Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Sunday 3 November 2013

মহাসচিব পর্যায়ে শর্তহীন সংলাপে রাজি খালেদা

নির্বাচন নিয়ে চলমান সংকট নিরসনে দুই বড় দলের মহাসচিব পর্যায়ে সংলাপে বসার জন্য ব্যবসায়ী নেতাদের প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গতকাল শনিবার রাতে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক শেষে এফবিসিসিআইর সভাপতি কাজী আকরামউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের এ কথা জানান। তিনি বলেন, 'আমরা সংকট নিরসনে নিঃশর্তভাবে দুই দলের মহাসচিবকে আলোচনায় বসার জন্য বিরোধীদলীয় নেতার কাছে প্রস্তাব করেছি। এ প্রস্তাবে বিরোধীদলীয় নেতা রাজি হয়েছেন।' সূত্র জানায়, একই সঙ্গে বৈঠকে ব্যবসায়ীরা খালেদা জিয়াকে হরতালের বিকল্প অন্য কর্মসূচি দেওয়ার প্রস্তাব করেন। জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, হরতালে ব্যবসায়ীদের সাময়িক ক্ষতি হলেও দীর্ঘমেয়াদি লাভ হবে। সরকার দেশের ৯০ শতাংশ মানুষের মতামত উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচন করলে দেশে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করলে ব্যবসায়ীদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হবে।
নির্বাচন নিয়ে চলমান সংকট ও বিরোধী দলের হরতালসহ নানা কর্মসূচির ফলে অর্থনীতির উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে আলোচনায় ব্যবসায়ী নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গতকাল রাত পৌনে ৯টা থেকে
১১টা পর্যন্ত এ বৈঠক চলে। বিরোধীদলীয় নেতা ব্যবসায়ী নেতাদের কথা শুনে তাদের কাছে বিরোধী দলের অবস্থান এবং নির্দলীয় সরকারের দাবির যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করেন। খালেদা জিয়ার বক্তব্যে সরকারের সঙ্গে সংলাপে তার দলের আন্তরিকতার কথাও উল্লেখ করেন।
বৈঠকের পর এফবিসিসিআইর সভাপতি কাজী আকরামউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এখন এই প্রস্তাব নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলাপ করব। যাতে দু'একদিনের মধ্যে দুই মহাসচিবকে আলোচনায় বসার ব্যবস্থা করা যায়। তিনি বলেন, দেশ ও জাতির কথা চিন্তা করে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতেই ব্যবসায়ীরা মহাসচিব পর্যায়ে বৈঠকের প্রস্তাব করছে। সব ঠিক থাকলে অচিরেই সমঝোতা হবে।
এফবিসিসিআইর এ প্রস্তাবকে ইতিবাচক অভিহিত করে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, এফবিসিসিআইর এ প্রস্তাবকে বিএনপি স্বাগত জানিয়েছে। আমরা চাই, মহাসচিব পর্যায়ে আলোচনা শুরু হোক। তার পর সেখানে সংলাপের আলোচ্যসূচি কী হবে, তা নির্ধারিত হবে। দেশের ৯০ শতাংশ জনগণের চাহিদা নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন হোক। আমরা সে বিষয়ে আলোচনার জন্য যা যা করতে হবে, তা-ই করব।
বৈঠকের পর এফবিসিসিআইর সভাপতি দীর্ঘ সময় দেওয়ার জন্য বিরোধীদলীয় নেতাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ব্যবসায়ীরা বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের জন্য যেমন সমান সুযোগের কথা বলে, ব্যবসায়ীরাও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সমান সুযোগ চান। দেশের অর্থনীতি ভালো হলে জাতির মর্যাদা বাড়বে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে শান্তিপূর্ণ পরিবেশের নিশ্চয়তা চেয়েছেন তারা।
এফবিসিসিআইর প্রস্তাব তুলে ধরে কাজী আকরামউদ্দিন আহমদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব দিয়েছেন। বিরোধীদলীয় নেতা নির্দলীয় সরকারের আরেকটি প্রস্তাব দিয়েছেন। এ দুটি প্রস্তাব নিয়েই আলোচনা হতে পারে। এ জন্য তারা বিরোধীদলীয় নেতার কাছে বলেছেন, মহাসচিব পর্যায়ে নিঃশর্তভাবে আলোচনায় বসতে রাজি হওয়ার জন্য। বিরোধী দল থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলাপ করে সংলাপে বসানোর চেষ্টা করব।
হরতাল প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দু'একদিনের মধ্যে সংলাপ শুরু হলে এ প্রশ্নটি চলে আসবে। আগে আলোচনাটা শুরু করতে দিন।
এ প্রসঙ্গে বৈঠক শেষে এক ব্যবসায়ী নেতা বলেন, হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানালে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাদের বাধ্য হয়ে হরতাল কর্মসূচি দিতে হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের সাময়িক ক্ষতি হলেও সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে দেশ স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।
এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আনিসুল হক বলেন, ব্যবসায়ীরা সমঝোতার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন। এ ব্যাপারে বিরোধীদলীয় নেতা স্বাগত জানিয়েছেন। তবে শর্তহীনভাবে আলোচনা মুখ্য বিষয় নয়। আগে আলোচনায় বসানোর ব্যাপারে চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা।
শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ব্যবসায়ীদের আলোচনার উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা। দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে দু'দলের সংলাপের মাধ্যমেই সমাধান হওয়া সম্ভব হবে।
এফবিসিসিআইর সভাপতি কাজী আকরামউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে ৫০ সদস্যের প্রতিনিধি দলে এম এ কাসেম, ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, মীর নাসির হোসেন, আনিসুল হক, এ. কে. আজাদ, মোহাম্মদ আকরাম হোসেন ছাড়াও এফবিসিসিআইর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া ছিলেন এমসিসিআইর সভাপতি রোকেয়া আফজাল রহমান, বিজেএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম, ডিসিসিআইর সভাপতি সবুর খান, বিটিএমএর সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামিন, উইম্যান এন্টারপ্রেনিউর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভানেত্রী নাসরিন আউয়াল মিন্টু।
অন্যদের মধ্যে বিজেএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক, কাজী মুনিরুজ্জামান, বায়রার সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম হায়দার এবং এফবিসিসিআইর কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রথম সহসভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী, সহসভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন প্রমুখ ব্যবসায়ী নেতা বৈঠকে অংশ নেন।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক, সাবেক বাণিজ্য উপদেষ্টা বরকত উল্লাহ বুলু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
-সমকাল প্রতিবেদক