Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Sunday 3 November 2013

তফসিল ঘোষণার পরই সর্বদলীয় সরকার


তফসিল ঘোষণার পরই
 সর্বদলীয় সরকার
 
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তুতি রয়েছে সরকারের। ওই দিন প্রথমে বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগ করবেন। এরপর গঠন করা হবে সর্বদলীয় সরকার। সর্বদলীয় সরকারের সদস্য সংখ্যা হতে পারে ২০-২৫ জন।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের (ইনু) নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এ সরকারের সদস্য হবেন। তবে বিএনপি নির্বাচনে এলে সর্বদলীয় সরকারের কাঠামো বাড়বে। সর্বদলীয় সরকারে নতুন মুখের প্রাধান্য থাকবে।
তবে বিএনপির চিন্তা বাদ দিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। সরকারি দলের নেতাদের ভাষায়, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে মরিয়া বিএনপি হত্যা-সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশজুড়ে অস্থিরতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। তারা নির্বাচনে আসবে না। বর্তমানে নির্বাচনের তফসিল এবং নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এ দুটি বিষয়ে নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত কোনো ঘোষণা দেয়নি। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, নভেম্বর মাসের শেষের দিকে নির্বাচনের তফসিল এবং জানুয়ারির শুরুর দিকে নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে।
নির্বাচনকে ঘিরে বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংবিধানের ভেতরে থেকেই সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া অবশ্য এ প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হননি। তিনি ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ১০ উপদেষ্টাকে নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন।
বিরোধীদলীয় নেতার এ প্রস্তাব কার্যকর করতে হলে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে। কিন্তু সরকারি দল তা চায় না। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিফোন করেছিলেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে। দুই নেত্রীর ফোনালাপ অবশ্য খুব
একটা সুখকর হয়নি। প্রধানমন্ত্রীকে ফিরিয়ে দিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা।
এ অবস্থায় বহুল প্রত্যাশিত সংলাপ প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে আছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডবি্লউ মজীনা স্বদেশে যাওয়ার আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন। তারপরও সংলাপের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচনের দিনক্ষণও এগিয়ে আসছে। আবার বিএনপি নির্বাচনে আসবে না বলেও মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতারা। এ কারণেই প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করছেন। ইতিমধ্যে তিনি পর্যায়ক্রমে জাতীয় পার্টি, ১৪ দল, সিপিবি, বাসদ এবং জাতীয় পার্টি-জেপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
এ আলোচনার ভিত্তি ধরে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের কাঠামো তৈরি করছে আওয়ামী লীগ। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বদলীয় সরকার কাঠামোতে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানাবেন বলে মনে করছেন জাসদ (ইনু) সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
সর্বদলীয় সরকারের কাঠামো নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কেউ কোনো মন্তব্য করতে চাইছেন না। সবাই বলছেন, এটি নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর। তবে এ সংখ্যা ২০ থেকে ২৫ জনের মধ্যে সীমিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আওয়ামী লীগ ছাড়াও ওয়ার্কার্স পার্টি এবং জাসদের (ইনু) নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এ সরকারের সদস্য থাকবেন।
জাতীয় পার্টি সর্বদলীয় সরকারে আসবে কি-না, সেটা এখনও শতভাগ নিশ্চিত নয়। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সর্বদলীয় সরকারে আসবে জাতীয় পার্টি। এ নিয়ে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ চলছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের আরেক দফা বৈঠকের সম্ভাবনাও রয়েছে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার সমকালকে বলেছেন, আগামী ৫ নভেম্বর সিঙ্গাপুর থেকে পার্টি চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ ফিরে আসার পর সর্বদলীয় সরকারে সম্পৃক্ততার বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনে যাবে জাতীয় পার্টি। একই অভিমত দিয়েছেন পার্টি প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
জাতীয় পার্টির একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য সমকালকে বলেছেন, সর্বদলীয় সরকারে সম্পৃক্ততা নিয়ে পার্টির ভেতরে ভিন্নমত রয়েছে। পার্টির একটি বড় অংশ সর্বদলীয় সরকারে যাওয়ার পক্ষে থাকলেও বিপক্ষে রয়েছেন কেউ কেউ। সেই ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলে নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি হবে। তখন সর্বদলীয় সরকারে যাবে জাতীয় পার্টি।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব সমর্থন করে জাসদ। একই বক্তব্য ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের। হাসানুল হক ইনু জানিয়েছেন, প্রস্তাব পেলে সর্বদলীয় সরকারে যাবে জাসদ। রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ওয়ার্কার্স পার্টি নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারে যাবে।
সর্বদলীয় সরকার গঠনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। তার মতে, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে মরিয়া বিএনপি হত্যা-সন্ত্রাসের মাধ্যমে অস্থিরতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। তারা নির্বাচনে আসবে না। তাই বিএনপির চিন্তা বাদ দিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সর্বদলীয় সরকার গঠন করা হবে। সেই ক্ষেত্রে আগামী ২৫ থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। আর কেবল নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই সর্বদলীয় সরকারের সদস্য হবেন।
দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, তফসিল ঘোষণার পরপরই মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করবে। এরপর সর্বদলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিই হবেন ওই সরকারের প্রধান। এ সরকারে নতুন মুখের প্রাধান্য থাকবে। 
-Samakal