Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Thursday 26 December 2013

২৯ ডিসেম্বর কী হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: ০৩:৩০, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৩ | প্রিন্ট সংস্করণ
বিএনপির চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনের সামনে গতকাল সকাল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল । ছবি: প্রথম আলো২৯ ডিসেম্বর ঢাকা অভিমুখে ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচি করতে দেবে না সরকার। তবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট বলছে, যত বাধাই আসুক, তারা কর্মসূচি পালন করবেই।
সরকার ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র জানায়, ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপি-জামায়াতকে কোনোভাবেই সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। বাইরে থেকেও কাউকে ঢাকায় আসার সুযোগ দেওয়া হবে না।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত মঙ্গলবার ঢাকা অভিমুখে অভিযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং সারা দেশের মানুষকে ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান। এ কর্মসূচি ঘোষণার পরদিনই গতকাল সকাল থেকে বিরোধীদলীয় নেতার গুলশানের বাসার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দুপুর ১২টা থেকে সেখানে যাওয়া-আসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির অবশ্য বলেছেন, ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে’ খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
দুপুরে ওই বাসায় বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক ঢুকতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। একই অবস্থা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও। সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার বাসায় ঢুকতে চাইলে আটক হন সাবেক সাংসদ সরদার সাখাওয়াত হোসেন।
গুলশানের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় স্থায়ী কমিটির সদস্য আর এ গণিকে পুলিশ আটক করলেও পরে ছেড়ে দেয়। রাতে সেখান থেকে আটক করা হয় সাংসদ শাম্মী আখতার ও ব্যবসায়ী নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিদ আউয়ালকে। রাত পৌনে ১০টার দিকে কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পর সাংবাদিক শফিক রেহমানকেও আটকের চেষ্টা করে পুলিশ।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, বিরোধী দল ৫ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের আগে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে ঢাকাকে অশান্ত করার একটা কৌশল নিতে পারে, সে রকম একটা আশঙ্কা সরকারের মধ্যে আগে থেকেই ছিল। বিএনপির চেয়ারপারসনের কর্মসূচি ঘোষণার পরপরই আওয়ামী লীগের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী দুজন নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাদা কথা বলার সময় স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ঢাকায় কাউকে সমাবেশের নামে সহিংসতা করতে দেওয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, হেফাজতে ইসলামকে সমাবেশ করার সুযোগ দিয়ে যে ভুল হয়েছিল, সে ভুল আর হবে না। সরকারের কয়েকটি প্রভাবশালী সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানদের কাছে সরকারের শীর্ষপর্যায়ের এ মনোভাব জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৫ জানুয়ারির আগের এক সপ্তাহ কীভাবে নির্বিঘ্ন রাখা যায়, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে।
যোগাযোগমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, বিরোধী দল কি এই নিশ্চয়তা দেবে যে তাদের কর্মসূচিতে সহিংসতা হবে না? সরকারের দায়িত্ব জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া।
সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু ঢাকায় নয়, দেশের কোথাও বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের সমবেত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার থেকে দেশব্যাপী নির্বাচনী সফরে বের হচ্ছেন। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী সফরসূচি চূড়ান্ত করা আছে। তা ছাড়া, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও ১৬টি ভাগে বিভক্ত হয়ে আজ থেকে নির্বাচনী সফরে বের হচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বিরোধী দলের কর্মসূচি মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি দলগতভাবে আওয়ামী লীগও মাঠে থাকবে। এ জন্য আজ ঢাকার প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড সভাপতিকে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে। রাজধানীতে নির্বাচনী আমেজ সৃষ্টির পাশাপাশি বিরোধী দলের কর্মসূচি মোকাবিলার কৌশল নিয়ে কথা হবে বৈঠকে।
যেকোনো মূল্যে কর্মসূচি সফল করতে চায় বিরোধী জোট: সরকার বাধা দেবে জেনেই রোববারের ঢাকা অভিমুখে অভিযাত্রা কর্মসূচি দিয়েছে ১৮-দলীয় জোট। তারা যেকোনো মূল্যে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ব্যাপক সমাগম ঘটাতে চায়। বাধা এলে ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রস্তুতিও তারা শুরু করেছে বলে জানিয়েছে।
এ কর্মসূচি সফল করা নিয়ে বিএনপির মধ্যে সংশয় থাকলেও দলটি সর্বশক্তি প্রয়োগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশেষ করে জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীকে সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। বিএনপির নেতারা বলেছেন, সারা দেশে আন্দোলনের যে ঢেউ সৃষ্টি হয়েছে, তা রাজধানীতে এসে আছড়ে পড়বে। এর ফলে নির্বাচন প্রতিহত ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ের আন্দোলন নতুন মাত্রা পাবে।
দলীয় সূত্র বলছে, শুধু হরতাল-অবরোধ দিয়ে নির্বাচন থেকে সরকারকে পিছু হঠানো যাবে না বলে মনে করেন খালেদা জিয়া। এ জন্য মার্চ ফর ডেমোক্রেসি বা গণতন্ত্রের অভিযাত্রা নামে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তিনি। এবার আর ঢাকায় অবস্থানের জন্য কোনো অনুমতির ধার ধারবে না বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট। কর্মসূচির কথা জানিয়ে গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশকে (ডিএমপি) চিঠি দিয়েছে বিএনপি। একটি চিঠিতে ওই দিন নয়াপল্টন এলাকায় মাইক ব্যবহারের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অপর দিকে বিএনপির চেয়ারপারসন ও অন্য নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় স্মরণকালের সেরা জমায়েত হবে বলে তাঁরা মনে করছেন। শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিলে বা আক্রমণ হলে দায় সরকারকে নিতে হবে। তিনি বলেন, দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্র না থাকলে কী কী হতে পারে, সেসব বিষয় মাথায় রেখেই তাঁরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ঢাকা অভিমুখে অভিযাত্রা কর্মসূচি সম্পর্কে অবহিত ও সহযোগিতা চেয়ে ডিএমপিকে দুটি চিঠি দিয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রসচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে এ বিষয়ে ফ্যাক্সযোগে চিঠি দেবে বলে জানিয়েছে দলটি। চিঠি পৌঁছে দিতে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল সকালে ডিএমপির কার্যালয়ে যায়।