Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Friday 18 April 2014

অপহরণের বর্ণনা দিলেন আবু বকর

অপহরণের বর্ণনা দিলেন আবু বকর
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ধানমণ্ডির সেন্ট্রাল রোডে বাসভবনে সাংবাদিকদের কাছে অপহরণের বর্ণনা দিলেন তিনি।
সমকাল প্রতিবেদক
অপহরণের বর্ণনা দিলেন আবু বকরঅপহরণকারী দলের কাছ থেকে মুক্ত হয়ে শুক্রবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে জবানবন্দি শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিক।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ধানমণ্ডির সেন্ট্রাল রোডে বাসভবনে সাংবাদিকদের কাছে অপহরণের বর্ণনা দিলেন তিনি। এ সময় তার পাশে বসে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
বুধবার থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনা সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন আবু বকর সিদ্দিক।
বুধবার দুপুর ২টা। ফতুল্লার আমার অফিস (হামিদ ফ্যাশন) থেকে গাড়ি নিয়ে  বের হয়ে পোস্ট অফিস থেকে শিবু মার্কেট পর্যন্ত কুতুবআইল সড়ক দিয়ে বের হয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোডে উঠি। আমার লাল রঙের প্রাইভেটকারটি লিঙ্ক রোডের ভূঁইগড়ের সামনে পৌঁছালে পেছন থেকে একটি নীল রঙের হাইয়েস মাইক্রোবাস গাড়িটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এ সময় আমি ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলি। পেছনে নীল রঙের মাইক্রোবাসটিও থামে। মাইক্রোবাস থেকে ৫-৬ জন নেমে আসে। এ সময় আমি গাড়ি থেকে নেমে ধাক্কা দেওয়ার কারণ জানতে মাইক্রোবাসের দিকে অগ্রসর হই। তখন মাইক্রোবাস থেকে ২ জন নেমে চালকের চোখে কিছু একটা ছিটিয়ে দেয়। এরপর তারা আমাকে গাড়িতে তুলে নেয়।
গাড়িতে উঠিয়ে আমার হাত-পা, মুখ ও চোখ বেঁধে পেলে। গাড়িতে করে তারা আমাকে একটি বাসায় নিয়ে যায়। তখনও আমার চোখ খোলা হয়নি। সেখানে রাত ১০টায় 'বড় ভাই' পরিচয়ে একজন লোক এসে আমাকে নানা কথা জিজ্ঞেস করেন। কোথায় চাকরি করি ও কত টাকা বেতন পাই তা জানতে চান।
'বড় ভাই' পরিচয়ে ওই লোক বলেন, "মিডিয়াতে তোর নামে এতো প্রচার হচ্ছে। তুই কি এমন বিখ্যাত ব্যক্তি হয়ে গেছিস।"
বুধবার রাত ও বৃহস্পতিবার পুরো সময় ওই বাসায় আমার চোখ বাঁধা ছিল। শুধু টয়লেটে যাওয়ার সময় চোখ খুলে দেয়া হতো। চোখ বাঁধা থাকার কারণে ওই বাসার পরিবেশ কেমন তা দেখা যায়নি। তবে টয়লেটের পরিবেশ খুব নোংরা ছিল।
অপহরণকারীরা আমাকে কোনো ধরনের নির্যাতন করেনি। একজন সময় মতো আমাকে খাবার দিয়ে যেত। আমি তাদের সঙ্গে আন্তরিক ব্যবহার করেছি। তারাও আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি।
আমাকে নিয়ে বাইরে কি হচ্ছে কিংবা মিডিয়ায় যে এতো প্রচার হচ্ছে তা ওই বাসায় বসে আমি বুঝতে পারিনি।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে 'বড় ভাই' পরিচয়ে ওই লোক আবার বাসায় আসেন। তিনি আমাকে বলেন, "তোকে ছেড়ে দিলেও আমাদের লস, মের ফেললেও লস। সুতারাং তোকে আমার ছেড়েই দেবো।"
তখন আমাকে একটি গাড়িতে করে মিরপুর আনসার ক্যাম্পের সামনে এনে ছেড়ে দেয় তারা। তারা আমার হাতে ৩০০ টাকাও দিয়ে যায়। গাড়ি থেকে নেমে নিজেই নিজের বেঁধে রাখা চোখ খুলি। প্রথম ১০ মিনিট কিছুই দেখতে পাইনি।
এরপর একটি রিকশায় করে কাজীপাড়া তারপর পথে আরেকটি সিএনজি নিযে বাসার উদ্দেশে রওয়ান হই।
পথে রাত দেড়টার দিকে কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডে বসানো চেকপোস্টে পুলিশ সিএনজি থামিয়ে পরিচয় জানতে চান। পরিচয় জানার পর আমাকে ধানমণ্ডি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, বুধবার দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোডে ভূঁইয়া ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিককে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা।
অপহরণের ঘটনার পর থেকেই রাজধানীর আশপাশ এলাকার বিভিন্ন সড়কে বসানো হয় অতিরিক্ত চেকপোস্ট। চলে ব্যাপক অভিযান।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও র‌্যাবের একাধিক দল ঘটনার পরপরই ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ ছুটে যায়। বুধবার বিকেল থেকেই অনেক এলাকায় শুরু হয় অভিযান।
পুলিশের পক্ষ থেকে দেশের সব থানা, সীমান্ত এলাকা, নৌ ও  বিমানবন্দরে সতর্ক বার্তা পাঠানো হয়। মাঠ পর্যায়ে তল্লাশির পাশাপাশি প্রযুক্তির সহায়তা নিয়েও চলে অনুসন্ধান।