Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Wednesday 25 December 2013

বিপুল পরিমাণ সম্পদ রুহুল আমিনের

এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারজাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনে এখনো তিনটি মামলা চলছে। সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের সময়ে উত্থান রুহুল আমিনের। হয়েছেন সাংসদ-মন্ত্রী। এখনো তিনি নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী (পদত্যাগপত্র ডাকযোগে পাঠানো হলেও এখনো গৃহীত হয়নি)। ক্ষমতার পাশাপাশি তাঁর ধন-সম্পদও বেড়ে চলছে।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তাঁর নগদ টাকা ছিল ১৭ লাখ ৬৮ হাজারের কিছু বেশি। পাঁচ বছর পর এসে এখন তাঁর নিজের নগদ টাকাই আছে ছয় কোটি ৬৬ লাখের বেশি। গতবার যেখানে কোনো শেয়ার বা বন্ড ছিল না, সেখানে এবার স্বামী-স্ত্রীর সাড়ে আট কোটি টাকার শেয়ার, দুটি ল্যান্ডক্রুজার গাড়ি, প্লটসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পদ বেড়েছে। তবে তাঁর দায়ও আগের চেয়ে বেড়েছে।
রুহুল আমিন পটুয়াখালী-১ আসন থেকে জাতীয় পার্টির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যদিও নির্বাচন বর্জনের কথা বলছেন, তবু তাঁর জেতার সুবিধার্থে দলের নির্দেশে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। তবে ওই আসনে জাসদের একজন ও আরেকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন। ফলে সাংসদ হওয়ার জন্য তাঁকে আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে তাঁর স্ত্রী নাসরিন জাহান ইতিমধ্যে বরিশাল-৬ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেসরকারিভাবে সাংসদ হয়ে গেছেন।
রুহুল আমিন নির্বাচন কমিশনে যে হলফনামা দিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে, তাঁর বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট বা দোকানভাড়া থেকে আয় হয়েছে এক কোটি ৬২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। গতবার এই খাত থেকে আয় ছিল মাত্র ১৩ লাখ আট হাজার ৯৩৮ টাকা। সাংসদের পারিতোষিক হিসেবে তাঁর বার্ষিক আয় ১৩ লাখ ৮৯ হাজার ৬২৫ টাকা।
গত পাঁচ বছরে রুহুল আমিন ৬৭ লাখ ৯৪ হাজার ৫৩০ টাকা দামের একটি ও স্ত্রী ৫৯ লাখ ৪৪ হাজার ৫৩০ টাকা দামের আরেকটি গাড়ির মালিক হয়েছেন। দুটিই ল্যান্ডক্রুজার ব্র্যান্ডের। স্ত্রীর ১০০ ভরি স্বর্ণসহ অন্যান্য অলংকার আছে। তাঁর আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে নাইন এমএম পিস্তল, ২২ বোর রাইফেল, দোনালা বন্দুক, রিভলবার ও একটি শটগান আছে। হলফনামায় উল্লেখ আছে, তিনি ধার দিয়েছেন ১০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। স্ত্রীকেও অর্থ ধার দিয়েছেন তিনি।
রুহুল আমিনের অকৃষি জমির মধ্যে গুলশানে নিজের নামে রয়েছে ১২ দশমিক ৭ কাঠা; যার মূল্য দেখানো হয়েছে অর্জনের সময়ে নয় লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৯ টাকা। তবে বর্তমানে গুলশান এলাকায় জমির দাম গড়ে কাঠাপ্রতি প্রায় সাত কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট একজন ব্যবসায়ী। স্ত্রীর নামে এবার পূর্বাচলে সাড়ে সাত কাঠা জমি দেখিয়েছেন; যার মূল্য দেখানো হয়েছে ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। রুহুল আমিনের আবাসিক ও বাণিজ্যিক দালান আছে দুই কোটি ৩৩ লাখ ৭৬ হাজার ১৩৮ টাকার। ঢাকা ও বরিশালের বাকেরগঞ্জের এসব দালানের সংখ্যা বা কতটুকু জমির ওপর করা হয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়নি হলফনামায়। স্ত্রীর নামে গতবারের মতো এবারও ১০ লাখ টাকার দালান ও একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
গতবার স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন ও বাড়িভাড়ার অগ্রিমসহ তাঁর দায় দেখানো হয়েছিল এক কোটি ৭০ লাখ ৩৫ হাজার ২১৫ টাকা। এবার তিনি দায় দেখিয়েছেন ২৮ কোটি ৯৯ লাখ ৩২ হাজার ৭১৯ টাকা। বলা হয়েছে, এই দায় আত্মীয়স্বজন, ব্যক্তিগত বন্ধুবান্ধব, বাড়িভাড়া অগ্রিম ও ব্যাংকঋণ।
রুহুল আমিনের নামে দুর্নীতি দমন আইনে তিনটি মামলা এখনো চলছে। এর মধ্যে দুটি ঢাকার পঞ্চম অতিরিক্ত জেলা জজকোর্টে ও আরেকটি যশোর জেলা জজের আদালতে। তিনটি মামলাই বিশেষ মামলা হিসেবে উল্লেখ আছে। এর মধ্যে একটি ১৯৯৪ সালে ও দুটি ১৯৯২ সালে করা মামলা। তবে এই পাঁচ বছরে দুটি মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার চিত্রও দেখা যাচ্ছে হলফনামায়।
রুহুল আমিন এবার হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখান এমবিএ অধ্যয়নরত। গতবার তিনি সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেছিলেন বিএ (সম্মান) লোকপ্রশাসন, ঢাবি। রুহুল আমিনের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে অনেক চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি। তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
জাতীয় পার্টির (জাপা) দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, এরশাদের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা, রওশনের নেতৃত্বে দলের একাংশের নির্বাচনে সক্রিয় থাকা এবং একেক নেতার একেক রকম বক্তব্য ও নানামুখী তৎপরতায় এ নির্বাচনে জাপা নিয়ে বিভ্রান্তি বিরাজ করছে। এ ক্ষেত্রে দলের মহাসচিব রুহুল আমিন কোন পক্ষে, তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে তিনি এরশাদ, রওশন ও সরকার—তিন কূল রক্ষা করে চলার চেষ্টা করছেন বলে দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।