প্রতিবাদ করে আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাচ্ছে গ্রামীণফোন এমপ্লয়ি ইউনিয়ন
ইউনি গ্লোবাল ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফিলিপ জে জেনিন্স গত ১৮ অক্টোবর লিখিত এক চিঠিতে এই পুরষ্কারের খবর জিপি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুর রহমান মাসুদকে জানিয়েছেন।
চিঠিতে ফিলিপ জে জেনিন্স জানিয়েছেন, গত বছর আড়াইশ কর্মী ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে সংগঠনটি যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল তার কারণেই সেরাদের সেরা নির্বাচিত করা হয়েছে।
আন্দোলনের মাধ্যমে কোম্পানির মুনাফার ৫ শতাংশ কর্মীদের দেওয়ার দাবি আদায়ের বিষয়টিও জিপিইইউয়ের সাংগঠনিক কার্যত্রক্রমকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে।
আগামী ১২-১৩ নভেম্বর আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে ইউনির নির্বাহী বোর্ডের বৈঠকে এ পুরষ্কার দেওয়া হবে।
জানা গেছে, ২০১২ সালের মে মাসে প্রায় ২৫০ জন কর্মীকে ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয় গ্রামীণফোন। এর প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। সে সময় জন্ম হয় গ্রামীণফোন এমপ্লয়ি ইউনিয়ন বা জিপিইইউ।
তৎকালীন এই নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ জানায়, ছাঁটাই নয় পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে অতিরিক্ত কর্মী প্রতিষ্ঠান থেকে বাদ পড়ছেন এবং নিয়ম অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য সব সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
কর্মী অসন্তোষের ঘটনায় তখন বিটিআরসি চেয়ারম্যান জিয়া আহমেদ (প্রায়ত) গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টোরে জনসনের সঙ্গে কথা বলেন।
তিনি পরে সাংবাদিকদের জানান, গ্রামীণফোনের সিইওর সঙ্গে আলোচনায় কর্মচারী বিক্ষোভের ঘটনায় কোনো সিদ্ধান্তে আসতে ধীর গতিতে এগুতে বলা হয়েছে এবং পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য বলা হয়েছে।
গ্রামীণফোনের আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০৯ সালে বেতন-ভাতা বাবদ প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় হয়েছে ৪৪৯ কোটি ১ লাখ ৮৬ হাজার ৫১০ টাকা।
২০১০ সালে এ খাতে খরচ হয় ৬২৭ কোটি ১৯ লাখ ৩৫ হাজার ৪৪০ টাকা। ২০১১ সালে তা বেড়ে হয় ৬৯১ কোটি ১০ লাখ ৬৩ হাজার ২৫২ টাকা।
অর্থাৎ ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানের জনবলের বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় আগের বছরের চেয়ে ১৭৮ কোটি ১৭ লাখ ৪৮ হাজার ৯৩০ টাকা বেড়ে যায়। ২০১০ সালের তুলনায় ২০১১ সালে এ ব্যয় বেড়েছে ৬৩ কোটি ৯১ লাখ ২৭ হাজার ৮১২ টাকা।
সামগ্রিকভাবে সাধারণ ও প্রশাসনিক ব্যয় বাড়ছে গ্রামীণফোনের। ২০০৯ সালে এ খাতে ব্যয় ছিল ১ হাজার ১৭৪ কোটি ৬৭ লাখ ২১ হাজার ৫৬৮ টাকা।
২০১০ সালে ছিল ১ হাজার ৮৫৮ কোটি ৩১ লাখ ৯৪ হাজার ৪৩৩ এবং ২০১১ সালে ১ হাজার ৮৩১ কোটি ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার ২৯০ টাকা।
২০১১ সালের মাঝামাঝি থেকে বাড়তি ব্যয় কমিয়ে আনার দিকে নজর দেয়ায় প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ ও প্রশাসনিক ব্যয় আগের বছরের চেয়ে কিছুটা কমে আসে।
ব্যয়সংকোচনের অংশ হিসেবে শুরু হয় প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের আকার ছোট করা। একই সঙ্গে কোনো কোনো বিভাগের একত্রীকরণও করে প্রতিষ্ঠানটি।
২০১২ সালের মে মাসে ২৫০ কর্মী ছাঁটাই নিয়ে শুরু হয় হুলুস্থুল কাণ্ড। এর আগে ২০০৯ সালে একসঙ্গে প্রায় ১৫০০ কর্মী ছাঁটাই করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে গ্রামীণফোন।
ছাঁটাই হওয়া এসব কর্মীর প্রতিবাদ-আন্দোলনের মুখে তাদের পুনর্নিয়োগের ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের জন্য নবগঠিত এ সংগঠনটি আন্তর্জাতিক সংস্থার পুরষ্কার পেতে চললেও এখন পর্যন্ত গ্রামীণফোনের স্বীকৃতি পায় নি।
উল্টো জিপিইইউকে চ্যালেঞ্জ জানাতে গ্রামীণফোন পিপলস কাউন্সিল (জিপিপিসি) নামে অপর একটি সংগঠনের জন্ম দিয়েছে অপারেটরটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
তবে চলতি বছর মে মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কর্তৃপক্ষের পৃষ্ঠপোষক প্যানেলের সকলেই জিপিপিসির নির্বাচনে হেরে বসে।
বরং জিপিইইউর নেতারাই পূর্ণ প্যানেলে জয়ী হওয়ায় নতুন সংগঠনেরও দখল পেয়ে যায়। অথচ গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষের বিরোধীতার কারণে জিপিইইউ এখনও সরকারের নিবন্ধন পায়নি।
সরকার ২০১০ সালে মুনাফার ৫ শতাংশ কর্মীদের দেওয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। আর চলতি বছর শ্রম আইন সংশোধনের সময় এটি আইনের অর্ন্তভূক্ত করা হয়।
একই সঙ্গে সংগঠন করার বিষয়টি আইনে সংরক্ষিত থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠানেই সংগঠন গঠন করতে পারছেন না কর্মীরা।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের বিভিন্ন সেবা খাতের ২ কোটি কর্মীর সমন্বয়ে গঠিত ইউনি গ্লোবাল নামের ইউরোপভিত্তিক সংগঠনটি জিপিইইউকে এ পুরষ্কার দিচ্ছে।