Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Friday 8 November 2013

দায় আহ্বানকারী দলগুলোকেই নিতে হবে হরতালের নামে নৃশংসতা


হরতালকে এখন আর যা-ই হোক, রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না। হরতাল হয়ে উঠেছে নৃশংস, কিছু রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত ও পেশাদার অপরাধীর অপকর্মের উপলক্ষ।
হরতাল ডাকার অধিকার যদি রাজনৈতিক দলগুলোর থাকে, তবে হরতাল পালন করা বা না করার অধিকারও জনগণের রয়েছে। কিন্তু সেটা রাজনৈতিক দলগুলো মানতে নারাজ। আগে হরতাল মানে ছিল পিকেটিং, রাজনৈতিক কর্মীদের যান চলাচলে বাধা দেওয়ার চেষ্টা। আর হরতাল মানে এখন আগুনে পোড়ানো, পুড়িয়ে মারা ও বোমা-ককটেল মেরে অঙ্গহানি ঘটানো। অর্থাৎ ভয় দেখিয়ে জনগণকে হরতাল পালনে বাধ্য করার চেষ্টা করা। হরতালে এখন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা মাঠে থাকেন না, থাকে কিছু দুর্বৃত্ত ও ভাড়াটে, যারা রাজনৈতিক দলগুলোর হয়ে নৃশংসতা চালায়।
সাম্প্রতিক সময়ে দুই দফায় ৬০ ঘণ্টা করে হরতাল পালনের সময় এ ধরনের নৃশংসতার নজির প্রত্যক্ষ করেছে দেশবাসী। গত সোমবার গাজীপুরে হরতাল-সমর্থকদের আগুনে ঝলসে যাওয়া কিশোর মনির গতকাল মারা গেছে হাসপাতালে। এ ধরনের সহিংসতা কখনো রাজনৈতিক কর্মসূচি হতে পারে না। কিন্তু যেহেতু এই কর্মসূচিগুলো সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে রাজনৈতিক দলগুলো পালন করছে, তাই এর দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোকে নিতে হবে।
আমরা স্পষ্ট করেই বলতে চাই যে প্রথমত হরতালের সময় এ ধরনের নৃশংসতার দায় হরতাল আহ্বানকারী রাজনৈতিক দল বা জোটেরই। কর্মসূচি ডাকলে সেটাকে শান্তিপূর্ণ রাখা রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব। কিন্তু তারা সন্ত্রাস ও সহিংসতার দায় চাপাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা সরকারের ওপর। বিএনপির কয়েকজন নেতার দাবি, পুলিশের জন্য হরতালের সময় তাঁরা মাঠে থাকতে পারছেন না। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে, কিন্তু যে দলের নেতারা পুলিশের ভয়ে মাঠে নামতে পারেন না, সেই দল হরতাল ডাকে কিসের ভরসায়? ফলে এটা স্পষ্ট যে নিজেরা ঘরে বসে থেকে হরতাল সফলের জন্য পেশাদার অপরাধী ও দুর্বৃত্তদের ওপর নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলো।
হরতালে এই নৃশংসতার দায় সরকার ও সরকারি দলকেও নিতে হবে। বিরোধী দল যদি স্বাভাবিকভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করতে না পারে, তবে ভিন্নভাবে এর প্রকাশ ঘটার আশঙ্কা থাকে। আর বর্তমানে হরতালের মতো কর্মসূচি যে দুর্বৃত্তনির্ভর হয়ে পড়েছে, সেটা পুরোপুরি আইনশৃঙ্খলার বিষয়। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা ও দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সরকারের দায়িত্ব। সরকার তা করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, হরতাল ডেকে ঘরে বসে থাকলেও আবার হরতাল ডাকার পরিকল্পনা করছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। আমরা হরতালের নামে আর কোনো সহিংসতা ও নৃশংসতা দেখতে চাই না। আমরা আশা করব, এ ধরনের অনৈতিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মসূচি থেকে দলটি সরে আসবে।