Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Saturday 2 November 2013

পাঁচ বছরেও হলো না প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড

পাঁচ বছরেও হলো না
প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড
সাবি্বর নেওয়াজ
দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় প্রাথমিক স্তরে। ২০০৯ সালে চালু হওয়া 'প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী' নামের এ পরীক্ষা চলতি বছর পঞ্চমবারের মতো সারাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথম বছর সারাদেশের ২২ লাখ শিশু এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। আগামী ২০ নভেম্বর শুরু হতে যাওয়া এবারের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হবে ৩০ লাখ শিশু। ৫ বছরে এ পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে আট লাখ। অথচ দেশব্যাপী এই বিশাল পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য কোনো শিক্ষা বোর্ড নেই। 'প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড' নামে পৃথক একটি বোর্ডের কথা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ৫ বছর ধরে বলে এলেও তার কোনো বাস্তবায়ন নেই। অথচ প্রতি বছরই পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। ২০১০ সাল থেকে এ পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের 'ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা'ও।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রতি বছর এসএসসি কিংবা এইচএসসি স্তরে ১০ থেকে ১৩ লাখ পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এই সংখ্যক পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড রয়েছে, যারা আঞ্চলিক ভিত্তিতে ওই পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অথচ প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে ওই দুটি পরীক্ষার পরীক্ষার্থীর প্রায় তিন গুণ পরীক্ষার্থী দেশব্যাপী অংশ নিলেও তার জন্য কোনো শিক্ষা বোর্ড নেই। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এ পরীক্ষার কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হয়। এতে নানা জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতি বছর সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহণ, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফল প্রদানসহ পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট যাবতীয় কার্যক্রমে তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
গত কয়েক বছরে বারবার প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড গঠনের ঘোষণা দিলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. মোতাহার হোসেন বলেন, 'প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়েছে। এ খাতে বরাদ্দ পেলে অবকাঠামোসহ অন্যান্য কাজ দ্রুত শেষ করা যাবে।' তিনি জানান, বোর্ড গঠনের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে অর্থ সংকট। একটি বোর্ড গঠন করা হলে তার জনবল নিয়োগ, অফিস ব্যবস্থাপনায় অনেক অর্থ প্রয়োজন। তা এ মন্ত্রণালয়ের নেই। তারপরও সম্ভাব্য ব্যয় ও জনবল কাঠামো কী হবে তার খসড়া তৈরির জন্য জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমিকে (ন্যাপ) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী গত বছর গাজীপুর সদর উপজেলায় এ মন্ত্রণালয়েরই সাবেক সচিব এমএম নিয়াজ উদ্দিনের বাড়ির পাশে মেঘডুবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সমাপনী পরীক্ষা পরিদর্শন করেছিলেন। ওই সময় গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন, প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড শিগগিরই গঠন করা হবে। এর পর পেরিয়ে গেছে আরও একটি বছর।
অবশ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সচিব এমএম নিয়াজ উদ্দিন বদলি হওয়ার সঙ্গে তার উদ্যোগও ভেস্তে গেছে। তিনিই প্রথম প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড গঠনের অফিসিয়াল প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন।

এদিকে প্রাথমিক স্তরের এই বৃহৎ পাবলিক পরীক্ষার ফল তৈরিতেও গত দুই বছরে অনিয়মের ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার উত্তরপত্র সংশ্লিষ্ট জেলায় চলে যায়। ফলের তালিকা তৈরি হয় উপজেলা শিক্ষা অফিসে। বৃত্তিপ্রাপ্তির আশায় ভালো ফলের জন্য উত্তরপত্রে নম্বর বেশি দেওয়ার অভিযোগ উঠছে গত দুই বছর পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর। নিজ প্রতিষ্ঠানে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীকে বৃত্তি পাইয়ে দিতে প্রধান শিক্ষকদের অনেকে মরিয়া হয়ে ঘুষও দিয়ে থাকেন বলে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ আসতে শুরু করেছে।