Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Monday 25 November 2013

আশুগঞ্জে দেড়শ' কোটি টাকার শুঁটকি রফতানি

প্রতি বছরের মতো এবারও শুরু হয়েছে দেশি প্রজাতির মাছ শুকিয়ে শুঁটকি উৎপাদন।
আনোয়ার হোসেন, আশুগঞ্জ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
আশুগঞ্জে দেড়শ' কোটি টাকার শুঁটকি রফতানিআশুগঞ্জের লালপুরে প্রতি বছরের মতো এবারও শুরু হয়েছে দেশি প্রজাতির মাছ শুকিয়ে শুঁটকি উৎপাদন। প্রতি বছর এখান থেকে বিদেশে রফতানি হয় দেড়শ' কোটি টাকার শুঁটকি। এ বছর তা আরও বৃদ্ধির আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
শুঁটকি উৎপাদনের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রায় ৬ হাজার লোক জড়িত থাকলেও পুঁজিস্বল্পতার কারণে ন্যায্য মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এখানকার উৎপাদনকারীরা।
বেশ কয়েক বছর ধরে কার্তিক থেকে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত আশুগঞ্জের লালপুরে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে দেশি প্রজাতির বিভিন্ন মাছ শুকিয়ে সিদল (চ্যাপা) ও শুঁটকি উৎপাদন করা হচ্ছে। শুঁটকি উৎপাদনের ক্ষেত্রে মাছ সংগ্রহ, পরিবহন, কাটা, শুকানো, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও বিপণন কাজে এখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৬ হাজার লোক জড়িত।
সরেজমিন দেখা গেছে, মেঘনা নদীতীরবর্তী প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার উন্মুক্ত এলাকায় বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বিশেষ ধরনের চাটাই বা বানা ও খুঁটি দিয়ে ৬-৭ ফুট উঁচু করে তৈরি করা হয় দুই শতাধিক মাচা বা ডাঙ্গি। ডাঙ্গিতে দেশি প্রজাতির পুঁটি, সরপুঁটি, মেনি, ভেদি, আলুনি, টাকি, শোল, গজার, কাচকি, মলা, ঢেলা, চাপিলা, খলিসা, কাইক্যা, বাইনসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কেটে শুকাতে দেওয়া হয়।
 
পাখিরা যাতে শুকাতে দেওয়া মাছ নষ্ট করতে না পারে সে জন্য প্রতিটি মাচা জাল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। শুঁটকি উৎপাদনকারীরা জানান, কাটা মাছগুলো রোদে শুকানোর পর তা বিক্রির জন্য নেওয়া হয় বাজারের বিভিন্ন আড়তে। তবে সিদল (চ্যাপা) তৈরির জন্য মাটির কলস বা মটকায় মাছের তেল দিয়ে ২-৩ মাসের জন্য প্রক্রিয়াজাত করে রাখা হয়। নদী থেকে সরাসরি আহরিত মাছ থেকে শুঁটকি উৎপাদিত হয় বলে এখানকার শুঁটকি হয় আলাদা স্বাদের। ফলে এর চাহিদা রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি; পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ এবং ইউরোপ-আমেরিকার ভোক্তাদের কাছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এখান থেকে প্রতি বছর কমপক্ষে দেড়শ' কোটি টাকার শুঁটকি দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিদেশে রফতানি করা হয়। আড়তদাররা আশা করছেন, এ বছর শুঁটকি রফতানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০০ কোটি টাকা হতে পারে।
 
তবে যারা শুঁটকি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত, তারা পুঁজির অভাবে ন্যায্য মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যদি তাদের পর্যাপ্ত পুঁজির ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে একদিকে যেমন তারা লাভবান হবেন, অন্যদিকে রফতানির পরিমাণ দ্বিগুণ করা সম্ভব হবে। শুঁটকি উৎপাদনকারী সুনীল দাস, অনিল দাস, ললিত দাস, অবনী দাস ও সুধীর দাস বলেন, নিজস্ব পুঁজির অভাব ও ব্যাংক ঋণ না পাওয়ায় স্থানীয় আড়তদার ও মহাজনদের কাছ থেকে পুঁজি সংগ্রহ করতে হয়।
 
ফলে শুঁটকি উৎপাদনের পরপরই ঋণ পরিশোধ ও সংসার পরিচালনার জন্য তা বিক্রি করতে হয়। এতে তারা তেমন মুনাফা পান না।আড়তদার মো. আনোয়ার হোসেন, বাচ্চু মিয়া ও লালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোর্শেদ মাস্টার জানান, শুঁটকি ব্যবসার সঙ্গে প্রায় ৬ হাজার লোক জড়িত। কিন্তু পুঁজির অভাবে শুঁটকি উৎপাদনকারীরা ন্যায্য মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক সালেহ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, শুঁটকি ব্যবসায়ীদের ঋণ দেওয়া হচ্ছে।
 
কিন্তু শুঁটকি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতদের কোনো জামানত বা গ্যারান্টার না থাকায় তাদের ঋণ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সরকার এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিলে উৎপাদনকারীদের ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করব।