Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Saturday 23 November 2013

কঠিন চ্যালেঞ্জে চার মন্ত্রী ও চিফ হুইপ

সিলেটে ৫ হেভিওয়েট প্রার্থীর আসনে নতুন মুখের ভিড়। এ অবস্থায় আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী চার মন্ত্রী ও হুইপ পড়েছেন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। বিগত নির্বাচনে তাদের আসনে কেউ নির্বাচন করার চিন্তা না করলেও এবার ব্যতিক্রম। এবারের নির্বাচনে প্রভাবশালী মন্ত্রী ও হুইপের আসন থেকে উঠে এসেছে নতুনদের নাম। নতুন এসব প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করে কৌশলে প্রচারও শুরু করেছেন। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও নতুন এসব প্রার্থী নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দেখা দিতে পারেন। গত ১৫ জুন অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনের মতো তারাই হতে পারেন দলের জন্য বিষফোঁড়া। ফলে আগামী নির্বাচনে হেভিওয়েট নেতারা প্রার্থী হলেও মনোয়নপ্রত্যাশী অনেকেই তাদের বিরুদ্ধে পরোক্ষভাবে অবস্থান নিতে পারেন। গত সিটি নির্বাচনের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে ৫ ভিআইপির আসন উদ্ধার করা কঠিন হতে পারে বলেও মনে করছেন দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এ অবস্থায় হেভিওয়েট এসব প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও দলীয় কোন্দল নিরসনের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় অনেকটা ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতাকর্মীরা। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে ঘরের কোন্দল নিরসনেরও আহ্বান জানিয়েছেন তারা। তাদের মতে, বিগত নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থীরা যে সফলতা দেখিয়ে ছিলেন তাদের কোন্দলের প্রভাব আগামী নির্বাচনে পড়তে পারে সিলেটের ১৯টি আসনেই।
সিলেট-১ আসনে যে দল নির্বাচিত হয় তারাই সরকার গঠন করে_ এমন মিথ চালু রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। বিগত নির্বাচনে যারাই বিজয়ী হয়েছেন তাদের প্রত্যেকেই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হয়েছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রয়াত সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানকে পরাজিত করে জয়ী হয়ে অর্থমন্ত্রী হন আবুল মাল আবদুল মুহিত। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পাশাপাশি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের একটি বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। গত নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীদের অসহযোগিতার কারণে ৭৩ হাজার ভোট পেলেও হারতে হয়েছে বিএনপি দলীয় প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে। তার এ পরাজয়ের জন্য কামরান সমর্থকরা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে দায়ী করেন। ওই নির্বাচনের পর থেকে তাদের মধ্যে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এমনকি কেউ কাউকে বিশ্বাসও করতে পারছেন না। ভেতরের কোন্দল চাপা রেখে তারা বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিলেও তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কে চিড় ধরেছে। কে পাচ্ছেন দলীয় মনোয়ন এখন থেকেই নেতাকর্মীদের মধ্যে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা।
এ ব্যাপারে সিলেট নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান সমকালকে বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের চাপের মুখে আমাকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিতে হয়েছে। এখন দল চাইলে নির্বাচন করতে আগ্রহী। মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় এক নেতার ওপর কোনো ক্ষোভ নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাব তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সমকালকে বলেন, কারও বিরুদ্ধে নয়, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। তাকে দল মনোনয়ন দেবে বলেও তিনি আশাবাদী।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য অর্ধডজন নেতা এবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও মনোনয়নপ্রত্যাশী এসব প্রার্থী আগামী নির্বাচনে তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে। এ আসন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারীরা হলেন_ বিয়ানীবাজার উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাসেম পল্লব, কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন, গোলাপগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আফসার খান সাদেক, আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেন, যুক্তরাজ্য যুবলীগ নেতা শামসুল ইসলাম বাচ্চু।
এ ব্যাপারে আবুল কাসেম পল্লব সমকালকে বলেন, শুধু আমি নই, নির্বাচনী এলাকার অনেকেই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে আগ্রহী। মূলধারার রাজনীতিবিদরা তার কাছে অবহেলিত। এ কারণে আমার মতো আরও অনেকেই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
এবারও সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। গত নির্বাচনে তার আসন থেকে কেউ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ না করলেও এবার প্রার্থী হয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা শামসুল হক চৌধুরী।
মৌলভীবাজার-৪ (কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল) আসনে বেকায়দায় আছেন ৪ বারের সংসদ সদস্য চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ। এ আসনে চার প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন তিনি। গত ১৩ নভেম্বর উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রণধীর দেবও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। রণধীর দেব মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকখ্যাত চা শ্রমিকদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে।
নির্বাচনী আসনে অনেকেই উল্লসিত। এছাড়া শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রহিম ও অ্যাডভোকেট এএসএম আজাদুর রহমান মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামূল হক মোস্তফা শহীদের হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনেও উঠে এসেছে বেশ কয়েকজন নতুন প্রার্থীর নাম। তাদের প্রত্যেকেই এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র জমাদানকারীরা হলেন_ সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামূল হক মোস্তফা শহীদ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী, হবিগঞ্জের সাবেক মেয়র শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, চুনারুঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল কাদির লস্কর, উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, মাধবপুরের সাবেক মেয়র শাহ মোহাম্মদ মুসলিম, অ্যাডভোকেট আকবর হোসেন জিতু, ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, আরিফুল হক রাজীব। তাদের মধ্যে অনেকেই এলাকায় মন্ত্রীবিরোধী হিসেবে পরিচিত। দলীয় কোন্দলে এ আসনটি হাতছাড়া হতে পারে এমন ধারণা তৃণমূল নেতাদের।
ফয়সল আহমদ বাবলু, সিলেট ব্যুরো@Samakal