Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Wednesday 18 December 2013

শুরু হয়েছে আমেরিকা-ভারত কাজিয়া

দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের নিরাপত্তার জন্য পেতে রাখা ব্যারিকেডগুলো সরিয়ে নিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। ছবি: দ্য হিন্দুভারতীয় কূটনীতিক দেবযানি খোবরাগাড়েকে গ্রেপ্তারের জের ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে উচিত জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ আজ মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পুরো ঘটনাটি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের বিশ্বাস আমরা তাঁর (দেবযানি) মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে একটি ফলপ্রসূ পথ খুঁজে পাব।... আমাদের পক্ষে এ নিয়ে যা করা সম্ভব, তা-ই করব।’
উল্লেখ্য, নিউইয়র্কে নিযুক্ত ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানি খোবরাগাড়েকে (৩৯) গত বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে গ্রেপ্তার করে যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি একজন গৃহকর্মীকে ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রেকে যেসব তথ্য দিয়েছেন, তাতে মিথ্যাচার করেছেন। পরবর্তী সময় যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ দেবযানিকে কারাগারে বিবস্ত্র করে তল্লাশি করেছে, মাদকাসক্তদের সঙ্গে একই কক্ষে আটক করে রেখেছে এবং তাঁর ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করেছে।
ভারত বলছে, দেবযানির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই আচরণ ভিয়েনা কনভেনশনের ৪১ নম্বর অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো কূটনীতিকের ‘গুরুতর অপরাধের’ জন্য শুধু গ্রেপ্তার করা যেতে পারে। ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শংকর মেনন বিষয়টিকে ‘ঘৃণ্য ও বর্বর’ বলে অভিহিত করেছেন।
গত শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েলকে তলব করেন এবং ঘটনাকে ‘অগ্রহণযোগ্য আচরণ’ বলে প্রতিবাদ জানান। গতকাল সোমবার লোকসভার স্পিকার মিরা কুমার ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শংকর মেনন প্রতিবাদের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেছেন।
আজ মঙ্গলবার প্রতিবাদস্বরূপ কংগ্রেসের সহসভাপতি রাহুল গান্ধী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার সিন্ধে ও গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেছেন। সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ভারত সরকার দেশটিতে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের পরিচয়পত্র জমা দেওয়ার আদেশ দিয়েছে। বিমানবন্দরে ব্যবহারের জন্য দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সব ধরনের পাস প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোর জন্য পণ্য আমদানিতে বিশেষ অগ্রাধিকার সুবিধা আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যেসব নাগরিক ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন তাঁদের ভিসার তথ্যসহ ব্যাংক-বিমা অ্যাকাউন্ট ও বেতন বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ভারত সরকার যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোতে কর্মরত ভারতীয় কর্মীদের বেতন ও ভাতার হিসাব চেয়েছে। দূতাবাস কর্মকর্তাদের গৃহস্থালি কাজে কর্মরত ভারতীয় শ্রমিকদের বেতন ও ভাতার খুঁটিনাটি জানতে চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। আজ সকালে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোর নিরাপত্তার জন্য ব্যবহূত ব্যারিকেডগুলো তুলে নেওয়া হয়েছে। এতে ওই সব প্রতিষ্ঠান অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।
বিজেপির নেতা যশবন্ত সিং মনে করেন, এ পদক্ষেপগুলো যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে এসেছে আমরা অনেক সমকামী মার্কিন কূটনীতিককে ভিসা দিয়েছি। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী সমলিঙ্গের মধ্যে যৌনমিলন ভারতে সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। আমাদের সরকারের উচিত এসব কূটনীতিককে গ্রেপ্তার করা এবং ভারতের আইনানুযায়ী শাস্তি দেওয়া।’
ভারতের প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকারের পদক্ষেপগুলোর প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে। বিজেপি বলছে, ভারতীয় কূটনীতিকদের সম্মান ও দেশটির সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের সঙ্গে সমন্বয়যোগ্য কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে। দলটি আরও বলে, ‘আমাদের সঙ্গে যে ব্যবহার করা হয়েছে, ঠিক সেভাবে তাদের উত্তর দিতে হবে। একটু বেশিও নয়, একটুকু কমও নয়। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র আমাদের কূটনীতিকদের সঙ্গে ভদ্র ব্যবহার করেনি, আমরাও তাদের প্রাপ্য আচরণ দেব না।’