Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Wednesday 31 December 2014

মানবতাবিরোধী অপরাধে ১৫ মামলার রায় ঘোষিত : ২টি’র রায় ঘোষণার অপেক্ষায়


ঢাকা, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪ (বাসস) : মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ পর্যন্ত ১৫ মামলায় রায় ঘোষণা করেছে। এছাড়া আরো ২টি মামলার রায় ঘোষণা অপেক্ষমান (সিএভি) রয়েছে।
রায় ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা ২ মামলার আসামিরা হলেন-জামায়াতের নায়েবে আমীর আব্দুস সুবহান ও জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার (পলাতক)।
ট্রাইব্যুনালের জ্যেষ্ঠ প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী বাসস’কে এ তথ্য জানান।
এছাড়াও মানবতাবিরোধী অপরাধে ট্রাইব্যুনালে আরো ৪ মামলায় ৭ আসামির বিরুদ্ধে বিচার কাজ চলছে। এসব মামলার আসামিরা হলেন- বাগেরহাটের শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ ও খান আকরাম হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সৈয়দ মোঃ হাসান আলী ওরফে হাছেন আলী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটু এবং পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিক। এদের মধ্যে আসামি হাসান আলী পলাতক, অন্যরা কারাগারে রয়েছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গতকাল মঙ্গলবার ৩০ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে ট্রাইব্যুনাল ১৫ তম রায় ঘোষণা করেছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আপিল করবে বলে জানায়।
২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি প্রথম রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ দিয়ে প্রথম রায় ঘোষণা করা হয়। পলাতক থাকায় তিনি আপিলের সুযোগ পাননি। এর পর একই বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। আপিলে গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ এ মামলার চুড়ান্ত রায়ে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড দেয়। যা গত বছর ১২ ডিসেম্বর কার্যকর করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের তৃতীয় রায়ে গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশ হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের রায়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর তার সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদন্ডের আদেশ দেয় আপিল বিভাগ। গত বছর ৯ মে চতুর্থ রায়ে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদন্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শেষে কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল রেখে গত ৩ নভেম্বর রায় দেয় সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।
পঞ্চম রায়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতের আমীর গোলাম আযমকে গত বছর ১৫ জুন ৯০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি অপেক্ষমান থাকাবস্থায় গত ২৩ অক্টোবর কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। গত বছর ১৭ জুলাই ষষ্ঠ রায়ে জামায়াতের বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিল সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির জন্য অপেক্ষমান রয়েছে।
গত বছর ১ অক্টোবর সপ্তম রায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসির রায় হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিলও শুনানির জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। গতবছর ৯ অক্টোবর বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমকে আমৃত্যু কারাদন্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। দন্ড ভোগ করা অবস্থায় ৮৩ বছর বয়সে গত ৩০ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন তিনি। বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ৭১’ এর দুই আল-বদর নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে গতবছর ৩ নভেম্বর মৃত্যুদন্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। তারা দুজনেই পলাতক রয়েছেন। ফলে তারা আপিলের সুযোগ পাননি।
দশম রায়ে গত ২৯ অক্টোবর জামায়াতের বর্তমান আমীর মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ি আপিল করা হয়েছে। একাদশ রায়ে গত ২ নভেম্বর জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদন্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে।
গত ১৩ নভেম্বর ঘোষিত ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র ও বিএনপি নেতা পলাতক জাহিদ হোসেন ওরুফে খোকন রাজাকারকে মৃত্যুদন্ড রায় দেয় ট্রাইব্যুনাল। এটি ছিলো দ্বাদশ রায়। ব্রাম্মনবাড়ীয়ার মোবারক হোসেনকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে গত ২৪ নভেম্বর ঘোষিত রায় ট্রাইব্যুনালে দেয়া ১৩তম রায়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষে আপিল দায়ের করা হয়েছে। সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর টাইব্যুনাল ১৪ তম রায় ঘোষনা করেছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামির আইনজীবীরা আপিল দায়ের করবে বলে জানায়।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুস্টিত নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম প্রধান অঙ্গিকার ছিলো যুদ্ধপরাধীদের বিচার করা। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন মহাজোট দুই তৃতীয়াংশের বেশী আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। সরকার গঠনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশনেই যুদ্ধপরাধীদের বিচারে সর্বসম্মত প্রস্তাব গৃহীত হয়। এরপর ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল, তদন্তকারী সংস্থা ও প্রসিকিউশন টিম গঠন করা হয়। প্রথমে ১টি ট্রাইব্যুনালে এ বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরে এ বিচারকে তরান্বিত করতে ২০১২ সালের ২২ মার্চ আরো একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। বিচারিক কার্যক্রম শেষে ট্রাইব্যুনাল-১এ ৭টি ও ট্রাইব্যুনাল-২ এ ৮টি মামলার রায় ঘোষনা করা হয়।
আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় সরকার গঠনের পর ট্রাইব্যুনালে ৬টি ও আপিলে ২টি মামলায় রায় ঘোষণা করা হয়।