Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Monday 21 October 2013

নির্বাচনকালীন সরকারের পাল্টা প্রস্তাব খালেদার

নির্বাচনকালীন সরকারের পাল্টা প্রস্তাব খালেদার

@prothom-alo
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন খালেদা জিয়া১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারে থাকা ২০ উপদেষ্টার মধ্যে থেকে ১০ জনের সমন্বয়ে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, ওই ২০ জন থেকে আওয়ামী লীগ পাঁচ জন এবং বিএনপি পাঁচ জনের নাম প্রস্তাব করবে। সর্বজন গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিকে ওই সরকারের প্রধান করা হবে। প্রয়োজনে তাঁদের এই সংসদ ভেঙ্গে যাওয়ার আগে নির্বাচিত করে আনা যেতে পারে, যেভাবে সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচন করা হয়।

১৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবের তিনদিনের মাথায় পাল্টা এই প্রস্তাব তুলে ধরলেন বিরোধীদলীয় নেতা। আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া তাঁর এই নতুন প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর এই প্রস্তাব গ্রহণ করবেন এবং দ্রুত আলোচনার উদ্যোগ নেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
খালেদা জিয়া তাঁর বক্তব্যে আগামীতে ক্ষমতায় গেলে নতুন ধারার রাজনীতি করা, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ও আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। ‘অতীতের ভুল’ সামনে আর না করারও অঙ্গীকার করেন। আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সরকার কেমন হবে তারও একটি ধারণা দেন দলের চেয়ারপারসন।
সংবাদ সম্মেলন হলেও এখানে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন করাার সুযোগ ছিল না।
প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য হয়নি
প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় সরকারের যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা ‘গ্রহণযোগ্য হয়নি’ দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় সরকারের যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা অষ্পষ্ট। সে সরকারের প্রধান কে হবেন তা খোলাসা করেননি। এই প্রস্তাবে সংশয় রয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী সংসদ বহাল রেখে, প্রশাসনকে কুক্ষিগত রেখে অসম প্রতিযোগীতার আহ্বান জানাচ্ছেন বলে দাবি করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের গণদাবি সম্পর্কে কোনো আলোচনার অবকাশ না রেখে একতরফাভাবে শুধু নিজের সুবিধা অনুযায়ী একটি প্রস্তাব তুলেছেন। তিনি কেবল নির্বাচনের তারিখ নিয়ে বিরোধীদলের পরামর্শ চেয়েছেন। তাঁর এ বক্তব্যে জাতি হতাশ হয়েছে। আমি এখনো মনে করি, আলোচনার মাধ্যমেই বিষয়টির সুরাহা করা দরকার।’
খালেদা জিয়া বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা অক্ষুণ্ন্ন রেখে শান্তিপূর্ণ পথে ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করতে হলে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সকল দলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের কেনো বিকল্প নেই। এই জন্যই তাঁরা জাতীয় নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি তুলেছেন। এ দাবি এখন জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে।
খালেদা জিয়া বলেন, সরকার জনগণের দাবির প্রতি সম্মান দেখাবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রত্যাশার অনুকূলে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে বলে তাঁরা আশা করেছিলেন। কিন্তু সরকারের অনড় অবস্থান এবং জনসাধারণ ও বিরোধীদলের প্রতি যুদ্ধংদেহী আচরণ সকলকে হতাশ করেছে।
ভুলের পুনরাবৃত্তি নয়
অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এসব ভুল না করার অঙ্গিকার করেন বিরোধীদলীয় নেতা। তিনি বলেন, ‘মানুষ ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। একথা স্বীকার করতে আমার কোনো দ্বিধা নেই যে, অতীতে আমাদেরও ভুল-ভ্রান্তি হয়েছে। তবে একই সঙ্গে আমি বলতে চাই যে, আমরা ঐসব ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছি। আগামীতে একটি উজ্জল, অধিক স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে আমরা ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। আমি সেই প্রবচনের সঙ্গে একমত যে, ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। তাই আমরা অতীতের ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি করবো না।’
ক্ষমা ঘোষণা
খালেদা জিয়া বলেন, পরিবর্তনের কথা কেবল মুখে বলাই যথেষ্ট নয়। কেননা এদেশের জনগণ অতীতেও পরিবর্তনের অঙ্গীকার রাজনীতিকদের কণ্ঠে শুনেছে। তাই তিনি ‘একটি কথা বলে’ পরিবর্তনের সূচনা করতে চান। তাঁকে যারা ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন তাদের তিনি ‘ক্ষমা ঘোষণা’ করেন।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করছি যে, যারা আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অতীতে নানা রকম অন্যায়-অবিচার করেছেন, ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন এবং এখনো করে চলেছেন, আমি তাদের প্রতি ক্ষমা ঘোষণা করছি। আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম। সরকারে গেলেও আমরা তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধ নেবো না। আমি কথা দিচ্ছি, আমার দৃষ্টি নিবন্ধ থাকবে বাংলাদেশের জন্য একটি উজ্জল ও অধিক নিরাপদ ভবিষ্যত নিশ্চিত করার কাজে। প্রতিশোধ নেওয়ার, প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার মতো কোনো ইচ্ছা ও সময় আমার নেই। আমি প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা মেটাবার জন্য কোনো সময় ব্যয় করবো না।’
বিএনপি চেয়ারপারসন দাবি করেন, তাঁর কাছে প্রধানমন্ত্রী, তাঁর পরিবারের সদস্যবর্গ ও আত্মীয়-স্বজন সম্পর্কে বিস্তর অভিযোগ ও তথ্য থাকা সত্বেও এ নিয়ে তিনি কোনো কথা বলতে চান না। খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি মনে করি, অনেক হয়েছে। বাংলাদেশের সুরুচিবান মানুষ আর এসব শুনতে চান না।’
সরকার হবে জাতীয় ঐক্যের
খালেদা জিয়া জানিয়েছেন আগামীতে তাঁর দল যে সরকার গঠন করবে তা হবে সব ‘নাগরিকের প্রতিনিধিত্বকারী সরকার’। মেধা ও মনণশীলতার সরকার। জাতীয় ঐক্যের সরকার। ‘যারা সমাজের জন্য অবদান রাখতে পারেন, যারা দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনেন, যারা সত্-যোগ্য-দক্ষ, যারা সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারেন, যারা নেতৃত্ব দিতে পারেন, রাজনৈতিক মত-ধর্ম-নৃতাত্ত্বিক পরিচয় নির্বিশেষে সেই সব মেধাবী ও যোগ্য নাগরিকদের’ আগামী দিনের জাতীয় ঐক্যের সরকারের সঙ্গে কাজ করার আগাম আমন্ত্রণ জানান খালেদা জিয়া।
বাংলাদেশের মাটি সন্ত্রাসীদের জন্য নয়
আওয়ামী লীগের আমলে বিভিন্ন বোমা হামলার ঘটনার উল্লেখ করে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিস্তার আওয়ামী লীগের বিগত সরকারের আমলেই ঘটেছিল। আওয়ামী লীগ কোনো বিচার করেনি। বিএনপি ক্ষমতায় এসে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে সৃষ্ট এই জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস আমাদের সরকারের আমলেও অব্যাহত ছিল। তবে আমরা জঙ্গীদের সনাক্ত করতে সক্ষম হই। তাদের সংগঠন ও তত্পরতা নিষিদ্ধ করি। শীর্ষ জঙ্গীনেতাদের গ্রেপ্তার ও তাদের বিচারের ব্যবস্থা করি। আমাদের সরকারের আমলেই শীর্ষ জঙ্গীদের বিচারে মৃত্যুদণ্ড হয়, পরে তা কার্যকর করা হয়েছে। আমাদের সর্বাত্মক প্রয়াসে জঙ্গীবাদের নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ ভেঙ্গে দেওয়া সম্ভব হয়।’
বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, আগামীতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী লড়াই শুধু অব্যাহতই থাকবেই না, সন্ত্রাস বিরোধী আন্তর্জাতিক কোয়ালিশনের সক্রিয় সদস্য হিসেবে অন্যান্য দেশ ও সংস্থার সঙ্গে মিলে এই সহযোগিতা বাড়াবার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের মাটিকে দেশীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অথবা অন্য কোনো ধরনের সন্ত্রাসী তত্পরতায় কখনো ব্যবহার করতে না দেওয়ার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ।’
আঞ্চলিক সহযোগিতা
আগামীতে আঞ্চলিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপর গুরুত্বারোপ করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণের সমর্থনে আগামীতে সরকারে গেলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে মিলে আমরা একযোগে কাজ করব। বিদ্যমান সম্পর্ক বহাল রাখার পাশাপাশি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক খাতে সহযোগিতা বাড়াবার নতুন পথের সন্ধান আমরা করবো।’
শান্তি, স্থিতি, নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক সহযোগিতা এই অঞ্চলের জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন ও বিকাশের ভিত্তি উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, কোনো দেশ ও অঞ্চলই এখন আর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে থাকতে পারে না। তাই আমাদেরকে বিশ্ব-সমাজের শরিক হিসেবে ভূমিকা ও অবদান রাখতে হবে। বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হলে দক্ষিণ এশিয়া অস্থিতিশীল হবে। আর দক্ষিণ এশিয়া অস্থিতিশীল হলে বিশ্বসমাজে তার প্রভাব পড়বে। সে কারণেই আমরা এমন নীতি গ্রহণ করবো যা দেশের এবং আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা জোরদার করবে। শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ এক বিশ্বসমাজ গড়ে তুলতে বাংলাদেশ ও আমাদের প্রতিবেশি সকল দেশ যাতে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে আগামীতে আমাদের সরকার সে-ভাবেই কাজ করবে।’