Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Friday 13 June 2014

ভয়ঙ্কর শিশু পর্নোগ্রাফি শিশুসাহিত্যিক টিপু কিবরিয়াসহ গ্রেফতার ৩


আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফির ভয়ঙ্কর একটি চক্র বাংলাদেশে বসেই দীর্ঘ নয় বছর পথশিশুদের ব্যবহার করে পর্নো ভিডিও তৈরি করে আসছিল। আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দেশের শিশুসাহিত্যিক টিপু কিবরিয়াসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সমকাল প্রতিবেদক
ভয়ঙ্কর শিশু পর্নোগ্রাফিআন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফির ভয়ঙ্কর একটি চক্র বাংলাদেশে বসেই দীর্ঘ নয় বছর পথশিশুদের ব্যবহার করে পর্নো ভিডিও তৈরি করে আসছিল। আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দেশের শিশুসাহিত্যিক টিপু কিবরিয়াসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ইন্টারপোলের তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গল ও বুধবারে অভিযান চালিয়ে রাজধানীর খিলগাঁও, মুগদা ও গোড়ান থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
টিপুর মুগদার স্টুডিও থেকে কয়েক শতাধিক ছেলেশিশুর ছবি উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া সেখানে বিপুলসংখ্যক শিশু পর্নো ভিডিও ও স্থিরচিত্র, লুব্রিকেটিং জেল, আন্ডারওয়্যার পাওয়া গেছে। ২০০৫ সাল থেকে ছেলেশিশুদের দিয়ে পর্নো ছবি এবং তাদের আপত্তিকর স্থির ও ভিডিও বিদেশে পাচার করে আসছিলেন টিপু। এই শিশুদের বয়স ১০ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে। তবে কোনো মেয়েশিশুর ভিডিও পাওয়া যায়নি। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশের অন্তত আট আন্তর্জাতিক পর্নো ব্যবসায়ীর কাছে এসব পর্নো ভিডিও ও স্থিরচিত্র পাচার করে আসছিলেন টিপু। ওই আট আন্তর্জাতিক পর্নো ব্যবসায়ীকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে পর্নো ছবি বিক্রি বাবদ ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অসংখ্য রিসিভ কপি উদ্ধার করেছে সিআইডি। শিশুদের ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফির এমন আন্তর্জাতিক চক্র খোদ রাজধানীতে বসেই দীর্ঘ নয় বছর ধরে নির্বিঘ্নে এসব অপকর্ম চালিয়ে আসছিল। শিশুসাহিত্যিক হয়ে শিশুদের ব্যবহার করেই পর্নোগ্রাফির সঙ্গে জড়িত হওয়ায় অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেন। টিপুর সহযোগী নুরুল আমিন ও এক শিশু এরই মধ্যে এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
ইন্টারপোলের বরাত দিয়ে সিআইডি বলছে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পর্নো ব্যবসায়ী চক্রের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই জড়িত টিপু কিবরিয়া। মুগদার স্টুডিওতে তিনি ছেলেশিশুদের দিয়ে পর্নো ছবি তৈরি করতেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এসব তথ্য স্বীকার করেছেন। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি এ বিষয়ে জানায়।সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম শাখার অতিরিক্ত ডিআইজি শাহ আলম জানান, আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের তথ্যের ভিত্তিতে সিআইডি শিশু পর্নোগ্রাফির বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। ইন্টারপোল জানায়, ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশের শিশু পর্নোগ্রাফি বিদেশে পাচার হয়। তারা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগটির বিষয়ে নজরদারি করছিল। একপর্যায়ে তারা টিপুর চেহারা শনাক্ত করেন। চূড়ান্তভাবে টিপু কিবরিয়ার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। এর পর মঙ্গলবার খিলগাঁওয়ের তারাবাগ এলাকার ১৫১/২/৪২ নম্বর বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বাসা থেকে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের কিছু মানি রিসিট পাওয়া যায়। সেখানে শাহারুলের নাম ছিল। এর পর টিপুর তথ্যের ভিত্তিতে মুগদার স্টুডিওতে অভিযান চালিয়ে তার সহযোগী নুরুল আমিনকে গ্রেফতার এবং এক শিশুকে উদ্ধার করা হয়। সেখানে পাওয়া যায় শতাধিক পর্নো সিডি, ৭০টি লুব্রিকেটিং জেল, ৪৮টি আন্ডারওয়্যার, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্টিল ও ভিডিও ক্যামেরা। টিপু ও নুরুলের তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার গোড়ান থেকে তাদের আরেক সহযোগী শাহারুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। শাহারুলের মাধ্যমেই অর্থ লেনদেন করা হতো। চক্রের আরেক সদস্য নুরুল ইসলাম পলাতক। এ বিষয়ে মুগদা থানায় ২০১২ সালের পর্নোগ্রাফি আইনে একটি মামলা হয়েছে। তাদের তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
শাহ আলম আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে পর্নো ভিডিও তৈরি করে ইন্টারনেটে বিভিন্ন পে-সাইটে তা বিক্রি করে আসছিলেন টিপু কিবরিয়া, যার মূল নাম টি আই এম ফখরুজ্জামান। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে তিনি টাকা গ্রহণ করতেন। তার টার্গেট ছিল কেবল ছেলে পথশিশু।সিআইডি সূত্র জানায়, ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশে শিশু পর্নোগ্রাফি তৈরি করে বিদেশে পাঠানো হয় বলে অভিযোগ পায় ইন্টারপোল। দীর্ঘদিন নজরদারির একপর্যায়ে ইন্টারপোল টিপুর চেহারা অনেকটাই শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। চলতি বছরে এসে ইন্টারপোল নিশ্চিত হয়, এটি টিপু কিবরিয়া। মুগদায় তার স্টুডিওতে তিনি ছেলে পথশিশুদের দিয়ে পর্নোগ্রাফি করতেন। এক সপ্তাহ আগে ইন্টারপোল এ বিষয়ে সিআইডিকে বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠায়।
সিআইডির দাবি, শিশু পর্নোগ্রাফির সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি টিপু কিবরিয়া স্বীকার করেছেন। এরই মধ্যে নুরুল আমিন ও উদ্ধারকৃত শিশু ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জার্মানি, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশের আটজন গ্রাহকের কাছে এগুলো বিক্রি করা হতো বলেও জানা গেছে। ওই আট ক্রেতাকে আইনের আওতায় নিতে ইন্টারপোলের সাহায্য চাওয়া হবে। এক জার্মান ও এক সৌদি নাগরিকের সঙ্গে তার আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ এবং ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে টাকা গ্রহণের বেশ কিছু রিসিট কপি পাওয়া গেছে।
সিআইডির পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম জানান, বিদেশি গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী ছেলেশিশুদের দিয়ে পর্নো ছবি তৈরি করতেন টিপু। তিনি ৩০০-৪০০ টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে পথশিশুদের এ কাজে ব্যবহার করতেন। দালালদের মাধ্যমে তিনি এই শিশুদের সংগ্রহ করতেন। তিনি প্রথম স্থির ছবি তুলতেন। এর পর তাদের দিয়ে পর্নো ভিডিও বানিয়ে বিভিন্ন দেশে বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা আয় করতেন। পাঁচ শতাধিক শিশুকে এ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিশুসাহিত্যিক টিপু কিবরিয়ার লেখা প্রায় অর্ধশত বই রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ঢাকার একটি জনপ্রিয় প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন। পাশাপাশি তিনি ফ্রিল্যান্স আলোকচিত্রী হিসেবেও কাজ করেন।
http://adf.ly/?id=353839