ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলে গাজা উপকূলবর্তী গ্যাসক্ষেত্র ‘গাজা মেরিন’-এর মালিকানা এবং সেখান থেকে গ্যাস উত্তোলনের পূর্ণ অধিকার পাবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। এমনটাই বলছেন খনিজ সম্পদ বিশেষজ্ঞ মাইকেল ব্যারন।
ব্যারনের দাবি, বর্তমান বাজারদরে গাজা মেরিন গ্যাসক্ষেত্র থেকে অন্তত ৪০০ কোটি ডলার পর্যন্ত আয়ের সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর গড়ে ১০ কোটি ডলার রাজস্ব পেতে পারে, যা ১৫ বছর ধরে চলতে পারে।
ব্যারন বলেন, ‘এ আয়ে ফিলিস্তিন কাতার বা সিঙ্গাপুরে পরিণত হবে না ঠিক, কিন্তু এটা হবে তাদের নিজেদের আয়। এতে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি পাবে তারা।’
গাজা উপকূলবর্তী গাজা মেরিন গ্যাসক্ষেত্রের মালিকানা নিয়ে প্রায় ৩০ বছর ধরে বিতর্ক চলছে। মালিকানা নিয়ে আইনি জটিলতার কারণে অনুসন্ধান কাজ দীর্ঘ সময় ধরে থেমে আছে।
ফিলিস্তিনপন্থী মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী একটি আইনজীবী প্রতিষ্ঠান ইতালির রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ইএনআইকে একটি সতর্কীকরণ চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি জ্বালানি মন্ত্রণালয় গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য যে অঞ্চলটিকে ‘জোন জি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তার প্রায় ৬২ শতাংশই ফিলিস্তিনের দাবিকৃত সামুদ্রিক জলসীমায় পড়ে। ইসরায়েলের জ্বালানি মন্ত্রণালয় সেখানে গ্যাস অনুসন্ধানের ছয়টি লাইসেন্স দিয়েছিল।
চিঠিতে আইনজীবীরা দাবি করেছেন, ইসরায়েল সেখানে গ্যাস অনুসন্ধানের কোনো বৈধ লাইসেন্স দিতে পারে না।
ব্যারন বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেলে, বিশেষ করে যেসব দেশের এখতিয়ারে বড় তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলো নিবন্ধিত, সেসব দেশ যদি স্বীকৃত দেয়, তবে আইনি অনিশ্চয়তা কার্যত শেষ হয়ে যাবে। এতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ একটি নিরাপদ নতুন আয়ের উৎস পাবে এবং নিয়মিত জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবে। এ জন্য তাদের ইসরায়েলের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না।
২০১৫ সালে জাতিসংঘের সমুদ্র আইনবিষয়ক কনভেনশনে (আনক্লজ) স্বাক্ষর করে ফিলিস্তিন। ২০১৯ সালে তারা তাদের সমুদ্রসীমা ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করে এবং এ–সংক্রান্ত বিস্তারিত দাবি উপস্থাপন করে। ইসরায়েল এ কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি।
ব্যারন বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেলে, বিশেষ করে যেসব দেশের এখতিয়ারে বড় তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলো নিবন্ধিত, সেসব দেশ যদি স্বীকৃত দেয়, তবে আইনি অনিশ্চয়তা কার্যত শেষ হয়ে যাবে। এতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ একটি নিরাপদ নতুন আয়ের উৎস পাবে এবং নিয়মিত জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবে। এ জন্য তাদের ইসরায়েলের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না।
ওই আইনি চিঠির পর ইএনআই ইতালিতে চাপ প্রয়োগকারী গোষ্ঠীগুলোর কাছে জানিয়েছে, এখনো কোনো লাইসেন্স ইস্যু করা হয়নি। কোনো অনুসন্ধান কাজও চলছে না।
গাজা উপকূলসংলগ্ন সমুদ্রসীমা বরাবর প্রায় ৯০ কিলোমিটার (৫৬ মাইল) দৈর্ঘ্যের একটি সামুদ্রিক গ্যাস পাইপলাইন ইসরায়েলের আশকেলন থেকে মিসরের আরিশ পর্যন্ত বিস্তৃত। সেখানে (আরিশ) গ্যাস তরলীকরণ করে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়।
গ্লোবাল উইটনেস নামের একটি সংস্থা দাবি করেছে, বেআইনিভাবে ফিলিস্তিনের জলসীমার ওপর পাইপলাইন তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এটি থেকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ কোনো রাজস্ব পায় না।
২০ বছরের বেশি সময় ধরে গাজা মেরিন থেকে ফিলিস্তিনিরা এক ফোঁটা গ্যাসও তুলতে পারেননি। ব্যারন বলেন, এ প্রকল্পের ভাগ্যই আসলে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের নীতির প্রতিচ্ছবি। একদিকে তারা চায় ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের ওপর নির্ভরশীল থাকুক, একই সঙ্গে চেষ্টা করে তাদের আলাদা করে রাখতে।
প্রকল্পের প্রথম বড় সমস্যা ছিল, কারা এই গ্যাস উত্তোলনের লাইসেন্স দিতে পারবে, সে বিষয়। ফিলিস্তিন কোনো পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র নয়। তাই তাদের হাতে স্পষ্ট কোনো আইনি অধিকার ছিল না। ইসরায়েলি আদালত বলেছিল, গাজার উপকূলীয় জলসীমা আসলে ‘নো-ম্যানস ওয়াটার’ অর্থাৎ এটির মালিকানা কারও নয়।
অসলো চুক্তিতে ফিলিস্তিনিদের জলসীমার অধিকার স্বীকার করা হলেও সেখানে স্পষ্টভাবে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের উল্লেখ ছিল না; যা সাধারণত উপকূল থেকে ২০০ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। চুক্তিটি ছিল শুধু একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা। ফলে সমুদ্রসীমার স্পষ্ট সীমানা নির্ধারিত হয়নি।
সাধারণভাবে উপকূল থেকে ১২ বা ২০ মাইল পর্যন্তকে বলা হয় ‘টেরিটরিয়াল ওয়াটার’। গাজা মেরিন গ্যাসক্ষেত্র গাজার উপকূল থেকে ২০ মাইল দূরে অবস্থিত। ইসরায়েলের দাবি, গ্যাসক্ষেত্রটি ফিলিস্তিনের অধিকার নয়; বরং তাদের দেওয়া ইসরায়েলের ‘উপহার’।