Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Saturday 23 November 2013

আ'লীগের মনোনয়ন দৌড়ে ইউপি চেয়ারম্যানরা! নড়াইল-১ আসন


দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শেষ হয়েছে। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের ৩৪ নেতাকর্মী নড়াইল-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এর মধ্যে ১৫ জনই ইউপি চেয়ারম্যান। একযোগে এত বিপুলসংখ্যক ইউপি চেয়ারম্যান দলীয় মনোনয়ন ফরম কেনার কারণে এলাকার রাজনৈতিক মহলে আলোচনার ঝড় বইছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এক নেতাকে মনোনয়ন পেতে সহযোগিতা করার জন্য তৃণমূল পর্য়ায়ের নেতরাও মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের মাঝেও নির্বাচনী আমেজ দেখা গেছে। তারাও সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। এদিকে দুই জোটের সাধারণ নেতাকর্মীরা মনে করছেন, দু'দলেরই মনোনয়নে পরিবর্তন হতে পারে আসনটি কব্জা করতে। দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগের দুর্গের পতন ঘটাতে এবার বিএনপির মনোনয়নে পরিবর্তন আসতে পারে। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা এ আসনে প্রার্থী হলে অবশ্য ১৮ দলীয় জোটের সব আশাই ভেস্তে যাবে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করে। কালিয়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভাসহ নড়াইল সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নড়াইল-১ আসনটিতে এবারে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ২ লাখ ৯ হাজার ২৫০ জন ভোটার।
নড়াইল-১ আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এ আসন থেকে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। পরে আসনটি তিনি ছেড়ে দিলে এবং আওয়ামী লীগ উপনির্বাচন থেকে প্রার্থী প্রত্যাহার করলে সদ্য বিএনপিতে যোগদানকারী সাবেক আওয়ামী লীগ এমপি ধীরেন্দ্রনাথ সাহা এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে কলস প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হন কবিরুল হক মুক্তি। আওয়ামী লীগের একটি অংশ, বিএনপির ক্ষুব্ধ ও বঞ্চিতরা মিলে এবং সাধারণ ভোটারদের আঞ্চলিকতার টানের কাছে প্রধান দু'দলের প্রার্থী মহাজোটের বিমল বিশ্বাস ও চারদলীয় জোটের বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম পরাজিত হন। জয়লাভ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কবিরুল হক মুক্তি। ওই নির্বাচনে কবিরুল হক ৬৩ হাজার ৮২৬ ভোট, বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম ৫০ হাজার ৭৭৭ ভোট এবং বিমল বিশ্বাস ৪৩ হাজার ২৯৫ ভোট পেয়েছিলেন। কবিরুল হক নির্বাচিত হওয়ার পর ক্ষমতাসীন জোটে যোগ দিলেও নৌকা-কলস দ্বন্দ্বের অবসান হয়নি গত পাঁচ বছরেও। নৌকার সমর্থক নেতাকর্মীরা গত পাঁচ বছরে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে যাওয়াসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হওয়ায় তাদের মধ্যে জন্ম নিয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। যে কারণে আওয়ামী লীগে বিরাজ করছে অসন্তোষ ও দ্বিধাবিভক্তি। আর বিএনপি সুযোগটি কাজে লাগাতে সুসংগঠিত হয়ে মাঠে নেমে পড়েছে।
আওয়ামী লীগের দুর্গ দখলের সুযোগ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির হাতছাড়া হওয়ার কারণে স্থানীয়ভাবে তারাও প্রার্থীর মনোনয়নের ক্ষেত্রে নানা হিসাব-নিকাশ কষতে শুরু করেছেন। কালিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোল্যা ইমদাদুল হক, নড়াগাতি থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খাজা নাজিম উদ্দিন ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. শাহীদুল ইসলাম শাহীসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেছেন, গত পাঁচ বছরে নৌকার সমর্থক ও ভোটাররা নির্যাতনের শিকার হওয়ার পাশাপাশি অবমূল্যায়িত হয়েছে। যে কারণে তাদের মধ্যে জন্ম নিয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট থেকে যারা মনোনয়ন ফরম কিনেছেন তারা হলেন_ দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা, বর্তমান এমপি কবিরুল হক, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি অ্যাডভোকেট ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পি, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এনায়েত কবীর চঞ্চল, নড়াইল জেলা কৃষক লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ এসএম আবু সাঈদ, শ্যামল দাশ টিটো ও দানবীর হিসেবে পরিচিত লে. (অব.) কমান্ডার ওমর আলী, নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ছিদ্দিক আহম্মেদ, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ-সম্পাদক কাজী সরওয়ার হোসেন, কালিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোল্যা ইমদাদুল হক, নড়াগাতি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজি মফিজুল হক, কর্নেল (অব.) সাজ্জাদ হোসেন, কালিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান খান শামীম রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা, জহুরুল হক জঙ্গু, অশোক কুমার ঘোষ, এফএম শাহীন, অসীত বরণ সাহা, কালিয়া পৌরসভার চেয়ারম্যান বিএম ইমদাদুল হক। এ ছাড়া ইউপি চেয়ারম্যানদের মধ্যে রয়েছেন_ লিয়াকত হোসেন, ইমারুল গাজী, আশিষ বিশ্বাস, আবিদুল ইসলাম, লুৎফার রহমান, হারুনার রশীদ, আনিসুল ইসলাম বাবু, গোলাম মহাম্মাদ, নাজমুল হক প্রিন্স, মনিরুল ইসলাম, ফিরোজ খান, ফরিদ শিকদার, কাজী আইয়ুব হোসেন, লাবু শিকদার, শাহ মো. ফোরকান মোল্যা, মাহামুদুল হাসান কায়েস, পহরডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান মো. রাবু শিকদার, পেড়লী ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম বাবু ও বাঐশোনা ইউপি চেয়ারমম্যান শাহ মো. ফোরকান মোল্যা। অন্যদিকে ১৮ দলীয় জোট থেকে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও খুলনা মহানগর বিএনপির সহসভাপতি হাজি মুন্সী সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, সাবেক সাংসদ ডা. মনিরুল ইসলাম টিপুরও এলাকায় বেশ পরিচিতি রয়েছে। তিনিও নির্বাচনী লড়াইয়ের জন্য বেশ শক্তিশালী প্রার্থী বলে দলীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন। নড়াইল জেলা ও কালিয়া থানা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার পরও তার পরাজয়ের কারণে নেতাকর্মীদের কাছে তিনি যেমন বিরাগভাজন হয়েছেন, তেমন ইমেজ সংকটেও পড়েছেন বলে পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। এ ছাড়া ডা. হায়দার পারভেজ ও শেখ নওয়াবুল আলম মনোনয়ন চাইতে পারেন।
মশিউল হক মিটু,কালিয়া (নড়াইল)@ samakal