Showing posts with label ফিলিস্তিন. Show all posts
Showing posts with label ফিলিস্তিন. Show all posts

Wednesday, 24 September 2025

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা যেসব কারণে কঠিন

 সমকাল এক্সপ্লেইনার

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা: যেসব কারণে বাস্তবায়ন কঠিন

গাজাকে মুক্ত ও গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ হয় ইতালির রোমে। গতকাল সোমবার। ছবি: এএফপি



সাদিকুর রহমান


ক্ষুধা, মৃত্যু, নিয়মিত বোমা বর্ষণ। এমন একটি ভূখণ্ডে শান্তি ফেরানো গেলে এর চেয়ে ভালো উদ্যোগ আর কি হতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়ে এমন উদ্যোগ নিলেও বাস্তবতা বলেছে, আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া এখনো বেশ দূরে ও কঠিন।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকের একেবারে আগ মুহুর্তে কয়েকটি দেশের স্বীকৃতি দেওয়াকে ফিলিস্তিন আপাতত কূটনৈতিক জয় হিসেবে দেখতে পারে। কারণ, জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যের মধ্যে ১৫৬টিই তাদের পক্ষে আছে। কিন্তু বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সংবাদ বিশ্লেষণগুলোতে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই স্বীকৃতিগুলো মূলত প্রতীকী। এগুলো প্রকৃত রাষ্ট্র গড়ে তোলার পথে এখনই খুব একটা সাহায্য করবে না।রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে আগে যুদ্ধ বন্ধের পাশাপাশি সীমানা নির্ধারণ ও ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিভাজন দূর করতে হবে। যেসব শর্ত দিয়ে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে সেগুলো পূরণ না হলেও জটিলতা কাটবে না।

সোমবার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। ছবি: এএফপি

সোমবার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। ছবি: এএফপি

কেন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা একটি জটিল প্রক্রিয়া, চলুন তা ধাপে ধাপে বোঝা যাক।

দরকার ‘প্রকৃত সার্বভৌমত্ব’

এক সময় ফিলিস্তিন ভূখণ্ড ছিল পূর্বে জর্ডান নদ থেকে পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর পর্য‌ন্ত। ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের পর ইসরায়েল পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা উপত্যকা দখল করে নেয় (২০০৭ সালে গাজার দখলদারি ছেড়ে দেয়)। ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির মাধ্যমে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ গঠিত হওয়ার মাধ্যমে কিছুটা স্বায়ত্তশাসন পেলেও এটি পুরোপুরি স্বাধীনতা পায়নি।

কারণ, একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সীমানা নির্ধারণ, সেনাবাহিনী গঠন ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দরকার। কেবল স্বীকৃতি দিলেই এগুলো নিশ্চিত হবে না। যেমন- ২০১২ সালে জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়। এর মাধ্যমে তারা কোনো বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) দারস্থ হওয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু এরপরও ইসরায়েলি দখলদারি বন্ধ হয়নি। কারণ এখনো ফিলিস্তিন সার্বভৌমত্ব অর্জন করেনি।

মাহা নেসার। ছবি: সংগৃহীত

মাহা নেসার। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডল ইস্টার্ন ও নর্থ আফ্রিকান স্টাডিজ স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক মাহা নেসার তাঁর এক নিবন্ধে বলেছেন, প্রকৃত সার্বভৌমত্বের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন দরকার। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো ক্ষমতা এটাকে আটকে রেখেছে।

ভেটোর বাধা উতড়ানো

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, নতুন সদস্য গ্রহণের জন্য সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদের মধ্যে সমঝোতা দরকার হয়। সদস্যপদ লাভের যেকোনো আবেদন প্রথমে মহাসচিবের কাছে যায় এবং পরে তা নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের কাছে পাঠানো হয়।

জাতিসংঘের সাধারণ সদস্য বর্তমানে ১৯৩টি। তাদের মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদের মোট সদস্য দেশ ১৫টি। এর মধ্যে পাঁচটি দেশ পরিষদের স্থায়ী সদস্য। বাকি ১০ দুই বছরের জন্য অস্থায়ীভাবে নির্বাচিত হয়। নতুন সদস্য দেশের আবেদন প্রথমে এই নিরাপত্তা পরিষদ যাচাই করে। তারা সুপরিশ করলে পরে তা সাধারণ পরিষদের ১৯৩ দেশের সামনে তুলে ধরা হয়।

নিরাপত্তা পরিষদে কোনো খসড়া প্রস্তাব পাস হতে হলে অন্তত ৯টি সদস্য দেশের সমর্থন প্রয়োজন হয়। তবে খসড়াটি তখনই চূড়ান্তভাবে পাস হবে যখন সেটির বিরুদ্ধে স্থায়ী সদস্যদের কেউ ভেটো দেবে না। স্থায়ী ৫ সদস্যের কোনো একটিও যদি ভেটো দেয় তাহলে ওই খসড়া আর পাস হয় না।

ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য করার খসড়া প্রস্তাবে ভেটো দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি। ২০২৪ সালে। ছবি: ইউএন

ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য করার খসড়া প্রস্তাবে ভেটো দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি। ২০২৪ সালে। ছবি: ইউএন

যেমন- গত বছরের এপ্রিলে ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য রাষ্ট্র করার বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদে একটি খসড়া প্রস্তাব তোলা হয়। সেখানে ১২টি সদস্য দেশ পক্ষে ভোট দেয়। কিন্তু একটি স্থায়ী সদস্য ভেটো দেওয়ার কারণে সেটি আর পাস হয়নি। ভেটোটি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। বাকি দুটি দেশ ভোট দেওয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখে।

তখন যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে রাশিয়া বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। আর ভোট না দেওয়ার কারণ হিসেবে যুক্তরাজ্য বলেছিল, ফিলিস্তিনে আগে সংস্কার দরকার। রাষ্ট্র গঠনের জন্য হামাসকে বাদ দিয়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে মূল দায়িত্ব নিতে হবে। আর চীনের প্রতিনিধি বলেন, অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় ফিলিস্তিনের জন্য জাতিসংঘের সদস্য পদ পাওয়া এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হলো- যুক্তরাষ্ট্র, চীন, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও ফ্রান্স। আর বর্তমানে অস্থায়ী ১০ সদস্য হলো- বাহরাইন, কলম্বিয়া, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো, লাটভিয়া, লাইবেরিয়া, ডেনমার্ক, গ্রীস, পাকিস্তান, পানামা ও সোমালিয়া।

তাই রাষ্ট্র হিসেবে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদ পেতে ফিলিস্তিনকে এই ভেটোর বাধা উতরাতে হবে।

সীমানার মীমাংসা

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলো যে দুই-রাষ্ট্র সমাধানের কথা বলছে, সেটি মূলত পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা উপত্যকাকে কেন্দ্র করে একটি রাষ্ট্রের পরিকল্পনা।

২০১২ সালে জাতিসংঘের ৬৭তম সাধারণ অধিবেশনের নথি অনুযায়ী, দুই রাষ্ট্র সমাধানের মাধ্যমে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে এসব অঞ্চল থেকে ইসরায়েলের দখল প্রত্যাহার করতে হবে। নথিতে আরও বলা হয়, পূর্ব জেরুজালেম দখল ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের বেড়া দেওয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বৈধ নয়। পাশাপাশি এটি আন্তর্জাতিক আইনের বিরোধী। নথিতে সুপারিশ করা হয়, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল উভয়েই জেরুজালেমকে রাজধানী দাবি করায়- এই সমস্য আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।

অসলো চুক্তি স্বাক্ষরের পর হাত মেলান ইয়াসির আরাফাত (ডানে) ও আইজ্যাক রবিন (বাঁয়ে)। ফাইল ছবি: এএফপি

অসলো চুক্তি স্বাক্ষরের পর হাত মেলান ইয়াসির আরাফাত (ডানে) ও আইজ্যাক রবিন (বাঁয়ে)। ফাইল ছবি: এএফপি

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৩ সালে পিএলএ নেতা ইয়াসির আরাফাত ও ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিনের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি হয়। যেটি অসলো চুক্তি নামে পরিচিত। এই ‍চুক্তি অনুযায়ী, ফিলিস্তিনিরা স্বশাসনের আংশিক অধিকার পাবে এবং ইসরায়েল পশ্চিম তীরের জেরিকো ও গাজা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করবে। কিন্তু চুক্তি হলেও তা মানা হয়নি।

রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিম তীর হলো প্রায় ২.৭ মিলিয়ন ফিলিস্তিনির আবাসভূমি। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের সময় ইসরায়েল এই পশ্চিম তীর দখলে নেয়। চলমান যুদ্ধের সময়ও সেখানে ইহুদিদের বসতি গড়ে তুলতে উৎসাহ দিচ্ছে। ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনিদের আবাদি জমিও দখল করছে। এর ফলে এই এলাকায় ফিলিস্তিনিদের মালিকানাধীন জমি কমে আসছে।

ইসরায়েলি অভিযানের মুখে পশ্চিম তীর থেকে চলে যাচ্ছে একটি পরিবার। গত বছরের আগস্টে। ছবি: এএফপি

ইসরায়েলি অভিযানের মুখে পশ্চিম তীর থেকে চলে যাচ্ছে একটি পরিবার। গত বছরের আগস্টে। ছবি: এএফপি

সম্প্রতি ইসরায়েল গাজা সিটিও দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সুতরাং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে আগে পূর্ব জেরুজালেম, পশ্চিম তীরের সীমানা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করতে হবে।

অভ্যন্তরীণ বিভাজন

স্বীকৃতি দেওয়ার আগে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স কিছু শর্ত দিয়েছে। এর মধ্যে আছে ফিলিস্তিনের পরবর্তী নির্বাচন আয়োজন করতে হবে হামাসকে বাদ দিয়ে। কিন্তু একটি জরিপ দেখাচ্ছে, এটি বাস্তবায়ন করা বেশ কঠিন। কারণ অধিকাংশ ফিলিস্তিনি হামাসকে সমর্থন করে। 

হামাস হলো ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের একটি। অপরটি হলো ‘ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ’। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার কাছে হামাস চিহ্নিত সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে।

এনবিসি নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফিলিস্তিনি পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চ সেন্টারের জরিপ বলছে, ফিলিস্তিনিদের এক-তৃতীয়াংশ মনে করেন- পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং গাজায় হামাসের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ও রাজনৈতিক বিভাজনই তাদের ক্ষতির বড় কারণ। একই জরিপে দেখা গেছে, গাজা ও পশ্চিম তীরে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের অর্ধেকের বেশি ‘ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের’ তুলনায় হামাসকে ভোট দেবেন। তারা মনে করেন, হামাসই আল-আকসা মসজিদ ও পূর্ব জেরুজালেমে মুসলিমদের অন্যান্য পবিত্র স্থানগুলো রক্ষা করতে পারবে।

ফলে যে শর্ত দিয়ে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে, সেটি বাস্তবায়ন করতে গেলে নির্বাচন ঘিরে নতুন করে অভ্যন্তরীণ সংঘাত দানা বাঁধতে পারে।

Tuesday, 22 July 2025

রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেলে বিতর্কিত গ্যাস সম্পদের মালিকানা পাবে ফিলিস্তিন

ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলে গাজা উপকূলবর্তী গ্যাসক্ষেত্র ‘গাজা মেরিন’-এর মালিকানা এবং সেখান থেকে গ্যাস উত্তোলনের পূর্ণ অধিকার পাবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। এমনটাই বলছেন খনিজ সম্পদ বিশেষজ্ঞ মাইকেল ব্যারন।
ব্যারনের দাবি, বর্তমান বাজারদরে গাজা মেরিন গ্যাসক্ষেত্র থেকে অন্তত ৪০০ কোটি ডলার পর্যন্ত আয়ের সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর গড়ে ১০ কোটি ডলার রাজস্ব পেতে পারে, যা ১৫ বছর ধরে চলতে পারে।

ব্যারন বলেন, ‘এ আয়ে ফিলিস্তিন কাতার বা সিঙ্গাপুরে পরিণত হবে না ঠিক, কিন্তু এটা হবে তাদের নিজেদের আয়। এতে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি পাবে তারা।’

গাজা উপকূলবর্তী গাজা মেরিন গ্যাসক্ষেত্রের মালিকানা নিয়ে প্রায় ৩০ বছর ধরে বিতর্ক চলছে। মালিকানা নিয়ে আইনি জটিলতার কারণে অনুসন্ধান কাজ দীর্ঘ সময় ধরে থেমে আছে।

ফিলিস্তিনপন্থী মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী একটি আইনজীবী প্রতিষ্ঠান ইতালির রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ইএনআইকে একটি সতর্কীকরণ চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি জ্বালানি মন্ত্রণালয় গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য যে অঞ্চলটিকে ‘জোন জি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তার প্রায় ৬২ শতাংশই ফিলিস্তিনের দাবিকৃত সামুদ্রিক জলসীমায় পড়ে। ইসরায়েলের জ্বালানি মন্ত্রণালয় সেখানে গ্যাস অনুসন্ধানের ছয়টি লাইসেন্স দিয়েছিল।

চিঠিতে আইনজীবীরা দাবি করেছেন, ইসরায়েল সেখানে গ্যাস অনুসন্ধানের কোনো বৈধ লাইসেন্স দিতে পারে না।

ব্যারন বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেলে, বিশেষ করে যেসব দেশের এখতিয়ারে বড় তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলো নিবন্ধিত, সেসব দেশ যদি স্বীকৃত দেয়, তবে আইনি অনিশ্চয়তা কার্যত শেষ হয়ে যাবে। এতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ একটি নিরাপদ নতুন আয়ের উৎস পাবে এবং নিয়মিত জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবে। এ জন্য তাদের ইসরায়েলের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না।

২০১৫ সালে জাতিসংঘের সমুদ্র আইনবিষয়ক কনভেনশনে (আনক্লজ) স্বাক্ষর করে ফিলিস্তিন। ২০১৯ সালে তারা তাদের সমুদ্রসীমা ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করে এবং এ–সংক্রান্ত বিস্তারিত দাবি উপস্থাপন করে। ইসরায়েল এ কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি।

ব্যারন বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেলে, বিশেষ করে যেসব দেশের এখতিয়ারে বড় তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলো নিবন্ধিত, সেসব দেশ যদি স্বীকৃত দেয়, তবে আইনি অনিশ্চয়তা কার্যত শেষ হয়ে যাবে। এতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ একটি নিরাপদ নতুন আয়ের উৎস পাবে এবং নিয়মিত জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবে। এ জন্য তাদের ইসরায়েলের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না।

ওই আইনি চিঠির পর ইএনআই ইতালিতে চাপ প্রয়োগকারী গোষ্ঠীগুলোর কাছে জানিয়েছে, এখনো কোনো লাইসেন্স ইস্যু করা হয়নি। কোনো অনুসন্ধান কাজও চলছে না।

গাজা উপকূলসংলগ্ন সমুদ্রসীমা বরাবর প্রায় ৯০ কিলোমিটার (৫৬ মাইল) দৈর্ঘ্যের একটি সামুদ্রিক গ্যাস পাইপলাইন ইসরায়েলের আশকেলন থেকে মিসরের আরিশ পর্যন্ত বিস্তৃত। সেখানে (আরিশ) গ্যাস তরলীকরণ করে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়।

গ্লোবাল উইটনেস নামের একটি সংস্থা দাবি করেছে, বেআইনিভাবে ফিলিস্তিনের জলসীমার ওপর পাইপলাইন তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এটি থেকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ কোনো রাজস্ব পায় না।

ব্যারন বলেন, ‘১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তিতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে পরিষ্কারভাবে তাদের জলসীমা, ভূগর্ভস্থ সম্পদ, আইন প্রণয়ন এবং তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও লাইসেন্স প্রদানের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছিল। প্রাকৃতিক সম্পদে নিয়ন্ত্রণ ছিল ইয়াসির আরাফাতের রাষ্ট্র বিনির্মাণ পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ফিলিস্তিনি সম্পদে ইসরায়েলি শোষণ ছিল দুই অঞ্চলের মধ্যে চলমান সংঘাতের মূল কেন্দ্রবিন্দু।
২০০০ সালে গাজা উপকূলে প্রথম প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। এটি ছিল ব্রিটিশ গ্যাসের অংশীদারত্বে পরিচালিত একটি প্রকল্প। পরিকল্পনা ছিল গাজা উপত্যকার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্রে এ গ্যাস ব্যবহার করে বিদ্যুৎ–সংকট দূর করা হবে।

২০ বছরের বেশি সময় ধরে গাজা মেরিন থেকে ফিলিস্তিনিরা এক ফোঁটা গ্যাসও তুলতে পারেননি। ব্যারন বলেন, এ প্রকল্পের ভাগ্যই আসলে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের নীতির প্রতিচ্ছবি। একদিকে তারা চায় ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের ওপর নির্ভরশীল থাকুক, একই সঙ্গে চেষ্টা করে তাদের আলাদা করে রাখতে।

প্রকল্পের প্রথম বড় সমস্যা ছিল, কারা এই গ্যাস উত্তোলনের লাইসেন্স দিতে পারবে, সে বিষয়। ফিলিস্তিন কোনো পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র নয়। তাই তাদের হাতে স্পষ্ট কোনো আইনি অধিকার ছিল না। ইসরায়েলি আদালত বলেছিল, গাজার উপকূলীয় জলসীমা আসলে ‘নো-ম্যানস ওয়াটার’ অর্থাৎ এটির মালিকানা কারও নয়।

অসলো চুক্তিতে ফিলিস্তিনিদের জলসীমার অধিকার স্বীকার করা হলেও সেখানে স্পষ্টভাবে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের উল্লেখ ছিল না; যা সাধারণত উপকূল থেকে ২০০ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। চুক্তিটি ছিল শুধু একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা। ফলে সমুদ্রসীমার স্পষ্ট সীমানা নির্ধারিত হয়নি।

সাধারণভাবে উপকূল থেকে ১২ বা ২০ মাইল পর্যন্তকে বলা হয় ‘টেরিটরিয়াল ওয়াটার’। গাজা মেরিন গ্যাসক্ষেত্র গাজার উপকূল থেকে ২০ মাইল দূরে অবস্থিত। ইসরায়েলের দাবি, গ্যাসক্ষেত্রটি ফিলিস্তিনের অধিকার নয়; বরং তাদের দেওয়া ইসরায়েলের ‘উপহার’।

পরিস্থিতির অবনতি ঘটে ২০০৭ সালে হামাস গাজা দখল করার পর। এরপর ইসরায়েল প্রকল্পটি আটকে দেয় এবং ব্রিটিশ গ্যাস কোম্পানি প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায়।
২০২৩ সালে ইসরায়েল মিসরের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ইগ্যাসকে গাজা মেরিন উন্নয়নের অনুমতি দিলেও গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় প্রকল্পটি আবার থেমে যায়।

সম্প্রতি জাতিসংঘের ফিলিস্তিনবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদন উপস্থাপনকারী ফ্রানচেসকা আলবানিজ বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতের মতে ইসরায়েলের ফিলিস্তিন দখল অবৈধ। ফলে যেকোনো বেসরকারি বা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এ দখলকৃত অঞ্চলে বিনিয়োগ করলে বা ব্যবসা চালিয়ে গেলে তা বৈশ্বিক অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
আলবানিজ বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানকে ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে ও ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে এমন পদক্ষেপে অংশ নিতে হবে। ইসরায়েল অবশ্য এই দাবিকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে।

Sunday, 13 April 2025

ফিলিস্তিনিদের দাবির সঙ্গে বাংলাদেশের সবাই আছে

 

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ‘মার্চ ফর গাজা’ গণজমায়েত
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ‘মার্চ ফর গাজা’ গণজমায়েতছবি: প্রথম আলো

আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের সব দল, মত, চিন্তা-দর্শনের মানুষ মজলুম ফিলিস্তিন ও মজলুম গাজার পাশে আছে, সহাবস্থান করছে।

আহমাদুল্লাহ আরও বলেন, ‘আমরা এক কাতারে দাঁড়িয়ে আজ বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিতে চাই, আমাদের মধ্যে বিভিন্ন চিন্তা, মতগত পার্থক্য, ভিন্নতা থাকতে পারে; কিন্তু মজলুম ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা, ভূমির অধিকারের দাবিতে আমরা প্রত্যেকটা বাংলাদেশের মানুষ ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আমরা প্রত্যেকে তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি।’শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ‘মার্চ ফর গাজা’ গণজমায়েতে তিনি এসব কথা বলেন। স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠা এবং ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধের দাবিতে এ গণজমায়েতের আয়োজন করে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট।

সমাবেশে ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী বলেছেন, ‘ভৌগোলিকভাবে আমরা ফিলিস্তিন থেকে অনেক দূরে হতে পারি, কিন্তু আজকের এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে, আমাদের হৃদয়ে বাস করে একেকটা ফিলিস্তিন, আমাদের হৃদয়ে বাস করে একেকটা গাজা, আমাদের হৃদয়ে বাস করে একেকটা আল কুদস।’

AD BANNAR