Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Tuesday 29 October 2013

সংলাপ কতদূর ছাড় দেবে কে

সংলাপ কতদূর ছাড় দেবে কে
x
সংলাপ নিয়ে চলছে একের পর এক নাটকীয়তা। নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক সংকটের 'বরফ' গলতে গিয়েও গলছে না। বিরোধীদলীয় নেতাকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী টেলিফোন করলেও নতুন করে আবার তৈরি হয়েছে 'জটিলতা'। টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল শেষে আবার সংলাপের উদ্যোগ নিতে রাজি হচ্ছে না দু'দলের কেউই। রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে আবারও 'অনড়' অবস্থান গ্রহণ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। কয়েক দিন ধরে সংলাপ নিয়ে দেশবাসীর মনে আশার আলো জাগলেও গতকাল সোমবার সরকারি ও বিরোধী দলের কঠোর অবস্থানে আবারও 'হতাশ' হয়ে পড়েছেন সবাই। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা হরতাল প্রত্যাহার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। এ পরিস্থিতিতে সবার মনেই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে একটি প্রশ্ন, আসলে কি সংলাপ হবে? ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. নাসিম বলছেন, এখন বিরোধী দলকে সংলাপের উদ্যোগ নিতে হবে। সংলাপে বসতে চাইলে বিরোধী দলকে উদ্যোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে সংলাপের দিন-তারিখ ঠিক করতে হবে। অন্যদিকে সরকারকেই সংলাপের উদ্যোগ
নিতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর । তিনি বলেন,
হরতালের পর যে কোনো সময় সংলাপে বসতে প্রস্তুত বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।
এ পরিস্থিতিতেই নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের ব্যাপারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় অব্যাহত রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি না এলে জামায়াত বাদে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অলোচনা করে সর্বদলীয় সরকার গঠন করা হবে। আর এ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা হবে। তবে এ নির্বাচনে বিএনপি আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অন্যদিকে সর্বদলীয় সরকার নিয়ে আলোচনায় যাবে না বিএনপি জোট। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার নিয়ে আলোচনায় রাজি হলেই কেবল সংলাপে বসতে প্রস্তুত তারা। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হরতালের পর সরকারের পক্ষ থেকে সংলাপের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া না হলে কঠোর কর্মসূচির দিকে যাবে ১৮ দলীয় জোট।
সূত্র জানায়, হরতাল শেষে আজ রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়ে এসে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। একই সঙ্গে দু'একদিনের মধ্যে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি ও ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
দেশজুড়ে টানটান উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার সন্ধ্যায় খালেদা জিয়াকে ফোন করে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেন। হরতাল কর্মসূচি প্রত্যাহার করে সোমবার সন্ধ্যায় গণভবনে যেতে আমন্ত্রণ জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর ওই আমন্ত্রণ রক্ষা করতে না পারলেও হরতালের পর যে কোনো সময় সংলাপে বসতে রাজি বলে জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা। একই সঙ্গে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে রোববার সকাল থেকে সারাদেশে টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল করছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট।
এ অবস্থায় বিরোধীদলীয় নেতাকে প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোন করার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি বলেছেন, দু'দিনের আলটিমেটামের আগেই টেলিফোনে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর আর ফোন করার প্রশ্নই আসে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সমকালকে বলেন, আমরা এখন দেখছি সরকার সংলাপের ব্যাপারে কতটা আন্তরিক। হরতালের পর সরকার সমঝোতার উদ্যোগ না নিলে দাবি আদায়ে রাজপথের কঠোর কর্মসূচি ছাড়া তো কোনো বিকল্প থাকবে না। সংলাপের পথে না এলে আমরা হরতালের পর প্রথমে 'অবরোধ' ও পরে 'অসহযোগে'র মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।
এখন সংলাপের উদ্যোগ নিতে হবে বিরোধী দলকে_ আ'লীগ :প্রধানমন্ত্রীর ফোনকলে সাড়া না দিয়ে এখন সংলাপ চাইলে বিএনপিকেই উদ্যোগ নিতে হবে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। হরতালের পর সংলাপের আমন্ত্রণ জানাতে বিএনপির আহ্বানের প্রেক্ষাপটে সোমবার ধানমিিতক কার্যালয়ে ১৪ দলের এক বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আর বিরোধী দলকে সংলাপে বসতে টেলিফোন না করার সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠক শেষে ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, '২৯ তারিখের পরে সংলাপে বসতে চাইলে বিরোধী দলকে উদ্যোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে সংলাপের দিন-তারিখ ঠিক করতে হবে।'
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আমরা সংলাপ চাই। প্রধানমন্ত্রী আন্তরিকতা দেখিয়েছেন। এখন বিরোধী দল সাড়া দিয়ে এগিয়ে এলে সংলাপ হবে। কিন্তু চলমান আন্দোলনে মনে হচ্ছে, বিএনপি নির্বাচন চাইছে না। চাইছে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে। বিরোধীদলীয় নেতার উদ্দেশে তিনি বলেন, নির্বাচন চাইলে দ্রুত সংলাপ করুন। তিনি আরও বলেন, আমরা অপেক্ষা করছি বিরোধী দল আসবে, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করবে।
বিরোধী দল জামায়াতকে নিয়ে এলে সংলাপ হবে কি-না_ এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জামায়াতকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বিএনপিকে সংলাপের আমন্ত্রণ দিয়েছেন। জামায়াতের সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে না।
তিন দিনের হরতাল শেষে ২৯ তারিখের পর বিএনপি সংলাপে বসতে চাইলে তারা রাজি হবেন কি-না জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, 'আমরা সব সময়ই রাজি। উদ্যোগটা বিরোধী দলকে নিতে হবে। সাড়া দেওয়ার দায়িত্ব বিরোধী দলের। ওনারা বলুক, কীভাবে আলোচনা করবেন।'
মতিঝিল বলাকা চত্বরে শ্রমিক লীগের হরতালবিরোধী সমাবেশে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া তার কথার বরখেলাপ করেছেন। আলটিমেটামের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী আলোচনার উদ্যোগ নিলেও জামায়াতের চাপে খালেদা জিয়া আসেননি।
সংলাপের উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে_ ফখরুল :বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সংলাপের উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে। অন্যথায় বুঝতে হবে, এ বিষয়ে তাদের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা নেই। গতকাল বিকেলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দলের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন। 'এখন বিরোধীদলীয় নেতাকে টেলিফোন করতে হবে'_ ১৪ দলের বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের দেওয়া বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আমরা কেন টেলিফোন করব? সংলাপের উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে আমি ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দিয়েছি। সরকার যদি উদ্যোগ না নেয়, তাহলে বুঝতে হবে সংলাপে তাদের সদিচ্ছা নেই।
ফখরুল বলেন, আমরা আগেও বলেছি, প্রধানমন্ত্রী যে সময়ে বিরোধীদলীয় নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তখন আমন্ত্রণ গ্রহণ করার সুযোগ ছিল না। কারণ, বিরোধীদলীয় নেতা প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, তার একটি কর্মসূচি রয়েছে। তাই নির্দলীয় সরকারের বিষয়ে আলোচনা করতে সম্মত হলে কাল (২৯ অক্টোবর) হরতাল কর্মসূচি শেষে যে কোনো সময়ে সংলাপের আমন্ত্রণ জানালে আমরা তাতে সাড়া দেব।
সংলাপের বিষয়ে দলের অবস্থান পরিষ্কার করে দলের মুখপাত্র বলেন, বিষয়টি পরিষ্কার হতে হবে। সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। তার ধারাবাহিকতায় তিনি (প্রধানমন্ত্রী) শনিবার সন্ধ্যায় বিরোধীদলীয় নেতাকে টেলিফোন করেছিলেন। আমাদের দাবি, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। এ দাবিতে আলোচনার কথা আমরা বলে আসছি। আমরা নির্দলীয় সরকারের বিষয়ে আলোচনা কিংবা সংলাপ চাই। এতে সরকার রাজি থাকলে আমরা সংলাপের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছি।
ফখরুল বলেন, আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, নির্দলীয় সরকার নিয়ে সরকার সংলাপ না করতে চাইলে বুঝতে হবে, তাদের সংলাপে বসার সদিচ্ছা নেই।
বিরোধীদলীয় নেতার ভোজের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় মেন্যু চেয়ে পাঠিয়েছে_ গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ রকম সংবাদের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সুস্পষ্ট ভাষায় জানাতে চাই, এটি কোনো সৌজন্য সামাজিক দাওয়াতে অংশগ্রহণ নয়। জাতীয় এ দুর্যোগময় মুহূর্তে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা সুরাহা করে দেশে শান্তি, স্থিতি ও গণতান্ত্রিক সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে একটি অর্থবহ আলোচনা করাই আমাদের উদ্দেশ্য।
এর আগে সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, হরতাল শেষে যে কোনো সময় গণভবনে যেতে প্রস্তুত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ২৯ তারিখ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। এরপর যে কোনো সময়ে প্রধানমন্ত্রী ডাকলে আমরা সংলাপে বসতে তৈরি আছি।
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় নিজের চেম্বারে মির্জা ফখরুল হরতালের দ্বিতীয় দিনের পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
x সমকাল প্রতিবেদক