Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Wednesday 19 March 2014

নবম সংসদে ১০৪ কোটি টাকার সময় নষ্ট

নবম সংসদে সাংসদদের কোরাম সংকটের কারণে মোট ২২২ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট সময় নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এর অর্থমূল্য প্রায় ১০৪ কোটি টাকা। টিআইবির 'পার্লামেন্ট ওয়াচ' প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়েছে, 'বর্তমান জাতীয় সংসদে বাস্তব অর্থে কোনো বিরোধী দল নেই।
সমকাল প্রতিবেদক
নবম সংসদে ১০৪ কোটি টাকার সময় নষ্টনবম সংসদে সাংসদদের কোরাম সংকটের কারণে মোট ২২২ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট সময় নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এর অর্থমূল্য প্রায় ১০৪ কোটি টাকা। টিআইবির 'পার্লামেন্ট ওয়াচ' প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়েছে, 'বর্তমান জাতীয় সংসদে বাস্তব অর্থে কোনো বিরোধী দল নেই। যে বিরোধী দল আছে, তা কেবলই আক্ষরিক।'
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে টিআইবি। 'পার্লামেন্ট ওয়াচ' প্রতিবেদনটি তৈরি করেন টিআইবির গবেষক মোর্শেদা আক্তার ও জুলিয়েট রোজেটি। টিআইবি বলছে, সংসদে কোরাম সংকটের কারণে যে সময় নষ্ট হয়েছে, এর অর্থমূল্য প্রায় ১০৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে নবম জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ৪১৮ কার্যদিবসের মধ্যে ৩৪২ কার্যদিবস সংসদ বর্জন করায় এর অর্থমূল্য ছিল প্রায় ৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সংসদের ইতিহাসে রেকর্ড সংখ্যক দিন তারা অনুপস্থিত থেকেও আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নবম সংসদে আইন প্রণয়নে মোট সময়ের মাত্র আট ভাগ ব্যয় করা হয়েছে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইন মাত্র তিন থেকে চার মিনিটের আলোচনায় পাস হয়েছে।প্রতিবেদনে জানানো হয়, 'প্রধান বিরোধী দলের নেতা মাত্র ২ দশমিক ৩৯% সময় উপস্থিতির মাধ্যমে সর্বনিম্ন উপস্থিতির নতুন রেকর্ড স্থাপন করেন। সংসদ অধিবেশন পরিচালনায় প্রতি মিনিটে গড় ব্যয় প্রায় ৭৮ হাজার টাকা হিসাবে প্রতি কার্যদিবসের গড় কোরাম সংকটের সময়ের অর্থমূল্য প্রায় ২৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকা এবং সংসদের পূর্ণ মেয়াদে কোরাম সংকটের মোট অর্থমূল্য প্রায় ১০৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'বর্তমান জাতীয় সংসদে বাস্তব অর্থে কোনো বিরোধী দল নেই। যে বিরোধী দল আছে, তা কেবলই আক্ষরিক।' সংসদের এই পরিস্থিতিকে সাময়িক হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। জাতীয় পার্টির ভূমিকা নিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আক্ষরিক অর্থে তারা বিরোধী দল। তাদের ভূমিকায় বাস্তবে আমরা তা অনুধাবন করতে পারি না। বিরোধী দল মানে বিরোধী দল হবে। বাস্তব অর্থে এ সংসদে বিরোধী দল আছে_ তা বলতে পারি না।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতেই ৫ জানুয়ারি ভোট হয়েছে। ওই সময় রাজনৈতিক মহল থেকে বলা হয়েছে_ দশম সংসদ নির্বাচন করে একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে। রাজনীতিকদের সে প্রতিশ্রুতির ধারাবাহিকতায় এ সংসদ 'সাময়িক' হবে বলে আশা টিআইবির নির্বাহী পরিচালকের। একাদশ সংসদ নির্বাচন হলে বিরোধী দলবিহীন সংসদের 'সংস্কৃৃতি'র বিলুপ্তি ঘটবে বলে মনে করছেন তিনি। দশম সংসদ নির্বাচনের পরে একাদশ সংসদ খুব দ্রুত করার জন্য আলোচনা হবে বলে রাজনীতিবিদরা বলেছেন। এখন এ আলোচনা কখন হবে তা রাজনৈতিক বিষয়। ৫ বছরের মধ্যে যে কোনো সময় তা হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, শিগগিরই সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্রে যে ধরনের সংসদ থাকা উচিত, সে ধরনের সংসদ বহাল হবে। এই সময়টা হচ্ছে আজ থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে যে কোনো দিন। তবে যত শিগগিরই এটা কার্যকর হবে, তত দ্রুত জনগণের কাছে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে।টিআইবির ট্রাস্টি এম হাফিজ উদ্দিন বলেন, শুধু রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে জাতীয় সংসদ কার্যকর হচ্ছে না।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, নবম সংসদে বিভিন্ন ইতিবাচক দিকের মধ্যে রয়েছে সদস্যদের গড় উপস্থিতির হার অষ্টম সংসদের তুলনায় ৬৩%-এ বৃদ্ধি পাওয়া, অপ্রাসঙ্গিক আলোচনার সুযোগ হ্রাস পাওয়া, প্রথম অধিবেশনেই সব সংসদীয় কমিটি গঠিত হওয়াসহ চারটি কমিটির সভাপতি বিরোধী দল থেকে নির্বাচন করা, সংসদীয় কমিটির বৈঠকে নিয়মিত অংশগ্রহণ, অধিবেশনে বিলের ওপর সংশোধনী, যাচাই-বাছাই প্রস্তাবের ক্ষেত্রে সরকারি দলের পাশাপাশি প্রধান বিরোধী দলের সক্রিয় অংশগ্রহণ ইত্যাদি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের ক্রমাগত অনুপস্থিতির কারণে এসব ইতিবাচক অর্জন ধরে রাখা যায়নি। যেমন অনুপস্থিতির কারণে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের দেওয়া প্রস্তাবগুলো সংসদে উত্থাপিতই হয়নি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি দলের সংসদ সদস্যের মধ্যে শতকরা ৪৬ দশমিক ৯ ভাগ সদস্য অধিবেশনের তিন-চতুর্থাংশের বেশি অর্থাৎ মোট কার্যদিবসের ৭৫ শতাংশের বেশি উপস্থিত ছিলেন সংসদে। প্রধান বিরোধী দলের সদস্যদের সবাই ১৯টি অধিবেশনের মোট কার্যদিবসের এক-চতুর্থাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ বা তার কম কার্যদিবস উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রধান বিরোধী দলের সংসদ বর্জনের ক্ষেত্রে পঞ্চম সংসদে এই হার ছিল প্রায় ৩৪%, অষ্টম সংসদে তা বেড়ে হয় ৬০% এবং নবম সংসদে তা পূর্বের সব রেকর্ড অতিক্রম করে ৮২%-এ দাঁড়ায়। এই সময়ে মোট ২৭১টি বিল পাস করা হয়, যার ২৬৮টি সরকারি বিল এবং ৩টি বেসরকারি। তবে সংসদ সদস্য কর্তৃক বিলের ওপর জনমত যাচাই-বাছাইয়ের প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হওয়ার পূর্বেকার চর্চা অব্যাহত ছিল। প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংসদের মোট সময়ের ৮ দশমিক ২% সময় আইন প্রণয়নে ব্যয় হয়েছে এবং একটি বিল পাসের ক্ষেত্রে গড়ে মাত্র ১২ মিনিট সময় ব্যয় হয়েছে।নবম সংসদে ৫৩টি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ও ১৮৩টি উপকমিটি গঠন করা হয়। ৪৫টি কমিটি মোট ১০১টি প্রতিবেদন দিয়েছে। এর মধ্যে ২২টি কমিটির ৪ হাজার ৯৩৫টি সুপারিশের বিপরীতে মোট ১ হাজার ৭৮৭টি (৪৩ দশমিক ১৭%) সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়েছে। ২৩টি কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে সংসদীয় কার্যক্রমে জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি এবং সংসদীয় কমিটির কার্যকরতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত ২১ দফা সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুপারিশ হলো :সংসদ বর্জনের সংস্কৃৃতি প্রতিহত করার লক্ষ্যে আইন প্রণয়ন করে দলীয় বা জোটগতভাবে সংসদ বর্জন নিষিদ্ধকরণ, এ ক্ষেত্রে দলীয়ভাবে সদস্যপদ বাতিলের বিধান প্রণয়ন; সংসদ অধিবেশনে অনুপস্থিত থাকার সর্বোচ্চ সময়সীমা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে উদাহরণস্ব্বরূপ ৩০ কার্যদিবস করার বিধানসহ অনুমোদিত ছুটি ব্যতীত একটানা ৭ দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকা নিষিদ্ধ করা; সংসদ সদস্য আচরণবিধি বিল-২০১০ চূড়ান্ত অনুমোদন ও আইন হিসেবে প্রণয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।