Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Monday 18 November 2013

সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রীরা শপথ নেবেন আজ; নতুন মন্ত্রী হচ্ছেন ৯ জন, জাপা থাকছে


শাহেদ চৌধুরী/শরীফুল ইসলাম +Samakal Dhaka 
বহু জল্পনা-কল্পনার পর নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রীরা আজ সোমবার শপথ নিচ্ছেন। এ মন্ত্রিসভায় নতুন ৯ জন সদস্য অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। তারা আজ বিকেল ৩টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে শপথ নেবেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের দু'জন, জাতীয় পার্টির ছয়জন এবং ওয়ার্কার্স পার্টির একজন রয়েছেন।
বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে অনেকেই সর্বদলীয় সরকারে থাকছেন। তাদের অবশ্য শপথ নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। সর্বদলীয় সরকারের সদস্যসংখ্যা কত হচ্ছে, সেটা কেউ নিশ্চিত করতে না পারলেও ত্রিশের মতো হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। যেসব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী সর্বদলীয় সরকারে থাকছেন না, তাদের পদত্যাগপত্র আজ গ্রহণ করা হবে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সোমবার নতুন মন্ত্রীদের শপথ পড়াবেন। এ সময় সর্বদলীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনাসহ বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্য, এমপি, রাজনৈতিক দলের নেতা এবং সরকারি-বেসরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। শপথ গ্রহণের পর মন্ত্রীদের মন্ত্রণালয় বণ্টন করা হবে। এ সরকারের অধীনেই আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচনকালীন সরকারের ধরন নিয়ে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের বিরোধে রাজনৈতিক সংকটের শঙ্কা এবং বিদেশি কূটনীতিকদের তৎপরতার মধ্যেই সর্বদলীয় সরকারের শপথ গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হলো। এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী শ্রীলংকা থেকে ফিরলেই সর্বদলীয় সরকার গঠনের কার্যক্রম শুরু হবে।
গতকাল রোববার রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আজ বিকেল ৩টায় শপথ নেবেন নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেছেন। সর্বদলীয় সরকারের বিষয়েও রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী প্রায় এক ঘণ্টা আলোচনা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদৃব্দতি দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা আরও বলেছেন, সর্বদলীয় সরকারের কাঠামো আকারে ছোট হবে। এই সরকারের কাঠামো এবং কার্যক্রম সম্পর্কেও রাষ্ট্রপতিকে বিস্তারিত অবহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতি এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এর সাফল্য কামনা করেছেন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের দুই সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদকে শপথ গ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বর্ষীয়ান এ দুই নেতা বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন না। ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মন্ত্রী করার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তোফায়েল আহমেদ প্রত্যাখ্যান করেন।
নতুনদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির ছয় নেতা থাকছেন। তারা হলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদ, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন বাবলু, অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু ও সালমা ইসলাম। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ স্বাক্ষর করে জাতীয় পার্টির নেতাদের নামের তালিকা পাঠিয়েছেন। ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননও থাকছেন এ সরকারে।
পুরনোদের মধ্যে যারা থাকছেন
বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সর্বদলীয় সরকারে থাকছেন। তাদের মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য বিমানমন্ত্রী জি এম কাদের, জাসদের সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ূয়া থাকবেন। এই হিসাব অনুযায়ী জাতীয় পার্টির সাতজন, জাসদের একজন এবং সাম্যবাদী দলের একজন শীর্ষ নেতা সর্বদলীয় সরকারে থাকছেন। সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রিসভায় তিনজন টেকনোক্র্যাট সদস্য থাকবেন। তারা হলেন দিলীপ বড়ূয়া, আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও জিয়াউদ্দিন বাবলু।
এ ছাড়া বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে থাকতে পারেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার বীরউত্তম, শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষামন্ত্রী নুুরুল ইসলাম নাহিদ, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক।
যারা বাদ পড়তে পারেন
বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যের মধ্যে যারা বাদ পড়তে পারেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা, সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস, দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। প্রতিমন্ত্রীরা সবাই বাদ পড়তে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৮ অক্টোবর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের কথা বলেছিলেন। এ সরকার গঠনের জন্য গত সোমবারই প্রধানমন্ত্রীর হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা। ওই পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া হয়েছে কি-না জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, 'পদত্যাগপত্রগুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে রয়েছে। উনি সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন।'
সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদপূর্তির আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা থাকায় আগামী ২৪ জানুয়ারির মধ্যেই ভোট গ্রহণের আয়োজন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।
প্রতিক্রিয়া
সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার। তিনি সমকালকে বলেন, 'রোববার সন্ধ্যায় ফোন করে আমাকে জানানো হয়েছে, আগামীকাল (সোমবার) সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রিসভার শপথ হবে। শপথ নিতে বিকেল ৩টায় বঙ্গভবনে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।' জাপার সাত নেতাকে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে ফোন করা হয়েছে_ এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে রুহুল আমীন হাওলাদার বলেন, 'আমাদের দলের সাতজনকে ফোন করা হয়েছে বলে শুনেছি। কারও সঙ্গে অবশ্য আমার কথা হয়নি।'
আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার কথা জাপার। এর পরও সর্বদলীয় সরকারে দলটি যোগ দেবে কি-না এ প্রশ্নের জবাবে রুহুল আমীন হাওলাদার বলেন, 'আমরা কাল সোমবার মহাজোট ছাড়ব। এটা আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। দলের চেয়ারম্যান (এইচএম এরশাদ) সিদ্ধান্ত নেবেন, আমরা সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেব কি-না।' সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘোষণাও আসবে বলে জানান তিনি। জাপা সর্বদলীয় সরকারে যোগ দিতে যাচ্ছে বলেই জানান তিনি।