Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Wednesday 4 December 2013

এটাই কি এরশাদের শেষ কথা

সমকাল প্রতিবেদক
'এরশাদ সকালে এক কথা বলেন, বিকেলে আরেক কথা'_ এ উক্তিটি কট্টর সমালোচক কিংবা আমজনতার নয়। খোদ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের। গতকাল মঙ্গলবার সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ নিজেই সাংবাদিকদের বলেছেন, 'আমি সকালে এক কথা বলি, বিকেলে আরেক কথা_ এ জাতীয় বিদ্রূপ করে কিছু লিখবেন না।' তার অনুরোধ রক্ষা করে কোনো বিদ্রূপ নয়, তার বক্তব্যের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ থেকে এটা এখন নিখাদ সত্য, এরশাদের কোনো কথাই শেষ কথা নয়। এক প্রহরের বক্তব্য পরের প্রহরে বদলে যাবে না, তার নিশ্চয়তা দেওয়া এরশাদের পক্ষেও যেন সম্ভব নয়।
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে শুধু নির্বাচন থেকে সরে আসার ঘোষণা নয়, ব্যক্তিগত অনেক দুঃখ-ক্ষোভের কথাও বলেছেন এরশাদ। তিনি বলেন, ক্ষমতা ছাড়ার ১৪ বছর পর তার বিরুদ্ধে জেনারেল মঞ্জুর হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে, সে মামলা চলছে ১৮ বছর ধরে। এ মামলা ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্বিত করা হচ্ছে তাকে ঝুলিয়ে রাখার জন্য। এ মামলার প্রসঙ্গ তুলে তিনি নিজেকে 'শৃঙ্খলিত রাজনীতিবিদ' উল্লেখ করে অনেকটা করুণ সুরেই বলেন, 'আমি
শৃঙ্খলিত রাজনীতিবিদ। শৃঙ্খলমুক্ত হয়ে বাঁচতে চাই।' দলে তার প্রয়োজনীয়তা এবং একক নেতৃত্বের কথাও অকপটে স্বীকার করে তিনি বলেন, 'আমি না থাকলে দল চলে না। এটা আমাদের দুর্বলতা যে, জাতীয় পার্টির বিকল্প চেয়ারম্যান তৈরি করা হয়নি। আমি জেলে গেলে দল থাকবে না, এ সবকিছু আমাকে ভাবতে হয়।' তিনি জোর দিয়ে আরেকটা কথা বলেছেন, দল ও দেশের প্রয়োজনে প্রতিমুহূর্তে অবস্থান বদলাতে হলেও তিনি তা বদলাবেন। সব দল নির্বাচনে অংশ নিলে, পরিবেশ তৈরি হলে তার দলও নির্বাচনে অংশ নেবে। তিনি দাবি করেন, সব দল নির্বাচনে না গেলে নির্বাচনে না যাওয়ার প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্যই তিনি দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরও সিদ্ধান্ত বদল করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে সব দল নির্বাচনে না আসা এবং চলমান বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতি চোখের সামনে রেখে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেন কেন এরশাদ? তাহলে কি তার অবস্থান বদলের নেপথ্যে নির্বাচনের পরিবেশ কিংবা সব দলের অংশগ্রহণ মুখ্য বিষয় নয়, আরও অন্য কিছু আছে?
শুধু এক মুহূর্ত, একদিন, এক সপ্তাহ কিংবা এক মাস নয়, এরশাদ সব সময়ই কথার রদবদল করেন। গত তিন মাসে এরশাদের বিভিন্ন বক্তব্য পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট হয়ে যায়। চলতি বছরের ২৫ আগস্ট এরশাদ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেছিলেন, তিনি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না। চলমান নির্বাচনী নাটকের ক্লাইমেক্স জমে ওঠার প্রথমের অঙ্কে ২১ অক্টোবর গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদারের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে জাতীয় পার্টি মহাজোটে থাকবে, বিএনপি না এলে জাতীয় পার্টি এককভাবে অংশ নেবে। এর পরের দিন ২২ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে এরশাদ বলেন, সৈয়দ আশরাফ অসত্য বলেছেন। শেষ বয়সে তিনি কোলেবোরেটর হতে চান না; বিএনপি না গেলে জাতীয় পার্টিও নির্বাচনে যাবে না। এর পর ১১ নভেম্বর তিনি বললেন, সব দল নির্বাচনে অংশ না নিলে সেখানে জাতীয় পার্টি থাকলে জনগণ থুতু দেবে। এর চেয়ে জেলে মরাই ভালো। ১৬ নভেম্বর তিনি আরও বলেন, সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া মহাজোটে থেকে নির্বাচনে অংশ নিলে সবাই বেঈমান বলবে।
তার এ বক্তব্য অবশ্য বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৭ নভেম্বর এরশাদ ঘোষণা দিলেন, জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে এবং সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেবে। তখন তিনি বলেন, দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচন প্রয়োজন। নির্বাচনে না গেলে জনগণ তো থুতু দেবে। এরপর জাতীয় পার্টি নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারে যোগ দিল। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রার্থী মনোনয়ন, মনোনয়নপত্র জমাদান সবকিছুই হলো। তার পর হঠাৎ করে আবারও সুর বদলালেন এরশাদ। অতএব, নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সর্বশেষ ঘোষণাই এরশাদের শেষ কথা নাও হতে পারে।