Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Thursday 12 December 2013

চট্টগ্রামের মন্ত্রী-এমপিদের স্ত্রীরাই বেশি ধনী

নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে মহাজোট সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদ সম্পর্কে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ সব তথ্য। এমপি লতিফের চেয়ে তিন গুণ বেশি সম্পদশালী তার স্ত্রী। গত নির্বাচনের আগে কোনো আয় না থাকা শামসুলের স্ত্রী এখন লাখপতি। পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদের চেয়ে ১০ গুণ বেশি ধনী তার স্ত্রী। বাবা আখতারুজ্জামান বাবুর চেয়ে বেশি সম্পদশালী আনোয়ারার সাংসদ সাইফুজ্জামান চৌধুরী। মিরসরাইয়ের সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের নগদ টাকা এবারে কমলেও বেড়েছে তার স্ত্রীর। কোতোয়ালির সাংসদ নুরুল ইসলাম বিএসসির গত পাঁচ বছরে সম্পদ বেড়েছে প্রায় সাত কোটি টাকা। গত নির্বাচনের তুলনায় সাবেক মন্ত্রী আফছারুল আমীন ও তার স্ত্রীর ব্যাংক ব্যালান্স বেড়েছে কয়েক গুণ। পাঁচ বছরে রাউজানের সাংসদ ফজলে করিমের আয় বেড়েছে ১৬ গুণ। জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের স্ত্রীর সম্পদ তিন কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ১৭ কোটি। ভাগ্য বদলেছে
মহাজোটের শরিকে থাকা জাসদের সাংসদ মইনউদ্দীন খান বাদল ও তার স্ত্রীরও!
নিঃস্ব থেকে লাখপতি শামসুলের স্ত্রী :নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় শামসুল হক চৌধুরীর স্ত্রী ছিলেন নিঃস্ব। পাঁচ বছরের ব্যবধানেই লাখপতি হয়ে গেছেন তিনি। ক্ষেত্রবিশেষে এমপির চেয়েও আয় বেড়ে গেছে তার। স্ত্রীর আয়ের পাশাপাশি এমপি শামসুলের আয়ও প্রতিটি খাতেই দ্বিগুণ থেকে ১২ গুণ পর্যন্ত।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী শামসুলের স্ত্রীর সাত লাখ ৫২ হাজার ৩২৬ টাকা নগদ, ১৩ লাখ ৪৩ হাজার ৬২১ টাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা, দেড় লাখ টাকা মূল্যমানের স্বর্ণ ও অন্যান্য অলঙ্কার এবং ২৭ লাখ ৭০ হাজার ২৫০ টাকার অকৃষি জমির অধিকারী হয়েছেন। অথচ পাঁচ বছর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় এসব খাতে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল শূন্য। হলফনামায় তার স্ত্রীর আয়ের ঘরে উল্লেখ ছিল 'প্রযোজ্য নয়'।
বাবার চেয়ে সম্পদশালী সাইফুজ্জামান :নবম সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৩ (সাবেক চট্টগ্রাম-১২) আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। সে সময় দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী তার আয়ের পরিমাণ ছিল পাঁচ লাখ ৪৭ হাজার ৭৬৭ টাকা। এবার সে আসনে নির্বাচন করছেন আখতারুজ্জামান চৌধুরীর ছেলে বর্তমান সাংসদ (আখতারুজ্জামানের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে জয়ী) সাইফুজ্জামান চৌধুরী। হলফনামা অনুযায়ী তার বার্ষিক আয় এক কোটি ৪৬ লাখ ৬৬ হাজার ৮৮১ টাকা। আখতারুজ্জামান চৌধুরীর স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৫৮ লাখ ১০ হাজার ২২৮ টাকা। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৬৮ লাখ ৬৪ হাজার ৪৮১ টাকা।
মন্ত্রীর চেয়ে সম্পদশালী হয়েছেন স্ত্রী :নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের স্ত্রীর অলঙ্কার নেই দেখানো হয়েছিল। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় স্ত্রীর স্বর্ণালঙ্কার হিসেবে দেখানো হয়েছে ৫০ তোলা স্বর্ণ। আবার এখানে উল্লেখ করা হয়েছে, এই ৫০ তোলা স্বর্ণ বিবাহের সময় উপহার হিসেবে প্রাপ্ত, যার মূল্য তিনি জানেন না। গতবারের হলফনামায় স্ত্রীর নামে কোনো গাড়ি না থাকলেও বর্তমানে স্ত্রীর নামে রয়েছে একটি প্রাইভেট কার ও একটি মাইক্রোবাস, যার আর্থিক মূল্য ২০ লাখ ৭০ হাজার টাকা। গতবারে স্ত্রীর নামে কোনো ব্যবসা এবং সঞ্চয়পত্র না থাকলেও এবারে তা হয়েছে ১৯ কোটি ৪২ লাখ পাঁচ হাজার ৮৪৫ টাকা। একইভাবে গতবারে স্ত্রীর নামে কোনো স্থাবর সম্পত্তি না থাকলেও এখন স্ত্রীর নামে দেখানো হয়েছে ৩৯ কোটি ৬৬ লাখ তিন হাজার ৮৭০ টাকা মূল্যের সম্পত্তি। গতবারে মন্ত্রীর স্ত্রীর নামে কোনো শেয়ার না থাকলেও এবার দেখানো হয়েছে ১৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকার শেয়ার।
ভাগ্য খুলেছে বাদল ও তার স্ত্রীর :পাঁচ বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রাম-৮ (সাবেক ৭) আসনে জাসদের এমপি মইনউদ্দীন খান বাদল ও তার স্ত্রী উভয়েরই আয় বেড়েছে কয়েক গুণ। নবম সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী বাদলের বার্ষিক আয় ছিল দুই লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এবারে দাখিলকৃত হলফনামা অনুযায়ী তার বার্ষিক আয় পাঁচ লাখ ৮৮ হাজার ২১২ টাকা। আগের নির্বাচনের সময় কোনো আয় না থাকলেও এবার তার স্ত্রীর বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ২৬০ টাকা।
নগদ টাকা কমেছে মোশাররফের, বেড়েছে স্ত্রীর :চট্টগ্রাম-১ আসনের বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের নগদ টাকার পরিমাণ কমলেও বেড়েছে স্ত্রীর। এ সময়ে তার স্ত্রীর নগদ বেড়েছে ছয় কোটি টাকার বেশি। সে সঙ্গে বেড়েছে জমির পরিমাণও। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তার নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ২২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৫০, যা পাঁচ বছরে কমে দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ৩২ হাজার ৭৪০ টাকায়। অন্যদিকে স্ত্রীর নগদ টাকার পরিমাণ ছিল এক লাখ ২১ হাজার ৫৩২, যা পাঁচ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় কোটি এক লাখ ৯৯ হাজার ৮১২ টাকা। গতবারের হলফনামায় কৃষিজমির পরিমাণ ও অর্জনকালীন সময়ে আর্থিক মূল্য হিসেবে নিজের নামে ছিল পাঁচ হাজার টাকা। এবারের হলফনামায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
৫ বছরে ফজলে করিমের আয় বেড়েছে ১৬ গুণ, সম্পদ ১৯ গুণ! :নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৫ আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। সে সময় হলফনামায় তার উল্লেখিত সম্পদের পরিমাণ ছিল ২১ লাখ ১৯ হাজার ৬৯৬ টাকা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে তার আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন কোটি ৪৩ লাখ ৩৫ হাজার ৮৫৯ টাকা। একই সময়ের ব্যবধানে বেড়েছে তার স্থাবর সম্পদের পরিমাণও। পাঁচ বছর আগে দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী তার স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ২৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯৭৫ টাকা। এবারের হলফনামা অনুযায়ী তার সেই সম্পদের পরিমাণ ১৯ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ কোটি ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬৩৫ টাকা।
৫ বছরে সাত কোটি টাকার সম্পদ বেড়েছে বিএসসি পরিবারের :এমপি হওয়ার পাঁচ বছরের ব্যবধানে সম্পদ বেড়েছে চট্টগ্রাম-৯ (সাবেক ৮) আসনে নুরুল ইসলাম বিএসসির পরিবারের। আগের নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল্য ছিল ২৩ কোটি ৯৭ লাখ ২৩ হাজার ২০৯ টাকা। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ কোটি ৪৯ লাখ ২৮ হাজার ৮৭৩ টাকা। তার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে তার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণও। নবম সংসদ নির্বাচনের সময় তার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ ছিল ২১ কোটি ৬৪ লাখ ৭ হাজার ৭৩ টাকা। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ কোটি ৬ লাখ ৯০ হাজার ৭৮৯ টাকায়।
নগদ অর্থ ও ব্যাংক ব্যালান্স সমানে বেড়েছে সাবেক মন্ত্রী আফছারুল ও তার স্ত্রীর :চট্টগ্রাম-১০ (সাবেক ৯) আসনের সাবেক মন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন ও তার স্ত্রীর নগদ ও ব্যাংকের টাকা বেড়েছে সমানতালে। গতবারের হলফনামায় নগদ ও ব্যাংকে আফছারুল ও তার স্ত্রীর টাকা ছিল যথাক্রমে ১৮ হাজার এক টাকা ও তিন লাখ ৯৬ হাজার ২৪৫ টাকা। এবারের হলফনামায় তাদের নগদ ও ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ দেখানো হয়েছে যথাক্রমে ৬২ লাখ ৭২ হাজার ৫৪৪ টাকা ও ৭ লাখ ১২ হাজার ২৫৭ টাকা।
এমপি লতিফের চেয়ে তিন গুণ সম্পদশালী তার স্ত্রী :চট্টগ্রাম-১১ (সাবেক ১০) আসনের এমপি আবদুল লতিফের চেয়ে তিন গুণ সম্পদশালী তার স্ত্রী। হলফনামা অনুযায়ী এমপি লতিফের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দুই কোটি ৪৭ লাখ ৬৫ হাজার ৫৩৯ টাকা। তার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ ছয় কোটি ৭২ লাখ ৫২ হাজার ২৮৯ টাকা। একই সঙ্গে পাঁচ বছরের ব্যবধানে এমপি লতিফের বার্ষিক আয়ও কোটি ছাড়িয়েছে। ২০০৮ সালে তার বার্ষিক আয় উল্লেখ করেছিলেন ছয় লাখ ১৮ হাজার ১৭৮ টাকা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে সেই বার্ষিক আয় এখন এক কোটি আট লাখ ২৮ হাজার ৪২৪ টাকা! গত নির্বাচনে তার স্থাবর সম্পদের ঘর খালি থাকলেও এবার সেখানে দেখানো হয়েছে ৯১ লাখ ৬৭ হাজার ৮২৪ টাকা।
নোমান আবদুল্লাহ/সিমু দে, চট্টগ্রাম ব্যুরো@ Samakal