Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Wednesday 13 November 2013

মার্কিন কংগ্রেসম্যানের টুইটার বার্তা: খালেদা জিয়া ভাবী প্রধানমন্ত্রী



ঢাকা ত্যাগ করেই সংক্ষেপে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী নেত্রীর মূল্যায়ন করলেন মার্কিন রিপাবলিকান দলীয় রাজনীতিক স্টিভ শেবো। ২০০৬ সালেও এসেছিলেন তিনি। ঢাকায় তিনি এক প্রশ্নের জবাবে দুই নেত্রীকে কারাগারে যাওয়ার পরিস্থিতিতে যাতে না পড়তে হয় তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আর ৬ই নভেম্বর নিজের ব্লগে বাংলাদেশ নিয়ে লিখেছেন। ১৯৫৩ সালে ওহাইয়োতে জন্মগ্রহণকারী স্টিভ আইনের শিক্ষক ছিলেন। এখন তিনি মার্কিন কংগ্রেসে এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক বৈদেশিক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তবে তার লেখায় খালেদা জিয়ার এমন একটি পরিচয় তিনি উল্লেখ করেছেন যা কৌতূহলোদ্দীপক। খালেদা জিয়াকে তিনি ‘প্রবাবলি সুন-টু-বি এগেইন প্রাইমমিনিস্টার’ (সম্ভাব্য পুনর্বারের প্রধানমন্ত্রী) হিসেবে উল্লেখ করেন।    
মার্কিন কংগ্রেসের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিষয়ক বৈদেশিক সাব কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে আমি দুই দিন বাংলাদেশে কাটালাম। এই উদারনৈতিক, ধর্মনিরপেক্ষ, মুসলিম রাষ্ট্র বিশ্বের প্রথম ও দ্বিতীয় সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীন ও ভারতের মধ্যখানে একটি  কৌশলগত অবস্থানে আছে।
দেশটি অত্যন্ত দরিদ্র। প্রতিদিন দুই ডলারেরও কম খরচ করে ৮০ ভাগ মানুষ জীবন যাপন করে এবং এটা অবিশ্বাস্যভাবে ঘনবসতিপূর্ণ। এর জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৩০ লাখ। যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার অর্ধেকের চেয়ে কিছু বেশি। অথচ আইওয়ার মতো একটি অঙ্গরাজ্যের চেয়েও বাংলাদেশ আয়তনে ছোট।
আপনি যদি একটি নির্দিষ্ট বয়সী হয়ে থাকেন, তাহলে ‘বাংলাদেশ’ কথাটি শোনামাত্রই আপনার মনে একটি স্মৃতি উঁকি দিতে পারে। আর সেটি হলো সাবেক বিটলস জর্জ হ্যারিসনের ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী ঘুর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল এবং দেশটি প্রত্যক্ষ করেছিল একটি ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ। জর্জ হ্যারিসন ও রবি শংকর বাংলাদেশকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। সে কারণে তারা তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে আয়োজন করেছিলেন দু’টি কনসার্টের। তারা দু’জন ছাড়াও ওই কনসার্টে অংশ নিয়েছিলেন বিটলস-এর রিঙ্গো স্টার, বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, বিলি প্রেসটন, লিওন রাসেল এবং দি ব্যান্ড ব্যাডফিঙ্গার। এর ফলে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ লাইভ এলবামটি সর্বোচ্চ বিক্রির তালিকায় আসে। আর ভবিষ্যতের জন্য লাইভ এইড, ফার্ম এইড প্রভৃতির মতো অর্থ তহবিল সংগ্রহের সম্ভাবনাময় কনসার্টের পথ খুলে দেয়। কিন্তু আমি মূল প্রসঙ্গ থেকে সরে গিয়েছি।
বাংলাদেশ সম্প্রতি আবার খবরের শিরোনাম হয়েছে। এর কারণ সেখানে বহু ধরনের ভয়ঙ্কর বিয়োগান্তক ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে মর্মন্তুদ ঘটনাটি হচ্ছে রানা প্লাজা গার্মেন্ট কারখানার ধসে পড়া। এতে ১১ শ’র বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এদের বেশির ভাগই নারী এবং আহত শ্রমিকের সংখ্যা আড়াই হাজার বলে অনুমান করা হয়।
আরেকটি বিয়োগান্তক ঘটনা হচ্ছে তাজরীন ফ্যাশন কারখানায় অগ্নিকাণ্ড। এতে ১১৭ জন নিহত এবং আরও ২০০ জন আহত হয়েছেন। আবারও হতাহতদের উল্লেখযোগ্য অংশই নারী। দুর্ভাগ্যবশত এ দু’টি ঘটনা হচ্ছে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার অংশ, যা আসলে প্রতিরোধযোগ্য। মার্কিন কোম্পানিগুলো যাদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ওয়াল-মার্ট, তারা বহু বছর ধরে ওইসব বাংলাদেশী কোম্পানির সঙ্গে বাণিজ্য করে আসছে। এর মূল কারণ প্রদেয় শ্রমমূল্য তাদের মনঃপূত। বিশ্বে সবচেয়ে সস্তায় পোশাক প্রস্তুতকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের স্থান দ্বিতীয়। তার চেয়ে এগিয়ে কেবল মিয়ানমার।
বাংলাদেশে আমার অবস্থানকালে অন্য অনেক বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশী কর্মকর্তাদের সঙ্গে যে সব বিষয় নিয়ে কথা বলেছি তার মধ্যে পোশাক কারখানার নিরাপত্তা জোরদার করার বিষয় ছিল একটি- যাতে ভবিষ্যতে একই ধরনের বিয়োগান্তক অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি না ঘটে। বাংলাদেশকে এজন্য বহু দূর যেতে হবে এবং একথা উল্লেখ না করলে আমার দিক থেকে শৈথিল্য দেখানো হবে যে, আমেরিকান ও অন্যান্য পশ্চিমা কোম্পানির এক্ষেত্রে আইনগত না হলেও নৈতিক দায়িত্বশীলতা রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে হলেও শ্রমিকদের নিরাপত্তা তাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্র রয়েছে। তাই আমেরিকার মতো প্রেসিডেন্ট নয়, বাংলাদেশের নেতা প্রধানমন্ত্রী। গত ২২ বছর ধরে দুই শক্তিশালী নারী এ পদটির জন্য পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রায় মরণপণ লড়াই করছেন। আওয়ামী লীগ নামের রাজনৈতিক দলের নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পিতা, যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিনিসহ তাঁর মা ও তিন ভাই সকলেই ১৯৭৫ সালে নিহত হন। শেখ হাসিনা দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান। গত ২২ বছরের প্রায় অর্ধেকটা সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়া অবশিষ্ট ১১ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। জরিপের ফলাফল যদি সঠিক প্রমাণিত হয় তাহলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে শেখ হাসিনাকে তিনি হরিয়ে দিয়ে ফিরে পেতে পারেন প্রধানমন্ত্রীর পদ। তাঁর স্বামীও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তিনি ১৯৮১ সালে নিহত হন। সুতরাং বাংলাদেশের এই দুই শক্তিশালী নেতার জীবনে বিরাট বিয়োগ গাথার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এটা সেই প্রবাদ বাক্য স্মরণ করিয়ে দেয় ‘যা তোমাকে হত্যা করে না, তা তোমাকে শক্তিশালী করে দেয়’।
বাংলাদেশে অবস্থানকালে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সম্ভবত-শিগগিরই-পুনর্বার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। ২০০৬ সালে আমার প্রথম বাংলাদেশ সফরকালে তাদের উভয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটেছিল (তখন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী, আর শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেতা।)  তাঁরা উভয়ে অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত, অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এটা বড় দুর্ভাগ্য যে, বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে তারা দু’জন কাছাকাছি হতে পারছেন না। অবশ্য আমি অনুমান করতে পারি যে, আপনারা হয়তো বারাক ওবামা এবং জন বোয়েনার অথবা ওয়াশিংটনের আরও অনেকের সম্পর্কে এ কথা বলতে পারেন।
অন্য আরেকটি কৌতূহলী বিষয় সম্পর্কে আমি সংক্ষেপে আলোচনা করবো। বাংলাদেশে যুদ্ধপরাধের বিচার চলছে। এবং প্রায় অর্ধ ডজন বর্ষীয়ান বাংলাদেশীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে (যদিও কোন দণ্ডাদেশ এখনও কার্যকর হয়নি)।
এখানেও লক্ষণীয় বিষয়- ভারত এবং পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমানে শুধু পাকিস্তান) এবং পূর্ব পাকিস্তান (আজকের বাংলাদেশ) ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের আগ পর্যন্ত বৃটিশ সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। [দেশভাগের] পরপরই হিন্দু ও মুসলিমরা একে অপরকে হত্যা করতে শুরু করেছিল। বেশির ভাগ মুসলিম ভারত থেকে পালিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে কিংবা পূর্ব পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়। পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুরা পালিয়ে যায় ভারতে। বুঝতে পারছেন?
১৯৭১ সাল পর্যন্ত পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান এক দেশ ছিল। পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধীনতার আন্দোলন জোরালো হয়ে ওঠে, পরে ৯ মাস স্থায়ী গৃহযুদ্ধ হলো। আনুমানিক ৩০ লাখ মানুষ যাদের বেশির ভাগই পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক নাগরিক তাদেরকে জীবন দিতে হলো।
এখন শেখ হাসিনার সরকার ৪২ বছর আগে সংঘটিত নৃশংসতার কুশলীবদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে। ও হ্যাঁ, সকল অভিযুক্ত এখন খালেদা জিয়ার দলের নেতৃবৃন্দ কিংবা তার মিত্র জোটের শরিক জামায়াত ইসলামের সদস্য। একাত্তরে যারা নৃশংসতা ঘটিয়েছে তাদের অপরাধের বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ন্যায়বিচারের মান রক্ষা করেনি। পাকিস্তানে অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, বর্তমান সরকার অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করতে ট্রাইব্যুনালের ওপর চাপ দিচ্ছে, যাতে আসন্ন নির্বাচনে বিরোধী দলকে দুর্বল করা সম্ভব।
বাংলাদেশের ঝঞ্ঝাপুর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও অনেক কিছুই বলার রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের ওপর এর প্রভাব রয়েছে। কিন্তু সময়াভাবে আমি আর সেদিকে যাবো না।
আমি আগামীকালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসবো এবং শুক্রবার যুদ্ধপ্রবীণদের নিয়ে আমাদের কংগ্রেসনাল জেলার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেবো। আগামী সোমবার ১১ই নভেম্বর ভেটারানস ডে (প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে অস্ত্রসংরণের [১৯১৮] স্মরণ দিবস)। অনুগ্রহ করে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে ধন্যবাদ জানানোর কথা স্মরণ রাখুন। কারণ আমাদের মহান জাতির জন্য তারাই বয়ে এনেছেন স্বাধীনতা- যার সুফল এখন আমার ভোগ করছি।
@ Manab Zamin