Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Thursday 26 December 2013

হলফনামা নিয়ে ইসির ডিজিটাল কারসাজি

সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের আট দফা ব্যক্তিগত তথ্যসংবলিত হলফনামা প্রকাশে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে ডিজিটাল কারসাজির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগের আপত্তির ৪৮ ঘণ্টা না পেরোতেই ওয়েবসাইটের সংশ্লিষ্ট পেজে সাধারণ ব্যবহারকারীদের প্রবেশ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ইসির আইটি (তথ্যপ্রযুক্তি) বিভাগের দাবি, একই সঙ্গে অনেক ব্যবহারকারী প্রবেশের চেষ্টার কারণে গতি মন্থর দেখাচ্ছে।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ও আইটি সংশ্লিষ্টরা এ যুক্তি উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ইসির ওয়েবসাইটের অন্য পেজগুলোতে খুব সহজেই প্রবেশ করা যাচ্ছে। শুধু হলফনামার পেজেই সমস্যা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট পেজের লিঙ্ক ডাউন এবং ব্যান্ডউইথের গতি কমিয়ে দেওয়ার ফলেই সারাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য ওই পেজে প্রবেশ করা আর সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি আয়কর রিটার্নের তথ্যসহ অন্য সব পেজে প্রবেশে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ইসি সচিবালয়ের একাধিক কর্মকর্তা একে ডিজিটাল কারসাজি বলে উল্লেখ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল রাতে ইসি কার্যালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক সমকালকে বলেন, কোনো দলের কথায় কমিশন কাজ করে না। আইনগতভাবে হলফনামা একটি পাবলিক ডকুমেন্ট। এ ব্যাপারে কমিশনের অবস্থান সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পর ইসির আইসিটি
বিভাগের প্রধান সিস্টেম ম্যানেজারকে ডেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছিল। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, এখানে কোনো সমস্যা নেই। এটা সবাই দেখতে পারছে বলেও দাবি করেন ড. সাদিক।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম সমকালকে জানান, সংশ্লিষ্ট লিঙ্কের গেটওয়ে লক করাসহ যে কোনো উপায়ে তা বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব। ফলে সর্বসাধারণ তা দেখতে পাচ্ছে না। তবে তথ্যগুলো ওয়েবসাইটে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারের উচিত হবে দ্রুত বিষয়টি সুরাহা করা।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি) একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তারা বলেছেন, এটা পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ বিষয়ে তাদের কিছুই বলার নেই। অন্যদিকে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) জানিয়েছে, তারা সরকারি সব ওয়েবসাইটের হোস্টিংয়ের দায়িত্ব পালন করলেও পরিচালনার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতর বা প্রতিষ্ঠানের।
নির্বাচন কমিশনের আইসিটি অনু বিভাগের প্রধান ও সিস্টেম ম্যানেজার রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার নিজ কার্যালয়ের কম্পিউটার থেকে হলফনামা দেখালেও বাইরে থেকে কেন দেখা যাচ্ছে না, তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তার সামনে আইফোনে ওয়েবসাইটে ওই পেজে প্রবেশের চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি। এমনকি সমকালের পক্ষ থেকে দেশের বেশ কয়েকটি জেলার কম্পিউটার থেকে অনেকবার চেষ্টা করেও সংশ্লিষ্ট পেজে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। দেশের বাইরেও বেশ কয়েকটি স্থান থেকে ওই পেজে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। রফিকুল ইসলাম দাবি করেছেন, অনেক ব্যবহারকারী একই সঙ্গে প্রবেশের চেষ্টা করছে বলেই গতি কমে গেছে। তবে ওয়েবসাইটটির বটম লাইনে ভিজিটরদের কাউন্টিং সংখ্যা দেখানোর স্থানটিও বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
আমেরিকায় অবস্থানরত ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের পিএইচডি শিক্ষার্থী মুহাম্মদ আবু ওবায়দা সমকালকে জানান, নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের সংশ্লিষ্ট লিঙ্কের গতি সংকুচিত (ব্যান্ডউইথ থ্রটেলিং) করা হয়েছে। আমেরিকা থেকেও ডাউনলোড করতে সমস্যা হচ্ছে। আর দেশে একেবারেই ডাউনলোড না হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি জানান, গতি কম থাকায় অনেক সময় ধরে ফাইল ডাউনলোড প্রক্রিয়া চলতে থাকে। এতে একপর্যায়ে তা বন্ধ হয়ে যায়। (http://www.samakal.net/2013/12/26/28777)
ইসি সচিবালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৩ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যার দিকে ওয়েবসাইটে হলফনামার তথ্য প্রকাশ করে ইসি। দেশের প্রায় সব গণমাধ্যমে একাধিক দিন হলফনামা নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের নির্বাচন কমিশন সমন্বয় উপকমিটির আহ্বায়ক ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নেতৃত্বে একটি দল সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে হলফনামা প্রকাশের বিষয়ে আপত্তি তোলে। ওই দিন আওয়ামী লীগ ও কমিশনের পক্ষ থেকে বিষয়টি অস্বীকার করা হলেও পরের দিন সিইসি নিজেই জানান, হলফনামা প্রকাশের আইনগত দিক খতিয়ে দেখছেন তারা। অন্য একজন কমিশনার জানিয়েছিলেন, শুধু প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে তথ্য দেওয়া অথবা শুধু প্রার্থীর আয় ও ব্যয় প্রকাশ করার কথা ভাবছে কমিশন। পরের দিন ইসির এমন পরিকল্পনা নিয়ে গণমাধ্যমে নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হয়। ফলে ওই পরিকল্পনা থেকেও সরে আসে কমিশন। এরপর মঙ্গলবার সকাল থেকেই হলফনামার লিঙ্কের গতি কমে যায় এবং ওই পেজে প্রবেশ অসাধ্য হয়ে পড়ে। যদিও নির্বাচনী আইন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় কমিশন এ তথ্য শুধু প্রকাশ নয়, প্রচার করতেও বাধ্য। আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল কমিশনকে বলেছিল, প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রতিশ্রুতি-সংক্রান্ত সাধারণ তথ্য প্রকাশ করা যেতে পারে। কিন্তু তাদের এবং পরিবারের নির্ভরশীলদের সম্পদের তথ্য প্রকাশ যুক্তিসংগত নয়।
প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, আয়ের উৎস ও ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতাসহ আট ধরনের তথ্য জানানোর নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী আবদুল মোমেন চৌধুরী, কে এম জাবের ও জহুরুল ইসলাম ২০০৫ সালে জনস্বার্থে রিট করেন। ওই বছরের ২৩ এপ্রিল সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি রুল জারি করেন আদালত। ২৪ মে হাইকোর্ট প্রার্থীদের আট ধরনের তথ্য সরবরাহের নির্দেশ দিয়ে রায় দেন।
এরপর সন্দ্বীপের জনৈক আবু সাফার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি জয়নুল আবেদীন ২০০৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২২ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের (যা পরে হয়নি) মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পাঁচ দিন আগে এ স্থগিতাদেশ আসে। তাই তখন অভিযোগ ওঠে, বিএনপি পেছনে থেকে জনৈক আবু সাফাকে দিয়ে এ আবেদন করিয়েছে।
এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর ২০০৭ সালের ১৯ নভেম্বর আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। ২০ নভেম্বর আদালত আবু সাফাকে হাজির করতে নির্দেশ দেন। তাকে হাজির করা হয়নি। ২০০৭ সালের ১১ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ওই আপিল খারিজ করে দেন। ফলে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকে। আদালতের রায়ের পর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করা হয়। এতে কোনো প্রার্থী হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে তার প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার বিধান রয়েছে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রার্থীদের তথ্য নির্বাচন কমিশনকে প্রচার করতে হবে বলে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে। গত নির্বাচনে কমিশন প্রার্থীদের হলফনামা লিফলেট করে নির্বাচনী এলাকায় বিতরণও করেছিল।