Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Sunday 27 October 2013

সংসদে গ্রামীণ ব্যাংক বিল

সংসদে গ্রামীণ ব্যাংক বিল

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আর্থিক হিসাব দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রেখে গ্রামীণ ব্যাংক বিল ২০১৩ আজ রোববার সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
আজ রোববার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন। এরপর বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।
এর আগে গত ৩ অক্টোবর মন্ত্রিসভা বিলটি অনুমোদন করে। এই আইনটি পাস হলে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩ বাতিল বা রহিত হবে।
বিলে অনুমোদিত মূলধন ৩৫০ কোটি থেকে বাড়িয়ে এক হাজার কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৫০ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৩০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানায় সরকারের অংশীদারত্ব ২৫ শতাংশ বহাল রাখা হয়েছে। বাকি ৭৫ শতাংশ থাকছে গ্রামীণ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের কাছে। তবে সরকার প্রয়োজনে পরিশোধিত শেয়ার মূলধন বাড়াতে পারবে।
প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সর্বোচ্চ ৬০ বছর পর্যন্ত চাকরিতে বহাল থাকবেন। ব্যাংকের পরিচালকদের মেয়াদ হবে তিন বছর। ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডে সরকারের নিয়োগ করা তিনজন এবং ঋণ গ্রহীতা অংশীদারদের দ্বারা নির্বাচনে নয়জন ব্যক্তির পরিচালক হওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক এই বোর্ডের পরিচালক হলেও তাঁর ভোটাধিকার না থাকার বিধান রাখা হয়েছে।
বিদ্যমান আইনে গ্রামীণ ব্যাংক কেবল সরকারকে আর্থিক প্রতিবেদন দেয়। বিলটি আইনে পরিণত হলে সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংককেও আর্থিক প্রতিবেদন দিতে হবে। বিলে বলা হয়েছে, কেউ মিথ্যে তথ্য দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে তিনি এক বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
গ্রামীণ ব্যাংকের সূচনা থেকেই এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অবসরের বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১১ সালের মার্চে তাঁকে অব্যাহতি দেয়। এ নিয়ে ইউনূস আদালতে গেলে আদালত তাঁর বিপক্ষে রায় দেন।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, গ্রামাঞ্চলে বসবাসরত ব্যাপক জনগোষ্ঠীর নিকট গ্রামীণ ব্যাংকের সেবামূলক কার্যক্রম সম্প্রসারণ, উক্ত ব্যাংকে সরকার ও সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থার মালিকানা বহাল রেখে ঋণ গ্রহীতা সদস্যদের শেয়ার মালিকানা অর্জনের সুযোগ বাড়ানোর জন্য এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
এ ছাড়াও আজ ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) বিল-২০১৩, ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) বিল ২০১৩ ও এশিয়ান রিইনস্যুরেন্স করপোরেশন বিল ২০১৩ সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। উত্থাপনের পর বিলগুলো পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) বিল সংসদে উত্থাপন করেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
বিলে বলা হয়েছে, আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি, কৃষিপ্রধান এলাকা ও প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। কৃষিজমি, পাহাড় বা টিলা থেকে ইট তৈরির জন্য মাটি কাটলে অথবা অনুমোদন ছাড়া নদ-নদী বা হাওর, চরাঞ্চল এলাকা থেকে মাটি কাটলে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কেউ অনুমোদন না নিয়ে ইটভাটা খুললে এক বছরের কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। পার্বত্য জেলার পরিবেশ উন্নয়ন কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য কোনো স্থানে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না।
ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) বিল ২০১৩ উত্থাপন করেন শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর নির্ভর করে উত্কৃষ্ট মানের চাল, পদ্মার ইলিশ, টাঙ্গাইলের চমচম, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, চা, চামড়া, জামদানি, নকশিকাঁথা ইত্যাদি তৈরি হয়। এই আইনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় উত্পন্ন এসব পণ্যকে চিহ্নিত ও নিবন্ধিত করা যাবে।
এশিয়ান রিইন্সুরেন্স করপোরেশন বিল ২০১৩ উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।
এ ছাড়াও আজ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধন) বিল ২০১৩ পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ফজলে রাব্বি মিয়া। এতে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্নভাবে দলে তিন বছরের সদস্যপদ থাকার যে বিধান রয়েছে, তা বাতিলেও সুপারিশ করা হয়েছে।
সব শেষে সংসদের অধিবেশন আগামীকাল সোমবার বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।