Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Thursday 23 January 2014

সাবেক সাত মন্ত্রী-এমপির দুর্নীতির খোঁজে দুদক

সাবেক সাত মন্ত্রী-এমপির দুর্নীতির খোঁজে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের মধ্যে মহাজোট সরকারের তিনজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীও রয়েছেন। তারা হলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান।
হকিকত জাহান হকি/জয়দেব দাশ
সাবেক সাত মন্ত্রী-এমপির দুর্নীতির খোঁজে দুদকসাবেক সাত মন্ত্রী-এমপির দুর্নীতির খোঁজে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের মধ্যে মহাজোট সরকারের তিনজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীও রয়েছেন। তারা হলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান। এর মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচনে মান্নান খান হেরে গেছেন। বাকি দু'জন বর্তমানে এমপি। তবে তাদের মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়নি। অন্যরা হলেন ঢাকার এমপি আসলামুল হক, এনা প্রপার্টিজের কর্ণধার রাজশাহীর এনামুল হক এমপি ও কক্সবাজারের এমপি আবদুর রহমান বদি। আর একজন জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি এমএ জব্বার। একটি দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ মন্ত্রিসভা গঠনের সময় মহাজোটের যেসব মন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী বাদ দিয়েছেন তাদের মধ্যে এই ৩ জন রয়েছেন।
গতকাল বুধবার এই সাত ভিআইপির সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক পৃথকভাবে সাতজন চৌকস কর্মকর্তা নিয়োগ করেছে। কর্মকর্তারা মূলত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামার সম্পদ অনুসন্ধানে কাজ
করবেন। দুদক জানায়, শিগগির তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হবে। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি, গৃহনির্মাণ সংস্থা রিহ্যাব, বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থায় চিঠি দিয়ে তাদের নামে-বেনামের সব সম্পদ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে। তারা বিদেশে অর্থ পাচার করেছে কি-না, সে বিষয়টি সূক্ষ্মভাবে যাচাই করা হবে।অনুসন্ধান কর্মকর্তারা ওই মন্ত্রী-সাংসদের সম্পদের প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দেবেন। নোটিশপ্রাপ্তির সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাদের ঢাকায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সম্পদের হিসাব বিবরণী পেশ করতে হবে। যাদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের হলফনামায় উল্লেখ করা সম্পদের তথ্য সম্পর্কে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ৬০টি রিপোর্ট অভিযোগ হিসেবে আমলে নিয়ে প্রথম পর্যায়ে ছয়জনের সম্পদের হিসাব অনুসন্ধান করা হচ্ছে। দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান সমকালকে বলেন, হলফনামায় যাদের অস্বাভাবিক সম্পদের উল্লেখ করা হয়েছে, মূলত তাদের হিসাব অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এর বাইরে তাদের নামে আরও কোনো সম্পদ আছে কি-না, তা খতিয়ে দেখা হবে। নামে-বেনামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাতক্ষীরা-৩ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হকের সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য উপপরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খানের সম্পদ অনুসন্ধানে উপপরিচালক নাসির উদ্দিনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি ঢাকা-১ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সালমা ইসলামের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও পটুয়াখালী-৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সাংসদ মাহবুবুর রহমানের সম্পদ অনুসন্ধানে উপপরিচালক খায়রুল হুদা, ঢাকা-১৪ আসনে নির্বাচিত সাংসদ আসলামুল হকের সম্পদ অনুসন্ধানে উপপরিচালক শেখ ফাহিয়াজ আলম, কক্সবাজার-৪ আসনে নির্বাচিত সাংসদ আবদুর রহমান বদির সম্পদ অনুসন্ধানে উপপরিচালক আহসান আলীকে, রাজশাহী-৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সাংসদ এনামুল হকের সম্পদ অনুসন্ধানে উপপরিচালক সৈয়দ তাহসিনুল হককে ও সাবেক সাংসদ এমএ জব্বারের সম্পদ অনুসন্ধানে সহকারী পরিচালক মাসুদুর রহমানকে নিযুক্ত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে 'জিরো টলারেন্স' দেখানোর কথা বলা হয়েছে। এ রকম সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পেয়ে দুদক গা-ঝাড়া দিয়ে মাঠে নেমেছে। এতে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর মনোভাবের প্রতিফলন ঘটবে মনে করা হচ্ছে।
আ ফ ম রুহুল হক :হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর স্ত্রী ইলা হকের ব্যাংক ব্যালান্স বেড়েছে ১৬৫ গুণ। একই সময়ে অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হকের ব্যাংক ব্যালান্স বেড়েছে ১০ গুণ। পাঁচ বছর আগে নির্বাচনী মাঠে নামার সময় রুহুল হক ও তার স্ত্রীর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত টাকার পরিমাণ ছিল ৯২ লাখ টাকা। এখন তাদের ব্যাংক ব্যালান্সের পরিমাণ ১০ কোটি ১৫ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। ২০০৮ সালে স্ত্রীর নামে ব্যাংকে ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৩০ টাকা। এখন ৭ কোটি ৫৩ লাখ ১১ হাজার ২৪০ টাকা। এ ক্ষেত্রে পাঁচ বছরে বেড়েছে ১৬৫ গুণ। সঞ্চয়পত্রে এবার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে নিজের নামে হয়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ ৬৫ হাজার ৯২২ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৩৪ লাখ ২৫ হাজার ৫৬৫ টাকা।
আবদুল মান্নান খান :পাঁচ বছর আগেও ১০ লাখ ৩৩ হাজার টাকার সম্পত্তি ছিল তার নামে। অল্পদিনের ব্যবধানে তা হয়েছে ১১ কোটি তিন লাখ টাকা। আগে বার্ষিক আয় ছিল তার তিন লাখ ৮৫ হাজার টাকা। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পরই তার আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে বছরে তিন কোটি ২৮ লাখ টাকায়। পাঁচ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে ১০৭ গুণ। এ ছাড়া তিনি ধানম িতে দুটি ফ্ল্যাটের মালিক। হলফনামায় ফ্ল্যাট দুটির মূল্য দেখিয়েছেন ১ কোটি ৮১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। এ ছাড়া রয়েছে প্লটসহ অন্যান্য সম্পদ। পুঁজিবাজার বা সঞ্চয়পত্র থেকে আগে তার আয় না থাকলেও এবারে আয় ১ লাখ ১১ হাজার টাকা। আগে মৎস্য খাত ও রেমিট্যান্স থেকে কোনো আয় না থাকলেও এবার হলফনামায় তা দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৪৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন অতীতে নেই উল্লেখ করলেও এবার 'নেই'-এর স্থলে উল্লেখ আছে ১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এ ছাড়া তার মাছের খামার যুক্ত হয়েছে পাঁচটি।
মাহবুুবুর রহমান :সম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রে পাঁচ বছরে তার হাতে যেন আলাদিনের চেরাগ ছিল। গত পাঁচ বছরে ২০ একর জমির মালিক থেকে তিনি হয়েছেন ২ হাজার ৮৬৫ একর জমির মালিক। গণমাধ্যমে এই সম্পদ বিবরণী প্রকাশের পর তিনি একটি ব্যাখ্যা দিয়ে বিজ্ঞাপন দেন। সেখানে তিনি বলেন, তার জমির পরিমাণ প্রকৃতপক্ষে ২৮ দশমিক ৬৫ একর। পাঁচ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ছাড়া কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ না থাকা স্ত্রীর নামে এখন ১ কোটি ২৬ লাখ ৭১ হাজার টাকার সম্পদ। নিজের নামে রয়েছে ৩৬ লাখ ৩৩ হাজার ১১২ টাকার স্থাবর সম্পদ, যা পাঁচ বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৫ কোটি ২৫ লাখ ৬৬ হাজার ৭২ টাকা।
আসলামুল হক :আসলামুল হকের জমির পরিমাণ বেড়েছে ৩৪ গুণের বেশি। ২০০৮ সালে হলফনামার তথ্য অনুযায়ী তিনি ও তার স্ত্রী মাকসুদা হক ৪ একর ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ জমির মালিক ছিলেন। সে সময় ওই মূল্য ছিল ২০ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ টাকা। দশম সংসদ নির্বাচনে পেশ করা হলফনামায় তিনি ও তার স্ত্রীর জমির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ১৪৫ দশমিক ৬৭ একর (১৪ হাজার ৫৬৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ) এবং দাম উলেল্গখ করা হয়েছে মাত্র ১ কোটি ৯২ লাখ ৯৯ হাজার ৫০০ টাকা।
এনামুল হক :২০০৮ সালে শুধু বেতন-ভাতা থেকে তার বছরে আয় ছিল ২০ লাখ টাকা। পাঁচ বছর পর এখন কৃষি, বাড়ি ও দোকানভাড়া, ব্যবসা ও পেশা থেকে বছরে তার আয় হয় ৫০ লাখ টাকা। পাঁচ বছর আগে তার পরিবারের পোষ্যদের ৭ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ টাকা বার্ষিক আয় থাকলেও এবারের হলফনামায় পোষ্যদের কোনো আয়ের উৎস নেই উল্লেখ করা হয়। তার নিজের, স্ত্রীর ও অন্যদের মোট ১৬ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার সাধারণ শেয়ার থেকে কোনো আয় নেই উল্লেখ করা হয় হলফনামায়। পাঁচ বছর আগে তার স্ত্রীর নামে থাকা ২ কোটি ৮৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৩৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকায়।
আবদুর রহমান বদি :হলফনামায় উল্লেখ করা সম্পদের হিসাব অনুযায়ী আবদুর রহমান বদির আয় বেড়েছে ৩৫১ গুণ। হলফনামায় বলা হয়, গত পাঁচ বছরে আয় করেছেন ৩৬ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪০ টাকা। তার বার্ষিক আয় সাত কোটি ৩৯ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৮ টাকা। আর বার্ষিক ব্যয় দুই কোটি ৮১ লাখ ২৯ হাজার ৯২৮ টাকা। এর আগে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জমা দেওয়া হলফনামায় বলেছিলেন, তখন তার বার্ষিক আয় ছিল দুই লাখ ১০ হাজার ৪৮০ টাকা। ব্যয় ছিল দুই লাখ ১৮ হাজার ৭২৮ টাকা।
এমএ জব্বার :২০০৮ সালের হলফনামায় বলা হয়, ওই সময় তার বার্ষিক আয় ছিল কৃষি খাতে ২০ হাজার, বাড়ি, দোকানভাড়া থেকে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭২৯ টাকা এবং শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে ৪৯ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে ২৩ দশমিক ৩৬৬ একর, স্ত্রীর নামে ১১ দশমিক ২৩৫ একর ও নির্ভরশীলদের নামে ৪ দশমিক ০৪৮ একর কৃষিজমি ছিল। অকৃষিজমির মধ্যে নিজ নামে ৭৪ লাখ ৮৫ হাজার ৪০২ টাকার জমিসহ একটি দালান এবং ঢাকা ও খুলনায় ৪ লাখ ৮২ হাজার ৮২৬ টাকা মূল্যের চারটি দালান উল্লেখ করা হয়েছিল।
http://adf.ly/?id=353839