Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Friday 21 November 2014

সাকিবের সেঞ্চুরিতে চ্যালেঞ্জিং স্কোর

ক্রীড়া প্রতিবেদক | আপডেট:
সেঞ্চুরির পর সাকিবের উদযাপনটাও হলো অসাধারণ! ছবি: শামসুল হকটসে হেরে প্রথম ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই বাংলাদেশের জোড়া ধাক্কা। ২৬ রানেই ফিরে গেলেন দুই ওপেনার। সেটি সামলে উঠতে না উঠতেই ৭০ রানে নেই চার ব্যাটসম্যান! এ বিপর্যয় থেকে দলকে উদ্ধার করে লড়াইয়ের পুঁজি দিলেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। সাকিবের সেঞ্চুরি ও মুশফিকের ফিফটিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ২৮১ রান।
শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে বেশ চাপেই পড়ে স্বাগতিকেরা। রান উঠতে থাকে ধীর গতিতে। ২৫ ওভার পর্যন্ত ওভারপ্রতি রান ছিল ৪–এর নিচে। এরপর সাকিব-মুশফিকের দৃঢ়তায় চ্যালেঞ্জিং স্কোর পায় বাংলাদেশ। প্রথম ১০০ রান আসে ১৫২ বলে, পরের ১০০ এসেছে ৮৭ বলে—শুরুতে কতটা চাপে ছিল বাংলাদেশ, এ থেকেই বোঝা যায়। শেষ ৯০ বলে বাংলাদেশ তুলেছে ১২৬ রান। শেষ দিকে বাংলাদেশের ১১৩তম খেলোয়াড় হিসেবে ওয়ানডেতে অভিষিক্ত সাব্বির রহমানের ২৫ বলে অপরাজিত ৪৪ রানের ঝোড়ো ইনিংসে বড় পুঁজি পায় বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ স্কোর।
বাংলাদেশের ইনিংসের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সাকিব। চার বছর পর ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি পেলেন বাঁ–হাতি অলরাউন্ডার। ওয়ানডেতে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এই প্রথম কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান পেলেন সেঞ্চুরি। শতক হাঁকানোর পার সাকিবের উদযাপনটাও হলো দেখার মতো। মুশফিকের সঙ্গে সাকিব পঞ্চম উইকেটে গড়লেন বাংলাদেশের পক্ষে রেকর্ড ১৪৮ রানের জুটি। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে যেকোনো জুটিতে এটিই সর্বোচ্চ রান। কামুনগোজির শিকার হওয়ার আগে সাকিবের সংগ্রহ ১০১।
সাকিব যদি হন প্রধান চরিত্র, মুশফিক তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্বচরিত্র। মুশফিককে অবশ্য ‘ভাগ্যবান’ই বলতে হবে আজ। তিনবার জীবন পেয়েছেন বাংলাদেশ দলের উইকেটরক্ষক। প্রথমবার ১৭ রানের মাথায় নিয়ুম্বুর বলে শর্ট কভারে চিগুম্বুরার হাতে, দ্বিতীয়বার বেঁচে যান চিগুম্বুরার নো–বলে। তৃতীয়বার চাতারার বলে পয়েন্টে দাঁড়ানো টেলরের হাতে। পানিয়াঙ্গারার বলে ফেরার আগে মুশফিকের সংগ্রহ ৬৫। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে তিন হাজারি ক্লাবে জায়গা করে নিলেন মুশফিক। সাকিব-মুশফিকের পর শেষদিকে আরেক চমকের নাম সাব্বির। ৩ চার ও ৩ ছক্কা হাঁকিয়ে ভালো স্কোর পেতে সাহায্য করেছেন এই তরুণ।
সাকিব-মুশফিকের বীরত্বের আগে টপ অর্ডারদের আত্মঘাতী শটের খেসারত হিসেবে শুরুতে বেশ বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। প্রথম চার ব্যাটসম্যানের তিনজনই নিজের উইকেটটি বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন প্রতিপক্ষের হাতে! তামিমের বলটি অবশ্য বেশ ভালো ছিল। তিনাশে পানিয়াঙ্গারার ভেতরে ঢোকা বল কাট করতে গিয়ে বোল্ড হন তামিম। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচেই তামিম ফিরেছিলেন মাত্র ৫ রানে। বোলার ছিলেন পানিয়াঙ্গারা। চট্টগ্রামে প্রথম ওয়ানডেতেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি! তামিম ফিরলেন ওই ৫ রানেই। বোলার সেই পানিয়াঙ্গারা! জিম্বাবুয়ের পক্ষে আজ সর্বোচ্চ ৩ উইকেট পেয়েছেন এ বোলারই।
এনামুলও আউট হলেন আত্মঘাতী এক শট খেলে। টেন্ডাই চাতারার বলটি অমন অদ্ভুত শট কেন খেলতে গেলেন, তা এনামুলই ভালো বলতে পারবেন! চিগুম্বুরার হাতে ধরা পড়ার আগে করলেন ১২ রান। মাহমুদউল্লাহ আউট হলেন আত্মঘাতী শট খেলে। চাতারার বলে অহেতুক শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ উঠিয়ে দিলেন মিড অনে দাঁড়ানো তাফাদজাওয়া কামুনগোজির হাতে। আগের দুই ব্যাটসম্যানের মতো মুমিনুলও যোগ দিলেন আত্মহননের মিছিলে! উইকেটে থিতু হয়েও কেন জন নিয়ুম্বুর অফস্টাম্পের বাইরের বল স্কুপ করতে গেলেন এ বাঁহাতি, তার উত্তর কোথায় মিলবে? ফেরার আগে মুমিনুলের সংগ্রহ ৩১ রান। সাকিবের সঙ্গে মুমিনুলের চতুর্থ উইকেট জুটিতে আসে ৩৯ রান।
সাকিব-মুশফিক জুটি ঘুরে দাঁড়ানোর পথ না দেখালে বাংলাদেশের সংগ্রহটা হয়তো এতটা ভদ্রস্থ হতো না। এখন আসল পরীক্ষা বাংলাদেশের বোলারদের। কারণ, কেবল জিম্বাবুয়ে নয়; বোলারদের আরেক ‘প্রতিপক্ষ’ যে শিশিরও! তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে এর আগে কখনো এত রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড নেই জিম্বাবুয়ের। এই পরিসংখ্যান আশ্বস্ত করতেই পারে।