শুক্রবার রাত ৮টা ১৮ মিনিটে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নন্দিত অভিনেতা-নির্দেশক খালেদ খান।
খালেদ খানের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের জনতার ভিড়। ছবি: সমকাল
সর্বস্তরের
মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মঞ্চ ও টিভি নাটকের শক্তিমান
অভিনেতা-নিদের্শক খালেদ খানকে শনিবার টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মতসই গ্রামে
তার বাবার কবরের পাশে সমাহিত করা হয়েছে।
এসময় খালেদ খানের পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, ভক্ত-অনুরাগী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার
দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তার প্রথম জানাযা
অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের
উদ্যোগে শোকগাঁথা শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আগামী ২৩ ডিসেম্বর মির্জাপুরের নিজ বাড়িতে তার কুলখানি হওয়ার কথা রয়েছে।
শুক্রবার
রাতে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ
করেন খালেদ খান। রাতে বারডেমের হিম ঘরে রাখা হয় খালেদ খানের মরদেহ। সেখান
থেকে শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় তাকে শেষবারের মতো নিয়ে যাওয়া হয় ধানমণ্ডির
বাসভবনে। সেখান থেকে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে তাকে নেওয়া হয় তার শেষ কর্মস্থল
ইউল্যাব ক্যাম্পাসে। সেখানকার শ্রদ্ধাজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমরান রহমান, উপ-উপাচার্য
এইচ এম জহিরুল হক, রেজিস্ট্রার লে. কর্নেল (অব.) ফয়জুল ইসলামসহ
শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীরা খালেদ খানের কফিনে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন।
এরপর
সেখান থেকে সর্বস্তরের জনগণের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের খালেদ খানের মরদেহ
নিয়ে যাওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে। খোলা হয় একটি শোক বই। খালেদ
খানের মরদেহবাহী কফিন গ্রহণ করেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, সম্মিলিত
সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, লিয়াকত
আলী লাকী, গোলাম কুদ্দুছ, হাসান আরিফ, ঝুনা চৌধুরীসহ জেষ্ঠ্য
সংস্কৃতিজনরা।
শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের শুরুতেই
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন যোগাযোগমন্ত্রী
ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক,
সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।
খালেদ
খানের মরদেহের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন ইমেরিটাস প্রফেসর
আনিসুজ্জামান, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, প্রবীণ সাংবাদিক কামাল
লোহানী, সংস্কৃতিজন রামেন্দু মজুমদার, মফিদুল হক, সৈয়দ হাসান ইমাম, লিয়াকত
আলী লাকী, আলী যাকের, আতাউর রহমান, চাষী নজরুল ইসলাম, মোরশেদুল ইসলাম,
নূহউল আলম লেলিন, ফেরদৌসী মজুমদার, মাসুম আজিজ, ফরিদুর রেজা সাগর, নাদের
চৌধুরী, তারিক আনাম খান, মুনমুন আহমেদ, আফরোজা বানু, খায়রুল আলম সবুজ,
খায়রু আনাম শাকিল, নুরুল আনোয়ার, তৌকীর আহমেদ, শঙ্কর সাঁওজাল, তিমির
নন্দীসহ আরও অনেকে। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাহাঙ্গীর
নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, ভারতীয় ডেপুটি হাই
কমিশনার সন্দীপ চৌধুরীসহ অনেকে।
শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন
করে শিল্পকলা একাডেমি, সুবচন নাট্য সংসদ, নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়, ঋষিজ,
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, ক্রান্তি, বহ্নিশিখা,
পদাতিক নাট্য সংসদ, ডেইলি স্টার, রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, চন্দ্রকলা
থিয়েটার, রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সংস্থা, উদীচী, খেলাঘর, টাঙ্গাইল জেলা
সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, দেশটিভি, চ্যানেল আই, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, ঢাকা
থিয়েটার, গ্রাম থিয়েটার, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ, নাগরিক নাট্যাঙ্গল
অনসাম্বল, থিয়েটার আর্ট ইউনিট, লোক নাট্যদল, টিভি শিল্পী সংস্থা,
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, জাতীয় কবিতা পরিষদ, আরণ্যক নাট্যদল, গ্রুপ থিয়েটার
ফেডারেশান, পথনাটক পরিষদ, ইউনিভার্সেল থিয়েটার, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি,
বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
সম্মিলিত
সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, সহ-সভাপতি গোলাম
কুদ্দুছ, সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে
শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষ হয়।
শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শেষে
দেশের সংস্কৃতি কর্মীদের পক্ষে দেওয়া বক্তব্যে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন,
"অভিনয়ের ক্ষেত্রে প্রতিটি চরিত্রকে বিশ্লেষনের অসাধারণ দক্ষতা ছিল তার।
মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশে তার ভূমিকা গুরুত্ব রেখেছে।
মির্জাপুরে সমাহিত হলেও আপন কর্মগুনে রয়ে যাবেন শিল্পের ভুবনে।"
রামেন্দু
মজুমদার বলেন, "অসুস্থতার কারণে তার অভিনয় জীবনটা দীর্ঘায়িত না হয়ে
সংক্ষিপ্ত হয়েছিল। তবে ওই স্বল্প সময়েই আপন অভিনয়শৈলী দিয়ে মুগ্ধ করেছেন
দর্শকদের।" আতাউর রহমান বলেন, "বয়সে ছোট হলেও
আমাদের সম্পর্কটা ছিল বন্ধুর মতো। তার স্বভাবসুলভ রসিকতায় বিষণ্ন মনটাও
ভালো হয়ে যেত। খালেদবিহীন পৃথিবীতে আমি যতদিন বাঁচব ততদিন স্বজন হারানোর
ব্যথা আমাকে তাড়িত করবে।" লিয়াকত আলী লাকী বলেন, "খালেদ সশরীরের বেঁচে নেই তবে, তিনি তার কর্মগুণে কারণে বেঁচে থাকবেন নাট্যকর্মী ও দর্শকদের হৃদয়ে।"
শোকসভা : আগামী ২৪ ডিসেম্বর গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন ও ২৫ ডিসেম্বর নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় খালেদ খানের স্মরণে শোকসভার আয়োজন করা হয়েছে।
ফেডারেশানের সেক্রেটারি জেনারেল ঝুনা চৌধুরী জানান, দুটি অনুষ্ঠানই শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালায় অনুষ্ঠিত হবে।
http://adf.ly/?id=353839