Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Monday 25 November 2013

চিঠি যায়, উত্তর আর আসে না

 
প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রায় ছয় বছরে (২০১৩ আগস্ট পর্যন্ত) মোট চিঠি পাঠানো হয়েছে ৪১৬টি। তবে ২০১২ সাল পর্যন্ত চিঠির উত্তর পাওয়া গেছে মাত্র ৪০টির। চিঠিগুলো মামুলি চিঠি নয়, এসব চিঠির বিষয়বস্তু নারী নির্যাতন। নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলোতে প্রধানমন্ত্রী যাতে হস্তক্ষেপ করেন, সে আহ্বান জানিয়ে এই চিঠিগুলো পাঠানো হয়।
বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ শুধু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় নয়, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে নিয়মিত এ ধরনের চিঠি পাঠাচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলোতে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে পরিষদের পক্ষ থেকে চিঠিগুলো পাঠানো হচ্ছে। সেগুনবাগিচায় মহিলা পরিষদের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসনের কাছে পরিষদের পাঠানো চিঠির ফাইলগুলো বেশ মোটাসোটা। তবে উত্তরগুলো যে ফাইলে রাখা তার আকার বেশ রুগণ।
মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, আগে উত্তর পাওয়াই যেত না। সে তুলনায় এখন চিঠির উত্তর আসার পরিমাণ বেড়েছে। আর বিষয়টি নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটি কতটা নারীবান্ধব, তার ওপর। কেননা চিঠি যাঁর হাতে যাচ্ছে তিনি যদি বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন, তাহলেই তা যথাযথ স্থানে পৌঁছাবে।
মহিলা পরিষদের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ২০০৮ সাল থেকে চলতি বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, জেলা প্রশাসক, এসপি, নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, মহিলা পরিষদের জেলা শাখাসহ বিভিন্ন জায়গায় ২০ হাজার ৫২৩টি চিঠি পাঠানো হয়েছে। মহিলা পরিষদের জেলা শাখা ছাড়া ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে উত্তর পাওয়া গেছে ৯৫১টি। জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠানো ৪ হাজার ৬২৫টি চিঠির মধ্যে উত্তর এসেছে ৬৫০টি। পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো ১ হাজার ২৭টি চিঠির মধ্যে উত্তর এসেছে ১১২টির। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ৫৬টি চিঠির মধ্যে উত্তর এসেছে মাত্র ১২টির।
মহিলা পরিষদের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও আইন সহায়তা কার্যক্রম প্রতিবেদনে (২০০২-২০০৭) উল্লেখ করা হয়েছে, এ সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ৪৪১টি চিঠি পাঠানো হয়। উত্তর পাওয়া যায় মাত্র চারটির। পুলিশ সদর দপ্তরে ১ হাজার ৯৩৭টি চিঠির বিপরীতে উত্তর আসে ২৯৮টির। তবে বিভিন্ন সময় জেলা প্রশাসকসহ অনেকেই একসঙ্গে একই চিঠিতে কয়েকটি চিঠির উত্তর দিয়েছেন, তারও প্রমাণ মেলে।
তবে পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মহিলা পরিষদের তথ্য মানতে নারাজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, সদর দপ্তরে নারী ও শিশু পাচার, অ্যাসিডসহ বিভিন্ন নির্যাতন বিষয়ে আটটি বিভাগ বা সেকশনে কাজ হচ্ছে। এই আটটি বিভাগ তদারকি করছেন অ্যাডিশনাল ডিআইজি (স্পেশাল ক্রাইম অ্যান্ড প্রসিকিউশন)। আর দপ্তরে পাঠানো কোনো চিঠি ফেলে রাখা হয় না। পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং সে-সংক্রান্ত চিঠি চিঠির প্রেরককে জানিয়ে দেওয়া হয়।
পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (স্পেশাল ক্রাইম অ্যান্ড প্রসিকিউশন) হিসেবে একজন ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি বদলি হয়ে যাওয়ায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
নারী নির্যাতন-বিষয়ক চিঠির বিষয়ে যাঁরা আন্তরিক, তাঁরা যে আসলেই পদক্ষেপ নিতে চেয়েছেন, চিঠিপত্র ঘেঁটে তারও প্রমাণ পাওয়া গেল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক ৫ অধিশাখার উপসচিব মোস্তাফিজুর রহমানের সই করা দুটি চিঠি পাওয়া গেল। তাতে মহিলা পরিষদের চিঠির কথা উল্লেখ করে মহাপুলিশ পরিদর্শককে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
২০১২ সালের ৫ নভেম্বর প্রথম আলোতে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে মারধরের একটি খবর প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে মহিলা পরিষদের পাঠানো চিঠির উত্তরে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি সাভার মডেল থানার এস আই মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, নির্যাতনের শিকার নারীর বাবা প্রথমে মামলা করলেও পরে ১০০ ও ৫০ টাকার স্ট্যাম্পে আপস করেন। পুলিশ এ ঘটনায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
প্রশাসনের অনেক দপ্তর মহিলা পরিষদের পাঠানো চিঠিটি পেয়েছে এবং উদ্যোগটি প্রশংসনীয়, এ কথাটি লিখে উত্তরও পাঠিয়েছে।@Prothomalo