Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Friday 8 November 2013

দাওয়াত বহাল আছে আলোচনায় আসুন


বিরোধীদলীয় নেতাকে গণভবনে বসার আমন্ত্রণ এখনও বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নির্বাচনকালীন 'সর্বদলীয় সরকার' গঠনের জন্য সংলাপে বসতে তাকে দেওয়া দাওয়াত এখনও বহাল রয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতার উদ্দেশে তিনি বলেছেন, হরতালের নামে মানুষ হত্যা করবেন না। আলোচনায় আসুন, আলোচনার দরজা খোলা। দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠকের ব্যাপারে তিনি বলেন, তার দলের সাধারণ সম্পাদক সব সময় প্রস্তুত। তাকে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের (বিএনপি) পক্ষে কে সিদ্ধান্ত নেবেন? কেননা, তাদের মহাসচিব এখনও ভারপ্রাপ্ত।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এসব কথা বলেন। একই সঙ্গে বিরোধীদলীয় নেতাকে আর টেলিফোন করবেন না জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, তবে বিএনপি নেত্রী ফোন করে এলে তিনি থাকবেন। তার সঙ্গে আলোচনাও করতে চান তিনি।
দুই নেত্রীর ফোনালাপের পরও সংলাপ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় সমঝোতার উদ্যোগ নেন ব্যবসায়ী নেতারা। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে চলমান রাজনৈতিক সংকটে বড় দুই দলকে সমঝোতায় রাজি করানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তারা। ৬৫ জন ব্যবসায়ীর একটি প্রতিনিধি দল গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। সকাল ১১টা ২০ মিনিট থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের মতবিনিময় হয়। এর আগে শনিবার খালেদা জিয়ার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন ব্যবসায়ী নেতারা। বৈঠকে সংকট নিরসনে দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ে নিঃশর্ত আলোচনায় রাজি হন খালেদা জিয়া।
বৈঠকে ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে তাদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরামউদ্দিন আহমদ, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, আনিসুল হক, মীর নাসির হোসেন, এ. কে. আজাদ, আকরাম হোসেন, প্রথম সহসভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী, সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি সবুর খান, মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি রোকেয়া আফজাল রহমান, বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম, বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান, বিটিএমএ সভাপতি জাহাঙ্গীর আল আমিন এবং এফবিসিসিআইর সাবেক সহসভাপতি ও পরিচালকরা যোগ দেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংসদের হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব শেখ ওয়াহিদ উজ জামান এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, সংলাপের জন্য আবারও খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করতে একাধিক ব্যবসায়ী প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানালে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি তো দাওয়াত দিয়েই রেখেছি। সমঝোতার প্রস্তাবও দিয়ে রেখেছি। আমার সেই দাওয়াতই বহাল আছে। এখন বিরোধীদলীয় নেতা টেলিফোন করে আসতে পারেন। আমি থাকব।'

সংলাপের আগে বিরোধী দলকে হরতাল প্রত্যাহার করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিরোধী দলীয় নেতা জনগণকে হরতালের হাত থেকে রেহাই দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে যে কোনো সময় আসতে পারেন।
বাসস জানায়, ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'আমরা সব সময় বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতায় পেঁৗছতে রাজি আছি। এ জন্য বিরোধী দল সংসদে এসে তাদের প্রস্তাব দেবে_ এই আশায় অধিবেশনের সময় বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া আমি নিজে তাকে ফোন করেছি। কিন্তু তিনি আমার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে হরতাল দিয়ে ২০-২৫ জন নিরপরাধ মানুষ হত্যা করেছেন। এখন এসব অসহায় মানুষের দায়িত্ব কে নেবে? বিরোধীদলীয় নেতাকে অবশ্যই এর জবাব দিতে হবে।'
এ সময় ব্যবসায়ী নেতারা বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে বৈঠকের জন্য সুনির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণের অনুরোধ জানালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'তারিখ দেওয়ার কোনো দরকার নেই। আমার দরজা সব সময় খোলা আছে। একবার ফোন করে আমি অপমানিত হয়েছি। আপনারা ব্যবসায়ী নেতারা তাকে আলোচনায় আনতে না পারলে তার দায়িত্ব কে নেবে?'

সাংবিধানিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখতে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সংবিধান সংশোধন করে অবৈধ ক্ষমতা গ্রহণের পথ রুদ্ধ করেছে। পরবর্তী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ীই হবে- এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যথায় কোনো নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলে নির্বাচন দীর্ঘদিনের জন্য অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। এ অবস্থায় দেশের মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'অগণতান্ত্রিক শক্তিকে আর ক্ষমতায় আসার সুযোগ আমি দেব না। এবার অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতায় এলে ১০ বছরেও নির্বাচন হবে না। আপনারাও ব্যবসা করতে পারবেন না।'
তার দল সব সময় চায় নির্বাচন নিরপেক্ষ পরিবেশে ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হোক_ এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এজন্য আমরা ইতিমধ্যে সব গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি অনুসরণে আমাদের আন্তরিকতা দেখিয়েছি। কিন্তু যিনি আপনাকে সব সময় হেয় করতে চান, তার সঙ্গে কতটা চলা যায়? যে আপনাদের পিতা-মাতা, ভাই-বোনের হত্যাকারীকে প্রশ্রয় দেয়- এমন একজন মানুষের প্রতি আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে? এ সবকিছু ভুলে গিয়ে আমি তাকে (বিরোধীদলীয় নেতা) ফোন করেছি। কিন্তু মানুষ জানে, আমি তার কাছ থেকে কী জবাব পেয়েছি।'
বিরোধীদলীয় নেতার 'শেখ হাসিনাবিহীন সরকার'-এর দাবি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'তিনি (বিরোধীদলীয় নেতা) হয়তো হতাশায় ভুগছেন। কারণ উপর্যুপরি চেষ্টার পরও তারা আমাকে হত্যা করতে পারেননি।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশে ১৯৭৫ সালের পর ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকাকাল ব্যতীত আর কখনও শান্তিপূর্ণভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হন্তান্তর হয়নি। আমরা এমন একটি ব্যবস্থা করতে চাই, যেখানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পালাবদল হবে।
ব্যবসায়ী নেতাদের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, হরতালের সময় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে তাদের শিপমেন্টের জন্য সরকার সব ধরনের সহায়তা দেবে। প্রয়োজনে বিমানবাহিনীর কার্গো দিয়ে মালপত্র পরিবহনের ব্যবস্থা করা হবে।
বৈঠকের শুরুতে কাজী আকরামউদ্দিন আহমদ চলমান সংকট নিরসনে ব্যবসায়ীদের ১৪ দফা প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতাদের বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরে তিনি বলেন, চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্যবসায়ী সমাজের গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও অর্থনীতির ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি বিরোধীদলীয় নেতার কাছে তুলে ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে সংযম-সমঝোতার নীতি অনুসরণ করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান ও হরতালসহ অন্যান্য নেতিবাচক রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিহার করে শর্তহীন সংলাপে বসার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিরাজমান সংকট নিয়ে উভয় দলের সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ে শর্তহীন আলোচনার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবে বিরোধীদলীয় নেতা সম্মতি দিয়েছেন। এ বিষয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে ফলপ্রসূ সংলাপে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে বিরোধীদলীয় নেতা ইতিবাচক সাড়া দেবেন বলে তারা আশাবাদী। পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য সবার সমন্বিত প্রচেষ্টাও কামনা করেন ব্যবসায়ী নেতারা।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাজী আকরামউদ্দিন আহমদ বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে তারা বলেছেন, তাকেই বর্তমান সংকটের সমাধান করতে হবে। যেহেতু তিনিই টেলিফোন করে সমঝোতার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন, সেহেতু এই যাত্রার পরিসমাপ্তিও তিনিই করবেন বলে ব্যবসায়ীরা আশা করছেন।
পরে তিনি সমকালকে আরও বলেন, সমঝোতার বিষয়ে আমরা এখনও আশাবাদী। আমরা দু-একদিন পর দুই দলের প্রতি আবারও আহ্বান জানাব, যাতে অচিরেই আলোচনায় বসে সংকটের সমাধান করা হয়। আলোচনার পথ খোলা রেখে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেই পথে আলোচনায় আসতে বিরোধীদলীয় নেতার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
হেলাল উদ্দিন সমকালকে জানান, দেশের বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দুই নেত্রী এখনও ইতিবাচক মনোভাবেই রয়েছেন। এখন তারা যেন আলোচনায় বসে দেশে স্থিতিশীল পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হন- সেটাই ব্যবসায়ীদের চাওয়া। সংলাপের মাধ্যমেই তারা রাজনৈতিক সংকটের সমাধান চান।

ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, সংকট নিরসনে দুই শীর্ষ নেত্রীর মধ্যে আলোচনা হতে হবে। মহাসচিব পর্যায়ে আমরা বলেছি। মহাসচিবদের তো শীর্ষ নেত্রীদের কাছেই যেতে হবে। শীর্ষ নেত্রীদের যদি আলোচনায় আনতে পারি, মহাসচিবদের নিয়ে কেবল কালক্ষেপণ করে লাভ নেই।
তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আলোচনার কথা। আমরাও একই সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাব দুই নেত্রীর সঙ্গে, যাতে আলোচনায় যে কোনো সময় সমাধান হতে পারে।
আবদুল আউয়াল মিন্টু সাংবাদিকদের বলেন, সংকটের সমাধান একদিনে হবে না। এভাবে সমাধান হলে আগেই হতো। এজন্য ব্যবসায়ীদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের পর এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম সাংবাদিকদের জানান, তারা দুই দলের মহাসচিবকে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছেন এবং তাতে রাজি হয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা। ২৯ অক্টোবর এফবিসিসিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, ব্যবসায়ীরা আর কোনো 'তৃতীয় শক্তি'কে ক্ষমতায় দেখতে চান না। তারা সমঝোতা চান।