Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Friday 25 October 2013

সরকারের অবৈধ হওয়ার সাংবিধানিক ভিত্তি নেই

সরকারের অবৈধ হওয়ার সাংবিধানিক ভিত্তি নেই

নির্বাচনকালীন ৯০ দিনের ক্ষণগণনা

@ Prothom-alo 
Untitled-10রাজনীতিবিদদের দৃষ্টিতে ‘নির্বাচন-কালীন ৯০ দিন’ এর ক্ষণগণনা শুরু হলো আজ। বিরোধী দল বলছে, গতকাল ২৪ অক্টোবর ছিল সরকারের শেষ দিন। আজ থেকে এই সরকার অবৈধ হয়ে পড়ল।
সরকারের ‘অবৈধ’ হয়ে পড়া-সংক্রান্ত যে ঘোষণা বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া দিয়েছেন, তার কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। বিদ্যমান সংবিধান বা কোনো আইন-বিধি তাঁর এই মতকে সমর্থন করে না। সংসদীয় গণতন্ত্রের রেওয়াজ অনুযায়ীও এ কথা বলা যায় না। তাই সার্বিক বিচারে বিরোধীদলীয় নেতার দাবি একটি রাজনৈতিক চমক। অবশ্য সাত নভেম্বর পর্যন্ত সংসদ চালানোর সিদ্ধান্তের কারণে নির্বাচন কমিশন নিয়ন্ত্রিত ৯০ দিন থেকে ১২ দিন হ্রাস পাবে। এতে ইসির সিদ্ধান্ত গ্রহণের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
বাংলাদেশের সংবিধান নির্বাচনকালে ছোট মন্ত্রিসভা করারও কোনো বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করেনি। সংবিধানের ৫৭(৩) এবং ৫৮(৪) অনুচ্ছেদে বরং নির্দিষ্টভাবে প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীদের নির্বাচনকালে বৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার রক্ষাকবচ দিয়েছে। ৫৭(৩) অনুচ্ছেদ বলেছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকিতে এই অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই অযোগ্য করিবে না।’ এর অর্থ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে তিনি সংসদ সদস্যের পদ হারালে এমনকি তিনি আস্থাভোটে পরাজিত হলেও প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকবেন। একইভাবে মন্ত্রীদের সম্পর্কেও ৫৮(৪) অনুচ্ছেদ বলেছে, ‘... তাঁহাদের উত্তরাধিকারীগণ কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তাঁহারা স্ব স্ব পদে বহাল থাকিবেন।’
সংবিধানের ৭২(২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘রাষ্ট্রপতি পূর্বে ভাঙ্গিয়া না দিয়া থাকিলে প্রথম বৈঠকের তারিখ হইতে পাঁচ বৎসর অতিবাহিত হইলে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবে।’ অস্ট্রেলিয়ার সংবিধানের ২৮ ধারা বলেছে, গভর্নর জেনারেল আগে ভেঙে না দিলে প্রতিনিধি পরিষদের প্রথম বৈঠক থেকে তিন বছর অতিবাহিত হলে প্রতিনিধি পরিষদ ভেঙে যাবে। কানাডার ১৮৬৭ সালের সংবিধানের ৫০ ধারাও অনুরূপভাবে কানাডার হাউস অব কমন্সের মেয়াদ পাঁচ বছর নির্দিষ্ট করেছে।
সংসদের এই পাঁচ বছরের সীমা হলো সর্বোচ্চ সীমা। অনেকে দেশের সংবিধানে নির্দিষ্টভাবে সর্বোচ্চ ৫ বা ৪ বছরের মেয়াদের কথা লেখা থাকে। এর অর্থ হলো সংসদীয় গণতন্ত্রে যেকোনো পরিস্থিতিতে কোনো সরকারের মেয়াদ এমনকি সংসদের কোনো স্থির মেয়াদ কল্পনা করা হয় না। নানাবিধ রাজনৈতিক ও অন্যবিধ কারণে সংসদ ভেঙে দিয়ে মধ্যবর্তী বা আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তাকে বাস্তবসম্মত মনে করা হয়।
বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া অবশ্য কীভাবে আজ থেকে বর্তমান সরকার ‘অবৈধ’ হয়ে পড়বে, তার কোনো ব্যাখ্যা দেননি। সংসদ অবৈধ না হলে সরকারের অবৈধ হওয়ার প্রশ্ন আসে না। আর আজ থেকে মন্ত্রীর মর্যাদা সম্পন্ন বিরোধীদলীয় নেতা এবং বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের বৈধতার প্রশ্নটিও উঠতে পারে। এর আগে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের একটি উক্তি গণমাধ্যমে এসেছে। তিনি ২৫ অক্টোবরকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, ২০-২২ দিনের মধ্যে সরকারের মেয়াদ শেষ হবে। ধারণা করা চলে যে, তিনি সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের ৩ দফার ক উপদফার আলোকে এ মন্তব্য করতে পারেন। ক উপ দফায় বলা আছে, মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাবার ক্ষেত্রে ভেঙে যাবার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে। ২৭ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারিতে ৯০ দিন গণনা পূর্ণ হয়।
জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি গতকাল একাত্তর টিভির এক আলোচনায় আওয়ামী লীগের সাংসদ তোফায়েল আহমেদের কাছে জানতে চান যে, ৭ নভেম্বর পর্যন্ত আপনারা সংসদ চালাবেন। তাহলে ‘নির্বাচনকালীন সরকারের’ মেয়াদ কবে থেকে ধরা হবে? উত্তরে তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা থেকে এর ক্ষণ গণনা শুরু হবে। আর এটা ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন সূত্র আভাস দিয়েছে যে, তারা ‘নির্বাচনকালীন সময়’ বলতে কী বোঝাবে তার একটা সংজ্ঞা দিতে পারে। এতে তফসিল ঘোষণা থেকে ভোটের ফলাফল গেজেট হওয়া পর্যন্ত সময়কে নির্বাচনকালীন সময় বলা হতে পারে।
পঞ্চম সংশোধনীর মামলার রায়ে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ভোট গ্রহণের আগে ৪২ দিন হাতে রেখে সংসদ ভেঙে দেওয়ার একটা নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭২(১) অনুচ্ছেদের আওতায় নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের কথা বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর এই ব্যাখ্যাও সঠিক ছিল না। কারণ, সংবিধানের ৭২(১) অনুচ্ছেদে নির্বাচনের তারিখ নয়, সংসদ ভেঙে দিতে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দেওয়ার কথা বলা আছে।
-মিজানুর রহমান খান