Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Wednesday 29 October 2014

কারাগারে আয়েশে থাকতে টাকা পেতেন হুজি প্রধান

মোহাম্মদ জামিল খান ও তাজলিনা জামিলা খান॥
নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজি-বি) সদস্যরা কাশিমপুর কারাগারে আটক দলীয় প্রধানকে প্রতি মাসে বেশ ভালো পরিমাণ টাকা দিত। কারাগারের ভেতর যাতে তিনি আরাম-আয়েশে থাকতে পারেন সেজন্যই এ টাকা দেওয়া হত বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছে।
মাওলানা আবু সাইদ ওরফে আবু জাফর ২০০৯ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি তিনি। কারাগারে থাকা সত্ত্বেও মুফতি জাফর দেশের বিপজ্জনক জঙ্গি সংগঠন হওয়ার জন্য সংগঠনটির সদস্যদের সব ধরনের নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।
রিমান্ডে হুজি বাংলাদেশে অপারেশন শাখার প্রধান মাওলানা মোহাম্মদ রফিক আহমেদ গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন, ‘জেলে থাকা অবস্থায় স্বাভাবিক ও ভালো জীবনযাপনের জন্য হুজুরকে (আবু জাফর) আমরা প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা দিতাম খাবার ও অন্য সেবার জন্য।’
সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরা ও টিকাটুলি এবং নারায়ণগঞ্জ এলাকায় পৃথক অভিযানে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) রফিকসহ বোমা বিশেষজ্ঞ মো. উমর ওরফে ফয়জুল ওরফে রবি, সদস্য মো. নাদিম আহমেদ ওরফে সুমন এবং সালাহউদ্দিনকে গ্রেফতার করে।
ডিবি পুলিশের উচ্চ পদস্থ এক কর্মকর্তা গতকাল জানান, পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে সুমন কারাগারে আবু জাফরকে এ টাকা পৌঁছে দিত।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, মানুষ হত্যা, জিহাদের এবং মানুষকে লক্ষ্য করার উপায়ের বর্ণনা দিয়ে জেলে থাকা অবস্থায়  ‘নির্ভয়ে হত্যার কৌশল’ নামে একটি বই লেখেন আবু জাফর।
গোয়েন্দারা বইটির খোঁজ করছেন এবং বইটির একটি কপি ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে জানিয়ে ডিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘হুজি বাংলাদেশের সদস্যরা চায় বইটি শুধু বাংলাদেশ নয়, মধ্যপ্রাচ্যেও প্রকাশ হোক।’
মুফতি জাফর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হুজি বাংলাদেশের সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক ও নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। গোয়েন্দারা মুফতি জাফর যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করত তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে।
ডিবির আরেক উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাইরে থেকে পাওয়া অর্থ কারাগারের অসাধু কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার কাজে ব্যবহার করছে মুফতি জাফর।
ওই কর্মকতা আরও জানান, হুজি বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্য দেশের জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে নিজেদের সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তোলা। তারা সদ্য গঠিত বাংলাদেশ জিহাদি গ্রুপের প্রধান। এজন্য দেশে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে চায় এ সংগঠনের সদস্যরা।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হুজি বাংলাদেশের সদস্যরা দুই ব্যক্তির কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেয়ে সাতক্ষীরার হোমরা পয়েন্টে ঘাঁটি তৈরি শুরু করেছে বলেও ডিবি কর্মকর্তা জানান।
জিজ্ঞাসাবাদের সময় গ্রেফতারকৃতরা অনেক তথ্য দিয়েছে  জানিয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সতর্কতার সঙ্গে আমরা সবকিছু পর্যালোচনা করছি।’
কাশিমপুর উচ্চ নিরাপত্তা কারাগারের সুপার মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, কর্মকর্তাদের ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জানা মতে গত কয়েক মাসে শুধু তার স্ত্রী এবং ছেলে কারাগারে তাকে দেখতে এসেছে।’
মুফতি জাফর কারাগারের নিরাপত্তা এড়িয়ে বই লিখে তা বাইরে পাঠিয়েছে এমন অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন জেল সুপার।