Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Saturday 2 November 2013

‘এত অনুরোধ করলাম, তবু কোপাইলো’

‘এত অনুরোধ করলাম, তবু কোপাইলো’

‘মাত্র একটি পরীক্ষা বাকি ছিল।কিন্তু ৫ নভেম্বর পরীক্ষার হলে যেতে পারব কি না, জানি না।পরীক্ষা না দিলে আমার রেজিস্ট্রেশন বাতিল হবে।মনে হয় পরীক্ষা দিতে পারব না।’ আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে জরুরি বিভাগের ১১ নম্বর ওয়ার্ডে শয্যাশায়ী ছাত্রলীগের নেতা বেনজীর আহমেদ এ কথা বলে কেঁদে ফেলছিলেন।তিনি বগুড়ার সরকারি আযিযুল হক কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।তিনি একই কলেজে ইসলামের ইতিহাসের স্নাতক চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র।গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে বগুড়ার কানুছগাড়ী এলাকায় বেনজীর আহমেদের ডান পায়ের গোড়ালি ও বাঁ-হাতের দুটি আঙুলের রগ কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা।এ ছাড়া তাঁর পিঠে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কোপানো হয়েছে।ঘটনার শিকার বেনজীর, স্থানীয় ছাত্রলীগ ও পুলিশ এর জন্য ছাত্রশিবিরের কর্মীদের দায়ী করেছে।তবে ছাত্রশিবির অভিযোগ অস্বীকার করেছে।কান্নাজড়িত কণ্ঠে বেনজীর আজ প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘আমাকে যারা কোপাইছে তাদের একজনকে আমি চিনি।ওর নাম রুবেল, শাজাহানপুর উপজেলার চেয়ারম্যান ইয়াসিনের ছেলে।রুবেল ও তার বাবা জামায়াত করে।’বেনজীর জানান, পরীক্ষা শেষ করে রিকশায় চড়ে সাতমাথা এলাকায় ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় রুবেল মোটরসাইকেলে করে এসে তাঁর (বেনজীর) পথ রোধ করেন।এরপর আরও দুজন মোটরসাইকেলে করে এসে বেনজীরকে ঘিরে ফেলেন।অবস্থা বেগতিক দেখে পাশের সমন্বয় ফার্মেসি নামের একটি ওষুধের দোকানে ঢুকে পড়েন তিনি।সেখানে রুবেল আরও প্রায় ১০ জনকে নিয়ে ঢুকে পড়েন।

বেনজীর বলেন, রুবেল ও তাঁর সহযোগীরা দোকান থেকে তাঁকে বাইরে আনার চেষ্টা করেন।তিনি বের না হলে তাঁরা দোকানের মধ্যেই তাঁকে মারতে থাকেন।রুবেল তাঁকে চেপে ধরেন।বাকিরা সাত-আট মিনিট ধরে তাঁকে কোপাতে থাকেন।একপর্যায়ে হামলাকারীরা তাঁর হাত-পায়ের রগ কেটে দেন।বেনজীর বলেন, ‘ওদের হাত-পা ধরে এত অনুরোধ করলাম, তবু কোপাইলো।’বেনজীর জানান, তিনি মারা গেছেন ভেবে হামলাকারীরা গুলি ও ককটেল ছুড়ে পালিয়ে যান।কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিল না দাবি করে বেনজীর বলেন, তাঁর ধারণা, বগুড়ায় ছাত্রলীগের কারও ওপর হামলা করে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করা ছাত্র শিবিরের লক্ষ্য ছিল।এরই অংশ হিসেবে তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়।বেনজীর বলেন, গত ২৩ আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম তৌহিদ আল হোসেন ওরফে তুহিনের ওপর হামলার পর তিনি সাবধানে চলাচল করতেন।  হাসপাতালে বেনজীরের দেখভাল করতে আসা তাঁর মামা গোলাম মোস্তফা জানান, বেনজীর হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান।দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়।বাবা তোজাম্মেল হোসেন ১২ বছর আগে মারা যান।এরপর থেকে তাঁর মা বেলী বেগম অল্প কিছু জমি বর্গাচাষ করে ছেলেদের পড়ার খরচ জোগাতেন।ছোট ভাই রিপন হোসেন এ বছরের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার্থী।বগুড়া শহরের একটি মেসে থেকে পড়াশোনা করতেন বেনজীর।ফরম পূরণের অর্থ জোগাড় করতে না পারায় গত বছর তিনি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি।এদিকে বেনজীরের ওপর হামলাকারী রুবেলের বাবা ইয়াসিন গত ৩ মার্চ শাজাহানপুর থানা হামলার ঘটনার আসামি।সেদিনের ওই হামলায় চারজন মারা যান।বেনজীরের চিকিত্সাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রাথমিক চিকিত্সা করানোয় এখন শঙ্কামুক্ত বেনজীর।তবে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার জন্য তাঁকে দীর্ঘমেয়াদি চিকিত্সা করাতে হবে।বেনজীরের মামা গোলাম মোস্তফা জানান, প্রাথমিক চিকিত্সা করানো হলেও দীর্ঘমেয়াদি চিকিত্সার খরচ জোগাড় করা তাঁর পরিবারের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।এ ছাড়া এ বছর বেনজীর চূড়ান্ত পরীক্ষায় উপস্থিত হতে না পারলে তাঁর নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে।