পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার মামলায় সম্প্রতি আদালত
যে রায় দিয়েছেন তা সেনাবাহিনীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থানকে
সুদৃঢ় করবে বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ পত্রিকা। এক
প্রতিবেদনে পত্রিকাটি বলেছে, জাতীয় নির্বাচনের অল্প কিছুদিন আগে ঘোষিত এই
রায় শেখ হাসিনাকে ‘অতিপ্রয়োজনীয়’ শক্তি জুগিয়ে থাকতে পারে।
‘বিদ্রোহ ও প্রতিশোধ: নাজুক রাজনৈতিক মুহূর্তে
বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে গণরায়’ (মিউটিনি অ্যান্ড রিভেঞ্জ: অ্যা ম্যাস কনভিকশন
অব মিউটিনিয়ারস কামস অ্যাট পলিটিক্যালি ডেলিকেট মোমেন্ট) শিরোনামের
প্রতিবেদনটি অনলাইনে প্রকাশ করেছে ‘দ্য ইকোনমিস্ট’। ৯ নভেম্বর শনিবার এটির
কাগজে ছাপাসংখ্যা বাজারে আসবে।
প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়, শেখ হাসিনার সদ্য গঠিত
সরকারের সামনে এই বিদ্রোহ ছিল নৃশংসতম আগাম পরীক্ষা। তিনি ক্ষমতা গ্রহণের
দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে ঘটে যায়
ইতিহাসের ঘৃণ্যতম বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা। রাজধানী ঢাকার পিলখানায় সে সময়
আধা সামরিক বাহিনীর বিদ্রোহীরা সেনা কর্মকর্তা ও তাঁদের পরিবারের ওপর হামলে
পড়ে। ঘৃণিত সেই হত্যাকাণ্ডে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ নিহত হন ৭৪ জন। হত্যার
করার পর তাঁদের অনেকের দেহ পুঁতে ফেলা হয়। আবার অনেকের দেহ পয়ঃনালিতে ফেলে
দেওয়া হয়।
নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী সেখানে সেনাবাহিনী পাঠানোর বদলে বিদ্রোহীদের
সঙ্গে আলোচনার পথ বেছে নেন। আর এর মাধ্যমে প্রায় নিশ্চিতভাবেই তিনি আরও বড়
ধরনের হত্যাযজ্ঞ এড়াতে সমর্থ হয়েছিলেন, যদিও তাঁর ক্ষুব্ধ কর্মকর্তাদের
প্রতিহিংসার সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকি ছিল। কিন্তু বিডিআরের সঙ্গে আলোচনার
সিদ্ধান্ত এই প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে হয়েছিল যে দোষীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি
দেওয়া হবে। ঘটনার প্রায় পাঁচ বছর পর এবং আসন্ন নির্বাচনের মাস দুয়েক আগে
গত ৫ নভেম্বর একটি ফৌজদারি আদালত অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে রায় ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশের কোনো আদালতই আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে না। মানবাধিকার
সংস্থাগুলো এই বিচারে বড় ধরনের ত্রুটি নির্দেশ করেছে। এ মামলায় মোট ৮৪৭ জন
আসামিকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছিল। এদের থেকে ১৫২ জনের ফাঁসির আদেশ দেওয়া
হয়েছে। বিদ্রোহের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার দায়ে বেসামরিক লোকসহ আরও শতাধিক
বিডিআর জওয়ানকে দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আদালতের কার্যক্রম যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়নি।
জেলখানায় থাকা অবস্থায় মারা যান অন্তত ৭০ জন অভিযুক্ত— প্রায় নিশ্চিতভাবেই
তাঁরা নিহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্রোহের প্রকৃত কারণ ছিল স্পষ্ট। নগণ্য বেতনভুক্ত ও
অবহেলার শিকার বিডিআর জওয়ানেরা তাঁদের নেতৃত্বে থাকা বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত
সেনা কর্মকর্তাদের প্রতি ঈর্ষান্বিত ছিলেন। এ বৈষম্যই জওয়ানদের খেপিয়ে
তোলে। এ ছাড়া বিডিআরে অসন্তোষের একটি সুনির্দিষ্ট কারণ হলো তারা
সেনাবাহিনীর সেনাদের মতো জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়ার লাভজনক সুযোগ
পান না।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের আগে
ফাঁসির রায় কার্যকর হবে বলে মনে হয় না। মামলার আপিল প্রক্রিয়ায় কয়েক মাস
লেগে যাবে। কিন্তু এই রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সামনের সময়গুলোতে
সাহায্য করবে। এই রায় সেনাবাহিনীতে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানকে সুদৃঢ় করবে।
এই রায় এমন সময় এল যখন বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, শেখ হাসিনার
নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের চেয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি জনপ্রিয়তায়
অনেক এগিয়ে রয়েছে। জরিপে আরও দেখা গেছে, ভোট কারচুপি এড়াতে নিরপেক্ষ
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের পক্ষেই অধিকাংশ মানুষ মত দিয়েছে।
শেখ হাসিনা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি
প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁর এই সিদ্ধান্ত বিএনপিকে নির্বাচন বর্জনে উসকানি
দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি সত্যি সত্যি নির্বাচন বর্জন করলে নির্বাচন
পিছিয়ে যেতে পারে এবং আগামী মাসগুলোতে রাজপথে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর
সে রকম কিছু হলে ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা দেওয়াও যাদের অন্যতম কাজ, সেই
সেনাবাহিনী চূড়ান্ত রাজনৈতিক ভূমিকা নিতে পারে। আর সেনাবাহিনীকে চটানোর
কোনো আগ্রহ শেখ হাসিনার নেই।