হঠাৎ করেই গত বুধবার রাতে ফেসবুক পোস্টে গায়িকা কনা জানিয়ে দেন বিচ্ছেদের খবর। ফেসবুকে বিয়ে বা বিচ্ছেদের খবর জানানো নতুন নয়। বিচ্ছেদ নিয়ে অনেকেই শুরুতে মুখ না খুললেও পরে বিচ্ছেদের কারণ নিজে থেকেই জানিয়ে দেন তাঁরা। দীর্ঘদিন সংসারের পরও কী কারণে বিচ্ছেদ ঘটেছিল বিনোদন অঙ্গনের পাঁচ তারকার, কী জানিয়েছিলেন তাঁরা?
২০২২ সালে আশফাকুর রহমানকে বিয়ে করেন পূর্ণিমা। বিয়ের খবরের পর প্রকাশ্যে আসে আগের সংসার ভাঙার খবর। জানা যায়, তিন বছর আগে ২০১৯ সালে আহমেদ জামাল ফাহাদের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় তাঁর। বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে জানা গিয়েছিল, দুজনের বনিবনা না হওয়া। এর বেশি তাঁরা বলেননি। পূর্ণিমা ও ফাহাদ ২০০৭ সালের ৪ নভেম্বর বিয়ে করেন। সাত বছরের মাথায় ২০১৪ সালে কন্যাসন্তানের মা হন তিনি।
গত বছরের মার্চে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাকিব সরকারের সঙ্গে বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। কী কারণ ছিল বিচ্ছেদের, তা নিয়ে গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রীর ভাষ্য ছিল এ রকম, ‘আমরা দুজনই চেষ্টা করেছি। যখন দেখেছি, চেষ্টা করেও লাভ হচ্ছে না, তখন আসলে চেষ্টাটা ছেড়ে দিয়েছি। একসঙ্গে থেকে তিক্ত হওয়ার চেয়ে বন্ধুত্বটা থাকা ভালো। যেহেতু সে (রাকিব সরকার) ফারিশের বাবা এবং এখনো ওর সঙ্গে আমার কথা হয় নিয়মিত, যোগাযোগ আছে। ফারিশকে নিয়ে কথা হয়, ফারিশের কী প্রয়োজন এবং সে খুব যত্নবান একজন মানুষ। তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই, কিন্তু সে ফারিশের ব্যাপারে এতটা কেয়ারিং, আমার মনে হয় পৃথিবীতে এমন বাবা পাওয়াটা খুব টাফ।’
বিনোদন অঙ্গনে আলোচিত বিবাহবিচ্ছেদের একটি ছিল তাহসান খান ও মিথিলা দম্পতির, যা অনেক ভক্ত মেনে নিতে পারেননি। হঠাৎ করেই ২০১৭ সালে গায়ক তাহসান খান ও অভিনেত্রী মিথিলা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যৌথভাবে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা দেন। সে সময় বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে মিথিলা ফেসবুকে লেখেন, ‘জীবনচলার পথে একটা সময় এসে আমরা বুঝতে পারলাম, দুজন মানুষ যার যার জায়গা থেকে দুই ধরনের জিনিস চাই। আমাদের যখন বিয়ে হয়, তখন আমাদের দুজনের বয়সই অনেক কম। আমাদের ক্যারিয়ারও একসঙ্গে গড়ে উঠেছে। এমন না যে কেউ কারও আগে বা পরে এসেছি। সেসব দিক থেকে আমাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা ছিল না। কিন্তু একটা সময় এসে মনে হচ্ছিল, ১১ বছর আগের একজন মানুষ আর পরের একজন এক থাকে না। অনেক পরিবর্তন দেখা যায়। তাই বিচ্ছেদের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হতে হয়েছি।’
সে সময় তাহসান বিচ্ছেদের কারণ প্রসঙ্গে লিখেছিলেন, ‘সমাজ কী বলবে—এই ভয়ে অভিনয় করে সারা জীবন কাটিয়ে দিতে হবে, আমরা দুজন এ ব্যাপারে একমত নই।’ ফেসবুকে তাঁরা লেখেন, ‘অতি দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমাদের বিবাহবিচ্ছেদ হচ্ছে। কয়েক মাস ধরেই আমরা বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। অবশেষে কোনো চাপে না থেকে আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমরা জানি, আমাদের এ সিদ্ধান্তে অনেকে ব্যথিত হবেন। সে জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।’
২০১৮ সালে হারুনুর রশীদের সঙ্গে আংটি বদল করেন অভিনয়শিল্পী শবনম ফারিয়া। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিয়ে হয় তাঁদের। বিয়ের ঠিক ১ বছর ৯ মাসের মাথায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছেদ হয় তাঁদের। তখন ফারিয়া বিচ্ছেদের বিষয়ে স্পষ্ট করে কাউকে কিছুই বলেননি। বিচ্ছেদের বছরখানেক পর তিনি ফেসবুকে লিখেছিলেন সাবেক স্বামীর নির্যাতনে তাঁর হাত পর্যন্ত ভেঙে গিয়েছিল। তিনি লিখেছিলেন, ‘মনে পড়ছে, কীভাবে আমি “দেবী” সিনেমার পুরো প্রমোশন ভাঙা হাত নিয়ে করেছি। যখন কেউ জানতে চেয়েছে কী হয়েছে, বলেছি সিঁড়ি থেকে পড়ে ব্যথা পেয়েছি! আমার সাহস ছিল না সবাইকে বলার, কীভাবে ব্যথা পেয়েছি! কারণ, আমি জানতাম এই মানুষটার সঙ্গেই থাকতে হবে, নইলে মানুষ কী বলবে! আমার মা সমাজে মুখ দেখাবে কীভাবে! আমার দুই বোন যে স্বপ্ন নিয়ে এত আয়োজনের প্ল্যান করছে, তাদের কী জবাব দেব!’ ঘটনাটা কাবিনের তিন মাস পরেই ছিল।’
২০২৪ সালে স্ত্রী অর্পিতা সমাদ্দারের সঙ্গে সাড়ে ৯ বছরের দাম্পত্যজীবনের ইতি টানেন আরিফিন শুভ। ফেসবুক পোস্টে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানান, ২০২৪ সালের ২০ জুলাই বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। শুভ ফেসবুকে লেখেন, ‘আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমি আর অর্পিতা আমরা হয়তো বন্ধু হিসেবেই ঠিক আছি, জীবনসঙ্গী হিসেবে নয়। আমরা ২০ জুলাই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি, বন্ধুত্বটুকু নিয়ে দুজনের সম্মতিতে বাকি জীবন নিজেদের মতো করে বাঁচব।’
ভালোবেসে বিয়ে করার পর শখ আর নিলয় উত্তরায় সংসার শুরু করেন। শুরুর দিকে তাঁদের সংসার বেশ ভালোই চলছিল বলে জানান তাঁরা দুজন। একটি টেলিকম কোম্পানির বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করতে গিয়ে খুব কাছাকাছি চলে আসেন শখ-নিলয়। এরপর ধীরে ধীরে তা প্রেমে পরিণত হয়। প্রেমের সম্পর্কও খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ‘অল্প অল্প প্রেমের গল্প’ সিনেমা মুক্তির পর তাঁরা দুজন আবার কাছাকাছি আসেন। এরপর বিয়ে করে সংসার শুরু করেন দুজন। ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি রাতে হঠাৎ বিয়ের কাজটি সেরে নেন শখ ও নিলয়। বিয়ের খবর জানাজানি হয়ে গেলে ফেসবুকে ‘রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস’ পরিবর্তন করে ‘ম্যারিড টু নিলয় আলমগীর’ লেখেন। পরের বছরের জুলাইয়ে সম্পর্ক ভাঙার পর শখ ‘রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস’ সিঙ্গেল লেখেন। অন্যদিকে নিলয়ের সম্পর্কের জায়গায় ছিল না শখের নাম। শুধু তা-ই নয়, নিলয় তাঁর ফেসবুক আইডির ‘অ্যাবাউট’ অপশন তখন ‘গোপন’ করে রেখেছিলেন।
২০১৯ সালের এপ্রিলে নীরবেই বিয়ের কাজ সেরেছিলেন গায়িকা কনা। ব্যবসায়ী গোলাম মো. ইফতেখারের সঙ্গে বিয়ের আগে সাত বছর প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন জনপ্রিয় এই গায়িকা। গত বুধবার সন্ধ্যায় সংগীতশিল্পী কনার সংসার ভাঙছে—এমন খবর প্রকাশ করে একটি গণমাধ্যম। আরেকজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে কনার সঙ্গে তাঁর স্বামী গোলাম মো. ইফতেখারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে—এমন খবরও প্রকাশও হয় গণমাধ্যমে। এর কয়েক ঘণ্টা পর বুধবার রাত ১১টার দিকে নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছেদের খবর জানান কনা। ফেসবুকে এক দীর্ঘ পোস্টে কনা লেখেন, ‘জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে—সবই আল্লাহর ইচ্ছা। ঠিক তেমনি যেকোনো বিচ্ছেদও হয় তাঁরই ইশারায়। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমি জানাচ্ছি যে দীর্ঘ ছয় বছরের বিবাহিত জীবনের পর আমি এবং গোলাম মোহাম্মাদ ইফতেখার গহিন গত ১৬ জুন ২০২৫ তারিখে আমাদের বিবাহবিচ্ছেদ সম্পন্ন করেছি। বিচ্ছেদ দুজনের জন্যই কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল এবং আমরা উভয়ই পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমেই এই পথে হেঁটেছি।’






