জুলাই সনদ নির্বাচিত সংসদ বাস্তবায়ন করবে নাকি নির্বাচনের আগেই আইনি ভিত্তি দিয়ে এর বাস্তবায়ন করা হবে-এই প্রশ্নেই বিরোধ প্রভাবশালী দলগুলোর মধ্যে।
বিএনপি চায় এখন কোনো আইনি ভিত্তি না দিয়ে নির্বাচিত সংসদের জন্য রেখে দেওয়া। গণ-অভ্যুত্থানের বছর পূর্তিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে যে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়া হয়েছে, তাতেও বলা হয়েছে, নির্বাচিত সংসদ সংস্কারের সনদ বাস্তবায়ন করবে।তবে জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন দল এবং গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের দল এনসিপি নির্বাচনের আগেই আইনি ভিত্তি দিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবিতে একটা অনড় অবস্থান নিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ভোট হলেই ক্ষমতার যাওয়ার সম্ভবনা দেখছে বিএনপি। সেকারণে দলটি ও এর মিত্র দলগুলো নির্বাচিত সংসদের ওপর সংস্কারের সনদ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আর বিএনপির ওপর রাজনৈতিক চাপ তৈরির কৌশল হিসেবে জামায়াত ও এনসিপিসহ বিভিন্ন দল পাল্টা অবস্থান নিয়েছে।
ফলে প্রভাবশালী দলগুলোর এমন পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে জুলাই সনদ বাস্তবয়নের প্রশ্নে চ্যালেঞ্জ দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
তারা বলছেন, জুলাই-অগাস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সংস্কার বা কোনো সনদ তৈরির বিষয় সেভাবে আসেনি। তখন একটাই লক্ষ্য দৃশ্যমান ছিল, তা হলো আওয়ামী লীগের শাসনের পতন।
সেই শাসনের পতনের পর ছাত্র নেতৃত্ব এবং বিভিন্ন মহল থেকে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের বিষয় সামনে আনা হয়েছে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারও সংস্কারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন খাতের জন্য কমিশন গঠন করে। কমিশনগুলোর প্রস্তাব সমন্বয় করে জুলাই সনদ তৈরি ও বাস্তবায়নের জন্য প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও গঠন করা হয়। ফলে সংস্কারের বিষয়টি যে সরকারেরও অন্যতম একটি অগ্রাধিকার, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই বিশ্লেষকদের।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিএনপি, জামায়াতসহ সব দলই স্ব স্ব অবস্থান থেকে সংস্কারের বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেছিল। সেই কমিশন ছয় মাস ধরে ৩০টির বেশি দলের সঙ্গে আলোচনা করে এখন সনদের চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করেছে।
ফলে ছাত্র নেতৃত্বসহ বিভিন্ন মহলের চাওয়া এবং সরকারের অগ্রাধিকারের প্রেক্ষাপটে জুলাই সনদের ব্যাপারে বিএনপিসহ দলগুলোর ওপর একটা রাজনৈতিক চাপ রয়েছে।
বিএনপি যদিও নির্বাচিত সংসদ গঠনের আগে সনদ বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তি দেওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বা বাস্তবতা বিবেচানায় নিয়ে দলটিকে তাদের অবস্থান নিয়ে আবার ভাবতে হচ্ছে।
গত সোমবার রাতে দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়েছে। বিএনপির নেতৃত্ব তাদের মিত্র জোট গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন গত মঙ্গলবার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ দলটির পক্ষে সংস্কারের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে প্রতিনিধিত্ব করছেন।
তিনি বিবিসি বাংলাকে জানান, সংস্কারের সনদ বাস্তবায়নের উপায় আলোচনার মাধ্যমে বের করা সম্ভব হবে বলে তারা মনে করছেন। তারা সে ব্যাপারে ঐকমত্য কমিশন প্রস্তাব দেবেন। তবে তা এখনই গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে রাজি হননি তিনি।
তবে বিএনপির অন্য একাধিক সূত্র ও এর মিত্র দলগুলোর একাধিক নেতা বলেছেন, সনদ বাস্তবায়নের আইনগত ভিত্তি নিয়ে যেহেতু দলগুলোর মধ্য মতপার্থক্য, ফলে এই বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের মতামতের জন্য রেফারেন্স পাঠানোর প্রশ্নে তাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা সাইফুল হক বিবিসি বাংলাকে বলেন, আদালতের মতামতের ভিত্তিতে দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা সম্ভব হতে পারে। এক্ষেত্রে তারা অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আগে আপিল বিভাগের মতামত নেওয়ার বিষয়কে উদাহরণ হিসেবে টানছেন।
যদিও সেই মতামত নেওয়ার বিষয় নিয়ে বিতর্ক আছে। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বিবিসিকে বলেন, নির্বাচনের আগে সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে তা বাস্তবায়ন সম্ভব। এর ভিত্তিতেই নির্বাচনে যেতে হবে।
