Tuesday, 3 December 2013

প্রার্থী ১ হাজার ১০৭ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ৪০, অংশগ্রহণকারী ১৫

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
প্রার্থী ১ হাজার ১০৭
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ৪০, অংশগ্রহণকারী ১৫
সমকাল প্রতিবেদক
অব্যাহত রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য সারাদেশের ৩০০ আসনে ১ হাজার ১০৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। গতকাল সোমবার মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন পর্যন্ত ৬৪ জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন তারা। বিরোধী দলের টানা অবরোধের কারণে কোথাও কোথাও প্রার্থীদের প্রতিরোধের মুখে পড়তে হলেও অধিকাংশ আসনেই মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশের সূচনা হয়েছিল।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের
নির্বাচন বর্জনের মুখেই গতকাল মনোনয়নপত্র জমাদানের কার্যক্রম শেষ হয়। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি), জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, ন্যাপসহ নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত ৪০টির মধ্যে ১৫টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। প্রার্থীরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে সর্বাধিক ২৯৭ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে বিভিন্ন আসনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগের কমপক্ষে ৫০ জন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
জাতীয় পার্টির ২৬১ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। জাতীয় পার্টি থেকেও প্রায় অর্ধশত নেতা বিভিন্ন আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তবে এবার ২৯৯ আসনে প্রার্থী দিলেও শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির ৩৮ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি বলে জাপার একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে কোনো প্রার্থী দেয়নি জাপা।
এ ছাড়া জেপি থেকে ১২০ জন, জাসদ থেকে শতাধিক, ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে ৩১ জন, ন্যাপ থেকে ১৫ জন এবং গণতন্ত্রী পার্টি থেকে দু'জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। অন্য দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের সদ্য নিবন্ধন পাওয়া বহুল আলোচিত বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), তরীকত ফেডারেশন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ফ্রন্ট, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, গণফ্রন্ট এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন চার শতাধিক। নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও বিভিন্ন স্থানে বিএনপির বর্তমান ও সাবেক এক ডজন নেতাও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অবশ্য নির্বাচন বর্জনকারী ১৮ দলীয় জোটের বাইরের দলগুলোর মধ্যে গণফোরাম, বিকল্পধারা, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), সিপিবি, বাসদসহ অনেক দলও এ নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি।
এদিকে, অন্য কোনো প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে রয়েছেন সাতজন প্রার্থী। তাদের সবাই আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দুটি আসন গোপালগঞ্জ-৩ ও রংপুর-৬ থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য শেখ হাসিনার পক্ষে মনোনয়নপত্র রিটার্নিং অফিসার ও রংপুরের জেলা প্রশাসক ফরিদ আহাম্মেদের কাছে জমা দেওয়া হয়। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এ মনোনয়নপত্র জমা দেন। শেখ হাসিনার পক্ষে গোপালগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন স্থানীয় নেতারা। তিনি বর্তমানে ওই আসনের সংসদ সদস্য। অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জমা দিয়েছেন তিনটি আসনে। তার আসনগুলো হচ্ছে ঢাকা-১৭, লালমনিরহাট-১ ও রংপুর-৩। তার পক্ষেও স্থানীয় নেতারা এসব আসনে মনোনয়ন জমা দেন।
অন্য দলগুলোর প্রধানদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল শরিক জাসদের সভাপতি তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু কুষ্টিয়া-২ এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ঢাকা-৮ আসনে প্রার্থী হয়েছেন। জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পিরোজপুর-২ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ঢাকা-১৭, হাসানুল হক ইনুর কুষ্টিয়া-২ ও রাশেদ খান মেননের ঢাকা-৮ আসনে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি। ২৯৭টি আসনের প্রার্থী ঘোষণাকালে এ তিনটি আসন ফাঁকা রেখেছিল আওয়ামী লীগ।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গতকাল ছিল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। এদিনই মূলত অধিকাংশ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা নিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের ব্যাপক শোডাউনের কারণে অধিকাংশ আসনেই এ নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশের সূচনা হয়।
তবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রতিবাদে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট টানা ৭২ ঘণ্টার অবরোধ আরও ৫৯ ঘণ্টা বাড়িয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত করেছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়সহ প্রার্থীদের বাড়িতে হামলাও চালিয়েছে অবরোধকারীরা। বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গতকাল এক বিবৃতিতে অবিলম্বে নির্বাচনী তফসিল স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেছেন, প্রহসনের একতরফা নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়ে বিশেষ দলের ক্রীড়নক হিসেবে ব্যবহার না হয়ে ঘোষিত তফসিল স্থগিত করে দেশকে বাঁচান।
১৮ দলীয় জোট নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠন না করে 'একতরফা নির্বাচন' প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে দেশব্যাপী টানা অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। অবরোধে সংঘাত-সহিংসতায় প্রাণহানির মধ্যে বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী কার্যালয়েও হামলা হয়েছে। গতকাল বিকেলে মাগুরার শালিখা উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এর আগে রোববার সন্ধ্যায় মাগুরা জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে বোমা হামলায় এক কর্মচারী, পুলিশসহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। তবে অবরোধ উপেক্ষা করেই সারাদেশে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন প্রার্থীরা। মনোনয়নপত্র জমাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে বড় ধরনের গোলযোগের ঘটনা না ঘটলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটের পুকুরিয়া এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম রব্বানীর বাড়িতে হামলা চালিয়েছে অবরোধকারীরা। এ সময় তার বাড়িতে অগি্নসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় রুবেল (২৫) নামের একজন নিহত হয়েছেন। মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার সময় কক্সবাজারের সাংসদ আবদুর রহমান বদির গাড়িবহরে হামলা চালায় অবরোধকারীরা। এ সময় বদি দুটি ফাঁকা গুলি ছুড়ে নিজেকে রক্ষা করেন।
আচরণবিধি অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় পাঁচজনের বেশি লোক না নেওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থীরা বহু সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ব্যাপক শোডাউনের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ কে এম শামীম ওসমান। কুমিল্লা-১১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন রেলপথ ও ধর্মমন্ত্রী মুজিবুল হক। হেলিকপ্টারে চড়ে নিজ নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন যশোর আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী নাবিল আহমেদ ও রংপুরের পীরগাছা আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান সাংসদ টিপু মুনশী।
রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য তফসিল স্থগিতে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আরও সময় বাড়ানোর আবেদনের পরও মনোনয়নপত্র জমার সময় বাড়ায়নি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৫ ও ৬ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই হবে; প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৩ ডিসেম্বর। আগামী ৫ জানুয়ারি হবে ভোট গ্রহণ।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে দলটির প্রায় অর্ধশত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বর্তমান সাংসদ, সাবেক সাংসদ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান। ফরিদপুর-২ আসনে প্রার্থী হয়েছেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মেজর (অব.) আ ত মা হালিম। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে প্রার্থী আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ গোলাম দস্তগীর গাজী। দলীয় মনোনয়ন তিনিই পেয়েছেন। তবে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) কে এম সফিউল্লাহ বীরউত্তম। ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দলটির সভাপতিম লীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ। তবে দলের নেতা নিক্সন চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ঢাকা মহানগরের ২০ সংসদীয় আসনে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ৭৩টি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৮, জাতীয় পার্টি ১৫, জেপি ৫, ওয়ার্কার্স পার্টি ১, বিএনএফ ৩, ন্যাপ ২, তরীকত ফেডারেশন ১ ও খেলাফত মজলিসের ১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীসহ বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও মনোনয়নপত্র জমা দেন। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকার রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ঢাকার আসনগুলোর জন্য মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হয়। এ সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পক্ষে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ফয়সাল চিশতি মনোনয়নপত্র জমা দেন। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন নিজ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে ঢাকা-৮ আসনের মনোনয়ন জমা দেন।
এ ছাড়া ভিআইপি প্রার্থীদের মধ্যে সিলেট-১ আসনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, ঝালকাঠি-১ আসনে ভূমি, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী আমির হোসেন আমু, ভোলা-১ আসনে শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শেরপুর-২ আসনে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, কিশোরগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, চাঁদপুর-১ আসনে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, নোয়াখালী-৫ আসনে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কুষ্টিয়া-৩ আসনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, চাঁদপুর-৩ আসনে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং সিলেট-৬ আসনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের ছেলে নাজমুল হাসান পাপন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে প্রতিনিধির মাধ্যমে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক।
চট্টগ্রাম-৯ আসনের মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম বিএসসি। ওই আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির সভাপতিম লীর সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। বিভাগীয় কমিশনারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন চট্টগ্রাম-১১ আসনের আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ এম এ লতিফ। একই আসনে জমা দিয়েছেন মহাজোটের শরিক জাসদের নগর সভাপতি জসিম উদ্দিন বাবুলও। চট্টগ্রাম-৫ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের টিকিট পাওয়া ইউনুস গণি চৌধুরী। এর আগে গত ৩০ নভেম্বর এ আসনে জাতীয় পার্টির সভাপতিম লীর সদস্য ও পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ মনোনয়নপত্র জমা দেন।
পার্বত্য খাগড়াছড়ি আসনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ছাড়াও জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) ও ইউপিডিএফ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও পিরোজপুর-৩ আসনে বিএনপির সাবেক সাংসদ মো. রুস্তম আলী ফরাজী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ঢাকার ২০ আসনে ৭৩ প্রার্থী :ঢাকার ২০ সংসদীয় আসনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মোট ৭৩ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে সেগুনবাগিচা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ৬১ জন ও ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ১২ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন।
ঢাকা-১ আসনে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান, জাতীয় পার্টির সালমা ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম; ঢাকা-২ আসনে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম; ঢাকা-৩ আসনে নসরুল হামিদ বিপু, জাতীয় পার্টির মিজানুর রহমান; ঢাকা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ড. আওলাদ হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।
ঢাকা-৫ আসনে আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান মোল্লা, জাতীয় পার্টির তুহিনুর রহমান নুরু, জাসদের শহিদুল ইসলাম, তরীকত ফেডারেশনের আরজু শাহ সায়দাবাদী, জেপির মীর আবদুস সবুর, ন্যাপের আবদুর রশিদ সরকার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন মনির হোসেন কমল।
ঢাকা-৬ আসনে আওয়ামী লীগের মিজানুর রহমান দীপু, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, ন্যাপের আখতার হোসেন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাইদুর রহমান সহিদ ও নিয়ামুল হক মালিক নামের আরেকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
ঢাকা-৭ আসনে আওয়ামী লীগের ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাতীয় পার্টির আফতাব গণি, জেপির হারুন অর রশিদ, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হাজি মোহাম্মদ সেলিম ও রিয়াজ উদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
ঢাকা-৮ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ছাড়াও জাতীয় পার্টির জহুরুল আলম রুবেল, জেপির আবদুর রহিম এবং ইসমাইল মাহমুদ ও মির্জা আবদুস সালাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ঢাকা-৯ আসনে আওয়ামী লীগের সাবের হোসেন চৌধুরী, জাতীয় পার্টির দেলোয়ার হোসেন খান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুস সামাদ সুজন মনোনয়নপত্র জমা দেন।
ঢাকা-১০ আসনে আওয়ামী লীগের ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও জাতীয় পার্টির হেলাল উদ্দিন, ঢাকা-১১ আসনে আওয়ামী লীগের এ কে এম রহমত উল্লাহ ও জাতীয় পার্টির হারুন অর রশিদ, ঢাকা-১২ আসনে আওয়ামী লীগের আসাদুজ্জামান খান কামাল ও জাতীয় পার্টির দেওয়ান আলী, ঢাকা-১৩ আসনে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম ও জাসদের নাদের চৌধুরী এবং ঢাকা-১৪ আসনে আওয়ামী লীগের আসলামুল হক আসলাম, জাতীয় পার্টির এম এ কাইয়ুম, জেপির মোস্তাকুর রহমান ও জাসদের শিরীন আখতার প্রার্থী হয়েছেন।
ঢাকা-১৫ আসনে আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদার, জাসদের সাইফুল ইসলাম, ঢাকা-১৬ আসনে আওয়ামী লীগের ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ, জাতীয় পার্টির মফিজুল হক বেনু, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সর্দার মোহাম্মদ মান্নান ছাড়াও আমির হোসেন মোল্লা, খালিদ হোসেন ও আমানত হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। ঢাকা-১৭ আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছাড়াও জেপির আবদুল লতিফ মলি্লক, খেলাফত মজলিসের মীর আজাহার উদ্দিন ও বিএনএফের আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা-১৮ আসনে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, জাতীয় পার্টির বাহাউদ্দিন আহমেদ, বিএনএফের আতিকুর রহমান নাজিম ও জাসদের এসএম ইদ্রিস আলী, ঢাকা-১৯ আসনে আওয়ামী লীগের ডা. এনামুর রহমান এবং ঢাকা-২০ আসনে জাপার খান মো. ইসরাফিল খোকন ও আওয়ামী লীগের এম এ মালেক মনোনয়নপত্র জমা দেন।

Monday, 2 December 2013

মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের গাড়িবিলাস: সাবেক স্ত্রীরাও প্রকল্পের গাড়ি পান!

শরিফুজ্জামান | আপডেট: ০২:২৭, ডিসেম্বর ০২, ২০১৩ | প্রিন্ট সংস্করণ
মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের গাড়িবিলাস
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বিভিন্ন প্রকল্পের ৭৭টি গাড়ি মন্ত্রী-উপদেষ্টাসহ সরকারের সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ব্যবহার করছেন। মন্ত্রণালয় বা পরিবহন পুল থেকে গাড়ি পাওয়ার পরও প্রভাব খাটিয়ে প্রকল্প থেকে অতিরিক্ত গাড়ি তাঁরা নিয়েছেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রায় পাঁচ বছর ধরে তাঁরা শুধু গাড়িগুলো ব্যবহারই করেননি, চালক, জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ হিসেবে গাড়িপ্রতি এলজিইডি থেকে দিতে হয়েছে মাসে প্রায় এক লাখ টাকা। অবশ্য কয়েকজন গাড়ি নিলেও অন্যান্য খরচ নেননি। মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের যেসব গাড়ি দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর প্রতিটির দাম অর্ধকোটি টাকার কম নয়। তাঁদের অনেকে পদত্যাগের পরও এসব গাড়ি ফেরত দেননি।
গত ২৫ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ বলেন, সরকারি সুবিধাভোগী বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার দিন থেকে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিতে পারবেন না।
কিন্তু প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে, এমনকি মন্ত্রী বা উপদেষ্টা হিসেবে বাদ পড়ার পরও রাজনৈতিক নেতাদের কেউ কেউ এলজিইডির গাড়ি ব্যবহার করছেন। এমনকি নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরও সাবেক মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের অনেকেই গাড়ি ফেরত দেননি। তবে গতকাল সকাল থেকে এ বিষয়ে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে অনুসন্ধান শুরু করার পর এলজিইডি ও গাড়ি ব্যবহারকারীদের মধ্যে তোড়জোড় শুরু হয় এবং কেউ কেউ গাড়ি ফেরত দেন।
শুধু মন্ত্রী-উপদেষ্টা নন, অবৈধ-ভাবে গাড়ি ব্যবহারের তালিকায় আছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আটজন কর্মকর্তা, পরিকল্পনা কমিশনের দুজন সদস্য এবং সচিবসহ ডজন খানেক কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা। এমনকি এলজিইডির যানবাহন শাখার দায়িত্বে থাকা দুজন প্রকৌশলীর দুই সাবেক স্ত্রীও প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এভাবে প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার করা অবৈধ ও অনৈতিক। তা ছাড়া এটি নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এর ফলে এলজিইডি প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করতে পারছে না। অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। এতে দেশ ও জনগণের সম্পদের ক্ষতি ও অপচয় হচ্ছে। তিনি মনে করেন, সংসদ ও মন্ত্রিত্ব বহাল রাখায় নির্বাচন-কালীন সরকার তার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারছে না।
এলজিইডির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টাদের মধ্যে এইচ টি ইমাম তাঁর ব্যবহার করা গাড়িটি (ঘ-১৩-৩৫০১) গতকাল বিকেল পর্যন্ত ফেরত দেননি। তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান। তবে এলজিইডির যানবাহন শাখার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, খুব শিগগির তিনি গাড়িটি ফেরত দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
২০১১ সালের ১৬ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে এলজিইডি জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টাকে গাড়িটি বরাদ্দ দেয়।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম গতকাল রোববার প্রকল্পের গাড়ি ফেরত দিয়েছেন। তাঁর সহকারী একান্ত সচিব মো. দিদারুল আলমও এলজিইডির একটি গাড়ি (গ-২৩-৩০২৮) ব্যবহার করেন। দিদার এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমানের ভাগনে। সাবেক প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব মো. সেলিম রেজাও একটি গাড়ি (ঘ-১১-৬৪৭০) নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী একটি গাড়ি (ঘ-১৩-০২৯৪) ব্যবহার করছেন।
এই মন্ত্রণালয়ে এলজিইডির বিভিন্ন প্রকল্পের পাঁচটি গাড়ি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ প্রসঙ্গে এলজিইডির যানবাহন শাখার সংশ্লিষ্ট একজন প্রকৌশলী জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ বা পরিবহন পুলের চাহিদাপত্র অনুযায়ী গাড়িগুলো দেওয়া হয়।
সাবেক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান সরকারের প্রায় পুরো মেয়াদে এলজিইডির একটি গাড়ি (ঘ-১৩-১৮৬১) ব্যবহার করেছেন। ২৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর গত বৃহস্পতিবার তিনি গাড়িটি ফেরত দিয়েছেন।
সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এলজিইডির একটি গাড়ি (ঘ-১৩-২৮৮১) ব্যবহার করছেন। তিনি আসন্ন সংসদ নির্বাচনের একজন প্রার্থী। জাতীয় সংসদের হুইপ মির্জা আজম এলজিইডির একটি গাড়ি (ঘ-১১-৫৮৩৩) ব্যবহার করছেন। তিনিও আসন্ন নির্বাচনে সরকারদলীয় প্রার্থী।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান রহমত আলী প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৩) একটি জিপ (ঘ-১৩-১৮৫০) ব্যবহার করছেন প্রায় পাঁচ বছর ধরে। তিনিও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। তাঁর একান্ত সচিবও এলজিইডির একটি প্রকল্পের (পিএমটি) গাড়ি (ঘ-১১-৩০৭০) ব্যবহার করছেন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এলজিইডির গাড়ি (ঘ-১১-৬২৫২) ব্যবহার করছেন। এবারও তিনি নির্বাচন করছেন। এলজিইডির একটি গাড়ি (ঘ-১১-৮৯১৫) ব্যবহার করছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান মমতাজ বেগম।
বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এলজিইডি থেকে নেওয়া গাড়িটি (ঘ-১৩-০২৯৫) গতকাল পর্যন্ত ফেরত দেননি। রস্ক নামে পরিচিত প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিশুদের একটি প্রকল্পের গাড়ি তিনি ব্যবহার করছেন।
আফছারুল আমীন এখন আর মন্ত্রিসভার সদস্য নন। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৩) একটি দামি গাড়ি (গ-২১-৯১৯৭) তিনি এত দিন ব্যবহার করেছেন। সম্প্রতি তা ফেরত দিয়েছেন।
এলজিইডি সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক তাঁর নেওয়া গাড়িটি (ঘ-১৩-৬১১৪) তফসিল ঘোষণার পরই ফেরত দিয়েছেন। তবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সরকারি গাড়ি ছাড়াও প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার করছেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারাও এলজিইডির বিভিন্ন প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার করেন। মূল মন্ত্রণালয় হিসেবে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দেখভাল ও নজরদারির জন্য এলজিইডির গাড়ি নেওয়ার যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ। তবে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কোন যুক্তিতে চালকসহ সর্বক্ষণিক এলজিইডির গাড়ি ব্যবহার করছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন যেমন আছে, তেমনি এর জবাব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অজানা নয়। তা ছাড়া প্রতিটি গাড়ির জ্বালানি, চালক, মেরামতসহ বিভিন্ন খাতে প্রতি মাসে প্রায় এক লাখ টাকা খরচ করে অধিদপ্তর।
সূত্রমতে, এলজিইডির বিভিন্ন প্রকল্পের কমপক্ষে ৭৭টি গাড়ি ব্যবহার করছেন সরকারের সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী, সচিবসহ পদস্থ কর্মকর্তারা। প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার বা কাজ আদায়ে দরকার হয়, এমন জনপ্রতিনিধি বা সরকারি কর্মকর্তাদের এসব গাড়ি সর্বক্ষণিক ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে এলজিইডি এসব গাড়ি ফেরত নেওয়ার জন্য চাপ দিতেও পারে না।
জানতে চাইলে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তফসিল ঘোষণার পর অনেকেই গাড়ি ফেরত দিয়েছেন, অন্যরা দিয়ে দেবেন। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেতে তিনি যানবাহন শাখায় যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
গত ৩ নভেম্বর এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমানকে এক বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিতর্ক উঠলেও এই সুবিধা নিয়ে এর আগে তাঁর চাকরির মেয়াদ দুই বছর বেড়েছিল। এরপর চাকরির বয়স সরকারিভাবে এক বছর বাড়ানো হলে সেই সুবিধাও পান তিনি। নিয়মিত চাকরির বাইরে তিন বছর পেলেও তিনি এলজিইডির রেওয়াজ ভঙ্গ করে এই প্রথম এক বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নেন। ১৩ ডিসেম্বর তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এক বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কার্যকর হবে।
গত বছরের ২১ জুলাই প্রকাশিত টিআইবির এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এলজিইডি সরকারের পরিবহন নীতিমালা অনুসরণ করে না। অধিদপ্তরের যানবাহন ঢাকার বাইরে ব্যক্তিগত কাজে ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে ব্যবহার করা হয়; এর জন্য জ্বালানি তেল, চালকসহ অন্যান্য খরচ অধিদপ্তর বহন করে।
এলজিইডির প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকারসচিব আবু আলম মো. শহিদ খান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি বরাদ্দ নিয়ে বছরের পর বছর বিভিন্ন ধরনের অসংগতি চলছে। মন্ত্রী বা সচিবদের যে গাড়ি দেওয়া হয়, তা অনেক ক্ষেত্রেই পুরোনো থাকে এবং মহাসড়কে এসব গাড়ি ব্যবহারের অনুপযোগী। তিনি আরও বলেন, সচিবদের উন্নয়ন প্রকল্প তদারক করতে প্রায়ই ঢাকার বাইরে যেতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রকল্প পরিচালকের গাড়িটি মন্ত্রী বা সচিবদের গাড়ির চেয়েও দামি। এতে প্রকল্প পরিচালকেরা অনেক সময় বিব্রত হন।
এলজিআরডি সচিব আরও বলেন, সচিব কমিটির সভায়ও সচিবদের গাড়ির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে তাঁদের দুটি গাড়ি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি মনে করেন, প্রকল্পের গাড়ি যুগ যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। এটা বন্ধ করতে হলে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন।

গাড়ি ব্যবহারকারীদের তালিকায় সরকারের কর্মকর্তারাও
মন্ত্রী-উপদেষ্টা ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও এলজিইডির গাড়ি ব্যবহার করছেন। তাঁদের অনেকেরই ব্যক্তিগত বা সরকারি গাড়ি রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আটজন: প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ (ঘ-১১-৮১৪৪), প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শেখর (ঘ-১৩-১৮৯৪), প্রধানমন্ত্রীর দুই বিশেষ সহকারী মো. আবদুস সোবহান গোলাপ (ঘ-১১-৮০৪৬) ও মো. ফেরদৌস আহাম্মেদ খান (ঘ-১১-৫৩৬২), প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন আহমেদ (ঘ-১১-৮০৪৫) এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের নামে গাড়ি বরাদ্দ রয়েছে। এ ছাড়া কোনো কর্মকর্তার নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নামে একটি গাড়ি (ঘ-১১-৪০০৯) এবং প্রধানমন্ত্রীর এডিসিদের নামে একটি গাড়ি (ঘ-১১-৩৮২৬) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
আরও যাঁরা প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার করছেন: গোপালগঞ্জের পৌর মেয়র রেজাউল হক শিকদার ও টুঙ্গিপাড়ার মেয়র সরদার ইলিয়াস হোসেন একটি করে প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার করেন। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যানকেও প্রকল্পের গাড়ি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সরকারি গাড়িও রয়েছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের পাঁচজন কর্মকর্তা বিভিন্ন প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার করছেন।
প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহারকারীদের তালিকায় আরও আছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের এক ডজন কর্মকর্তা। এ ছাড়া উপসচিব ও জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিবদের জন্য ২২টি গাড়ি বরাদ্দ করেছে এলজিইডি। তবে স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র বলছে, কনিষ্ঠ কর্মকর্তারা একই গাড়ি কয়েকজন মিলে ব্যবহার করেন।
এলজিইডির সূত্রমতে, পরিকল্পনা কমিশনের দুই সদস্য (পরিকল্পনা ও কৃষি) প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার করছেন। গোপালগঞ্জ বাড়ি হওয়ায় স্থানীয় সরকার কমিশনের এক সদস্যের নামে একটি গাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের বাইরে প্রকল্পের সর্বাধিক গাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এলজিইডি সূত্র জানায়, প্রকল্পগুলো গ্রহণ ও বাস্তবায়নে পরিকল্পনা কমিশনের বিশেষ ভূমিকা থাকে। এ জন্য তাঁদের মন জুগিয়ে চলতে হয়।
সাবেক স্ত্রীরাও প্রকল্পের গাড়ি পান! এলজিইডির দুই প্রকৌশলীর সাবেক দুই স্ত্রী প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার করেন বলে জানা গেছে। এ নিয়ে এলজিইডির বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ক্ষোভ রয়েছে। যানবাহন শাখার আরেক প্রকৌশলীর সাবেক স্ত্রীও প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার করেন। দুই সাবেক স্ত্রীই নাট্যশিল্পী।

Sunday, 1 December 2013

আ. লীগের মনোনয়ন অদৃশ্য ইশারায় বদলে যাচ্ছে প্রার্থী

পাভেল হায়দার চৌধুরী

মনোনয়ন চূড়ান্ত করে আনুষ্ঠানিকভাবে নাম ঘোষণার পরও আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। ঘোষিত প্রার্থীর নাম বাদ দিয়ে ঢোকানো হয়েছে আনকোরা নাম। সংসদীয় বোর্ডের বিবেচনায় চূড়ান্তভাবে মনোনীত প্রার্থী বদলের ঘটনায় হতাশ হচ্ছেন শেষ মুহূর্তের বঞ্চিতরা, ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে তাঁদের কর্মী-সমর্থকরা। নির্বাচনের প্রার্থিতাকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের আশঙ্কা করছেন অনেকেই। এ ঘটনাকে অনিয়ম হিসেবেই দেখছেন তাঁরা। ‘চূড়ান্ত বিবেচনায় মনোনীত হওয়ার পরও কেন বঞ্চিত হব’- এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন প্রার্থীরা। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে থেকে গত তিন দিন তদবিরের মাধ্যমে প্রায় এক ডজন প্রার্থী বদলের ঘটনা ঘটেছে বলে দলের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেন।
এদিকে অদল-বদল নিয়ে জানতে চাইলে সংসদীয় বোর্ডের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত কলের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছু বলব না।’ জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফও একই কথা বলেন।
সর্বশেষ গত শুক্রবার দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বসে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন। এর পরও দলের উপদপ্তর সম্পাদক স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে একাধিক প্রার্থী পরিবর্তনের মতো বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ ঘটনা ঘটেছে।
প্রার্থীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে টেলিফোন করে চূড়ান্ত মনোনয়ন ফরম নিয়ে যাওয়ার জন্য খবর দেওয়া হলে তাঁরা ধানমণ্ডিতে দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে আসেন। কেউ কেউ এসে সেই ফরমও হাতে পান। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা মনোনীত ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া ফরমে সমস্যা রয়েছে- এমন অজুহাত দিয়ে ফিরিয়ে নেন।
শুক্রবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এ সময় তিনি ঝিনাইদহ-৩ (কোর্টচাঁদপুর-মহেশপুর) আসনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খান চঞ্চলের নাম ঘোষণা করেন। পরে রাত ১০টার দিকে আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে পাঠানো তালিকায় এ আসনে পরিবর্তিত প্রার্থীর নাম দেওয়া হয়। চঞ্চলের পরিবর্তে সেখানে বিকল্প দুজন প্রার্থীর নাম দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন যুবলীগ নেতা অধ্যক্ষ নবী নেওয়াজ ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাজ্জাতুজ জুম্মা।
ঝিনাইদহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল আজম চঞ্চল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত শুক্রবার মনোনয়নের ঘোষণার দিন আমি সংসদ ভবন এলাকায় ছিলাম। নাম ঘোষণার পর আমাকে জানানো হয় চূড়ান্ত ফরম নিয়ে যাওয়ার জন্য।’ তিনি বলেন, ‘আমি ধানমণ্ডি এসে ফরম তুলে স্বাক্ষর খাতায় সই করার সময় গণভবনের এক কর্মকর্তা ও আমাদের খুলনা বিভাগের এক নেতা (আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য) ফরমে সমস্যা আছে জানিয়ে আমার হাত থেকে তা ফিরিয়ে নেন। ওই সব নেতা আমাকে জানান, রাতে গণভবনে গিয়ে ফরম নিয়ে আসার জন্য।’
শফিকুল আজম চঞ্চল বলেন, ‘কথামতো গণভবনে গেলে আমাকে জানানো হয় প্রধানমন্ত্রী ওপরে উঠে গেছেন, আজ আর কথা হবে না। পরের দিন সকালে যেতে বলা হয়।’ তিনি বলেন, ‘রাতে জানতে পারি আমার আসনে নবী নেওয়াজ ও সাজ্জাতুজ জুম্মার নাম দিয়ে ধানমণ্ডির কার্যালয় থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে। এতে আমি ও আমার এলাকা থেকে আসা কর্মী-সমর্থকরা হতাশ হয়েছে।’
কোর্টচাঁদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতাশা প্রকাশ করে বলেন, শফিকুল আজম চঞ্চল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে থেকে দলকে সংগঠিত করেছেন। তিনি এলাকায় থাকেন। তাঁকে মনোনয়ন দিলে দলের জন্য ভালো হতো।
ওই আসনে (কোর্টচাঁদপুর-মহেশপুর) মনোনয়ন পাওয়া দুই বিকল্প প্রার্থীর মধ্যে তুলনা করে মহেশপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ময়েজউদ্দিন হামিদ বলেন, সাজ্জাতুজ জুম্মার সঙ্গে এলাকার মানুষের সম্পর্ক রয়েছে। তিনি মনোনয়ন পেলেও ভালো প্রার্থী হিসেবে মানুষ গ্রহণ করত। নবী নেওয়াজের টাকা আছে, তাই তাঁকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে প্রথমে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ কবিরের নাম ঘোষণা করা হয়। পরের তালিকায় তাঁর নামের পরিবর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের নাম দেখা যায়। পার্বত্য চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি আসনে যতীন্দ্রলাল ত্রিপুরার নাম ঘোষণা করে পরে পুজেন্দ্র“ লাল ত্রিপুরার নাম সংযোজন করা হয়েছে। কুষ্টিয়া-৩ আসনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফের নাম ঘোষণা করা হয়। পরে তাঁর নামের পাশে ডা. এ এফ এম আমিনুল ইসলাম রতনের নামও রাখা হয়। এ ছাড়া বরিশাল-২ আসনে অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুসের নাম ঘোষণা করা হয়। পরে মো. শাহে আলমের নাম যোগ করা হয়।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবন থেকে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়ে আসার পরও তাঁর ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে তদবিরের কারণে বারবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের চূড়ান্ত তালিকায়ও পরিবর্তন এসেছে। এর আগে আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য মনোনয়ন থেকে বাদ পড়লেও দলের সংসদীয় বোর্ডের কয়েকজনের তদবিরে তাঁরা নিজ নিজ আসনে মনোনয়ন ফিরে পান। এমন ঘটনা ঘটেছে ঢাকা-৪ আসনে মনোনয়নের ক্ষেত্রেও। জানা যায়, প্রথমে এ আসনে ড. আওলাদের মনোনয়ন চূড়ান্ত ছিল। এ খবর জানার পরও বর্তমান সংসদ সদস্য সানজিদা খানম বিভিন্ন উপায়ে তদবির করে নিজের মনোনয়ন ঠিক করেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দলের কোনো পর্যায়ের নেতা সঠিক কোনো ব্যাখ্যা দেননি। এর আগেও চূড়ান্ত করার পরও বিভিন্নভাবে পরিবর্তন এসেছে মনোনয়নপ্রার্থীদের তালিকায়।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আব্দুল্লাহ কবির সমর্থিত এক এক নেতা বলেন, ‘আমাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয় প্রথমে। জানতে পেরে ধানমণ্ডিতে আসি। ফরম তুলতে গেলে একপর্যায়ে জানানো হয়, এখানে জটিলতা আছে। এ অজুহাতে আর ফরম নেওয়া যায়নি।’
নেত্রকোনা-২ আসনের নুর খানের আত্মীয় পরিচয়দানকারী এক নেতা জানান, নেত্রকোনা-২ আসনে নুর খান মনোনয়ন পেয়েছেন বলে ধানমণ্ডির কার্যালয় থেকে টেলিফোন করে নিশ্চিত করা হয়। এরই অংশ হিসেবে ধানমণ্ডিতে যাই। একপর্যায়ে জানা যায়, নানা মহলের তদবিরে ঘোষণার মাত্র দুই ঘণ্টা আগে এখানে নুর খানকে বাদ দিয়ে আরিফ খান জয়কে দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এতে হতাশার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মতো বড় দলে নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে এ ধরনের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।
এদিকে এসব আসনে প্রার্থী বদলের ঘটনাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না নিজ নিজ এলাকার তৃণমূল নেতারা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এক নেতা বলেন, এখানে নবী নেওয়াজের কোনো অবস্থান নেই। তাঁর আদি বাড়ি নোয়াখালী। স্থায়ী বাসিন্দা যশোরের চৌগাছার। কোনোভাবেই তিনি এ এলাকার সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনীত হতে পারেন না। এলাকায় তাঁর কোনো কর্মী-সমর্থক নেই। তিনি জানান, এলাকায় তাঁর চাকরি বাণিজ্য ও ছাত্রলীগের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি বাণিজ্য নিয়ে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ রয়েছে। ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়ার নাম করে ১৯ লাখ টাকার বাণিজ্য করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত এ এলাকায় গত ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া সহিংস কর্মসূচিগুলো মোকাবিলা করে আসছেন চঞ্চল। সেই চঞ্চলের জায়গায় সাজ্জাতুজ জুম্মাকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও কিছুটা সান্ত্বনা থাকত বলে জানান ওই নেতা। এখন মহেশপুর-কোর্টচাঁদপুর এলাকায় আওয়ামী লীগের আর কোনো কর্মীকে মাঠে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
এ প্রসঙ্গে ঝিনইদহ কোর্টচাঁদপুর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক শাজাহান আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, নবী নেওয়াজ এলাকায় রাজনীতি করেন না। তাঁর এখানে রাজনৈতিক কোনো অবস্থান নেই। টাকা-পয়সার মালিক। তাই পোস্টার-ব্যানার করে নির্বাচনের সময়ে মনোনয়ন চান। একতরফা নির্বাচন হলেও এখানে তাঁর পক্ষে জেতা সম্ভব হবে না।
এ প্রসঙ্গে নবী নেওয়াজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চঞ্চলের নাম মাইকে শুনে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। আমি ধানমণ্ডি থেকে বাসায় চলে যাই।’ পরে কিভাবে দলের মনোনয়নের চিঠি পেলেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কয়েকজন শীর্ষপর্যায়ের নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করি। এরপর রাত ৯টায় আমাকে টেলিফোন করা হয়। আমি চিঠি নিয়ে আসি।’ এর আগে একাধিক নেতা তাঁকে মনোনয়ন নিশ্চিত করেন বলেও জানান তিনি। চঞ্চল ও সাজ্জাতুজ জুম্মার মতো দুজন সাংগঠনিক নেতা থাকার পরও আপনাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, নির্বাচনে জেতার ব্যাপারে কতটা আশাবাদী- এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি শতভাগ আশাবাদী।’ ঝিনাইদহ-৩ নির্বাচনী আসনের স্থায়ী বাসিন্দা নন নবী- এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি স্থায়ী বাসিন্দা না হলেও এ এলাকার মানুষের সঙ্গে আমার নিবিড় সম্পর্ক আছে।’ সবার সঙ্গে সালাম, কুশল বিনিময় এবং যোগাযোগ রক্ষা করেন বলেও দাবি করেন তিনি।

AD BANNAR