র ৩০ শতাংশ বাংলাদেশি জেনারেলদের ক্ষমতা দখল চায়। আর তারা (জেনারেলরা) যদি তা করে এবং আরেকটি নির্বাচন হয় তাহলে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ বাংলাদেশি চাইবেন 'কলহেলিপ্ত দুই বেগম' রাজনীতি থেকে বিদায় নিন। সুতরাং তারা যে কাজই করুন না কেন, তাদের (দু'জন) ছাড়া (বাংলাদেশের) কোনো গতি নেই বলেই মনে হচ্ছে।