Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Wednesday 4 December 2013

এরশাদ চাইলেও নির্বাচন থেকে সরছেন না জাপা প্রার্থীরা

আস্থা হারিয়েছেন নেতা-কর্মীরা
ইত্তেফাক রিপোর্ট
মনোনয়নপত্র দাখিলের পর জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিলেও তা 'অনেকটাই অকার্যকর' বলে মনে করছেন খোদ দলটির মনোনয়ন দাখিলকারীরা। তাদের মতে, দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তি বিষয়ক এরশাদের স্বাক্ষরযুক্ত চিঠি সংযুক্ত করেই তারা সোমবারের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। যার কারণে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী দাখিলকারীরা নিজ উদ্যোগে প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে দলীয় চেয়ারম্যানের এই ঘোষণা কোনো কাজে আসবে না। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও ওবায়দুল কাদের যেমন গতকাল তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন 'এটাই এরশাদের শেষ কথা নয়', একইভাবে জাপার বেশিরভাগ নেতা-কর্মীও তার এই ঘোষণাও বিশ্বাস করছেন না। অনেকটা আকস্মিকভাবেই গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বনানীতে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ বলেন, আমি বলেছিলাম সব দল নির্বাচনে না গেলে আমরাও যাব না। যেহেতু সবাই আসেনি এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশও নেই, সেহেতু আমাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হলো। অবশ্য এরশাদ নিজেও সোমবার বেলা তিনটার পর ঢাকা-১৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন, একইদিন রংপুর-৩ আসনেও তার পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছে।
জানা গেছে, সকালে এরশাদের সংবাদ সম্মেলনের পর দুপুরেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলু। টেলিফোনে তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে জানতে চেয়েছেন, যদি এরশাদ নির্বাচনে না থাকেন সেক্ষেত্রে তাকে বাদ দেয়া হলে 'লাঙ্গল' প্রতীক নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিলকারীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন কিনা। জানা গেছে, জিয়াউদ্দিন বাবলু গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে উদ্ভূত বিষয় নিয়ে আলাপ করেছেন।

প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাস ধরে বলে আসা সব কথা থেকে হঠাত্ ইউটার্ন নিয়ে ১৮ নভেম্বর এরশাদ বলেছিলেন 'নির্বাচনে না গেলে সরকার পরিবর্তন হবে কীভাবে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি- নির্বাচনে যাবো। বিএনপির জন্য তো আমরা বসে থাকতে পারি না। নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তাছাড়া নির্বাচনে না গেলে জনগণ আমাদের থুতু মারবে। গণতন্ত্র বিপন্ন হবে।'
মাত্র ১৫ দিনের মাথায় এরশাদের ফের বিপরীত সুর সম্পর্কে বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্য ও জাপার প্রেসিডিয়ামের দু'জন সদস্য গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, তারা নিজেরাও তার কথাবার্তা নিয়ে বিপাকে রয়েছেন, তিনি যে কখন কি বলেন তার কোনো ঠিক নেই। এই দুই সদস্য জানান, কার্যত নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি ও কিছু বৈষয়িক বিষয়াদি নিয়ে এখনও বনিবনা না হওয়ায় এরশাদ গতকাল এ ঘোষণা দেন। দু'একদিনের মধ্যে তিনি ফের ভিন্ন কথা বলতে পারেন বলে মনে করছেন জাপার এই দুই নেতা।
জাপার একাধিক নেতা গতকাল ইত্তেফাককে জানান, যেহেতু এরশাদ সকল প্রার্থীকে দলীয় প্যাডে নিজে স্বাক্ষর করে দলের মনোনয়ন প্রদান সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছেন এবং তারা সেটি মনোনয়নপত্রের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করেছেন, সে কারণে এখন এরশাদ চাইলেও বেশিরভাগ নেতা-কর্মী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন না। তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এছাড়া এরশাদ বলেছেন, 'দল নির্বাচনে না গেলে সরকারে থাকা দলের উপদেষ্টা-মন্ত্রীরাও বের হয়ে আসবেন'। সূত্র মতে, এক্ষেত্রেও এরশাদের নির্দেশ 'অকার্যকর' হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। দু'একজন ছাড়া অন্যরা কেউ উপদেষ্টার পদ কিংবা মন্ত্রিত্ব ছাড়তে রাজি নন।
এর ফলে আবার ভাঙ্গনের দিকে গড়াতে পারে এরশাদের দল। ইতিমধ্যে কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বে দল ফের ভেঙ্গেছে। কাজী জাফর দল থেকে এরশাদকে বহিষ্কার করেছেন। আগামী ১৮ ডিসেম্বর তারা দলের কাউন্সিল ডেকেছেন। সেখানে নতুন জাতীয় পার্টির কমিটি ঘোষণা করার কথা রয়েছে।