Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Wednesday 23 October 2013

সংবিধানের বাইরে কোন প্রস্তাব মানব না

সংবিধানের বাইরে কোন প্রস্তাব মানব না

যথাসময়ে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন :প্রধানমন্ত্রী

মতিউর রহমান, স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন, সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক এমন কোন প্রস্তাব আমরা মেনে নিতে পারি না। যথাসময়ে সংবিধান মোতাবেক জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর অন্যথা করার কোন সুযোগ নেই। তিনি বলেন, জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে আমি নির্দলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু বিরোধী দলীয় নেত্রী সে প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের নিয়ে সরকার গঠনের পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা যখন এগিয়ে যেতে চাই তখন তিনি পিছন থেকে টেনে ধরেন।

গতকাল মঙ্গলবার বিকালে দিনাজপুর গোর-এ শহীদ ময়দানে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলে শুরু হয় দুর্নীতি, লুটপাট ও জঙ্গিবাদের উত্থান। এখন তিনি যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু তাদের তিনি বাঁচাতে পারবেন না। জাতির পিতা হত্যার বিচার সম্পন্ন করে রায় যেমন কার্যকর করা হয়েছে- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর এই বাংলার মাটিতেই সম্পন্ন হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ায় খালেদা জিয়ার মনে আজ বড় ব্যথা। কারণ, তিনি ওই যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার নানা কৌশল ও চেষ্টা চালিয়েও তাদের রক্ষা করতে পারছেন না। বিএনপিকে লুটেরা, খুনি, দুর্নীতিবাজ ও জঙ্গিবাদের মদদদাতা হিসাবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের সম্পদ লুট করেছে। এমনকি এতিমদের অর্থও লুট করেছে। এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মামলা হয়েছে। কিন্তু তিনি কোর্টে হাজিরা দেন না। ভয় করেন যদি তাকে আটক করা হয়। লুটপাট এবং সন্ত্রাসের জন্য তারা হাওয়া ভবন নামে একটি ভবনে আন্ডার গ্রাউন্ড সরকার গঠন করেছিল। তাদের আমলে আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। তারা যুবকদের হাতে অস্ত্র ও মাদক দিয়ে তাদের বিপথগামী করেছে। তাদের সময়ে বিদ্যুতের উত্পাদনের পরিবর্তে শুধুই খাম্বা তৈরি করে ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাট করা হয়েছে।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া এখন সরকারের বিরুদ্ধে চরম মিথ্যাচার করছেন। ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনায় কয়েক হাজার মানুষ মারা গেছে বলে তিনি চরম মিথ্যাচার করেছেন। হেফাজতে ইসলাম তাণ্ডব চালিয়ে মসজিদে আগুন দিয়েছে, কোরআন শরিফ পুড়িয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। আশপাশের ভবনে অগ্নিসংযোগ করে তাণ্ডব চালিয়েছে। বর্তমান সরকারের সময় মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে। দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এই সরকারের আমলে বিদ্যুতের উত্পাদন বেড়েছে। ১৯৯৬ সালে ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন রেখে যায় আওয়ামী লীগ। কিন্তু বিএনপি উত্পাদন কমিয়ে ৩ হাজার মেগাওয়াটে নিয়ে আসে। বর্তমানে বিদ্যুত্ উত্পাদন ক্ষমতা ৯ হাজার ৯শ' মেগাওয়াটে উন্নীত করা হয়েছে। আরও ১১টি বিদ্যুত্ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। যা থেকে ৬ হাজার ৬শ' মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন হবে। দিনাজপুর বড় পুকুরিয়া কয়লা খনিতে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সরকারের সময়ে সারের দাম পর পর ৩ বার হরাস করা হয়েছে। কোন কৃষককে সারের জন্য ঘুরে বেড়াতে হয়নি। তারা নির্বিঘ্নে আবাদ করে উত্পাদন বাড়িয়েছে এবং নিজেরা সচ্ছল হয়েছে। সরকার যখন ক্ষমতা নেয় তখন ৩০ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি ছিল।

বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, তারা বঙ্গবন্ধুর খুনি ও একাত্তরে গণহত্যায় জড়িতদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা। তাই তারা ক্ষমতায় এলে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ আবার ফিরে আসবে। বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে এদেশের জনগণের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মত হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ করা হয়েছে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনঃনির্বাচিত হলে দেশের প্রতি জেলায় শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার জন্য একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দিনাজপুরে ১৯৯৫ সালে ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যার পর যেভাবে আগুন জ্বলছিল তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দিনাজপুরে না এসে চীনে পাড়ি জমান। যখন জেলায় নিরাপত্তা ছিল না, আইন-শৃঙ্খলা ছিল না, সেই মুহূর্তে আমি বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে দিনাজপুরবাসীর পাশে এসে দাঁড়াই এবং সাধ্যমত আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করি। আমরা ইচ্ছা করলে সরকার পতনের জন্য ইয়াসমিন ইস্যু নিয়ে আন্দোলনে যেতে পারতাম। কিন্তু আমরা তা করিনি। আমরা জনগণের পাশে সহযোগিতার জন্য দাঁড়িয়েছিলাম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ এর আগস্টে পরিবারের সকলকে হারিয়েছি। আজ আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই, আমি সব ব্যথা-বেদনা ভুলে মানুষের জন্য রাজনীতি করি। এই দিনে খালেদা জিয়া ফুর্তি করার জন্য ১৫ আগস্ট নতুন জন্মদিন সৃষ্টি করে উল্লাস করেন। এই দিনাজপুরেই খালেদা জিয়া যে স্কুলে ভর্তি হন তাতে, তার জন্ম তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর দেখানো হয়েছে এবং এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের সময়ও ৫ সেপ্টেম্বর জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছে। তিনি ওই পরীক্ষায় পাস করেছেন কিনা আমি জানি না। তবে আপনারাই ভাল জানেন। তবে আমি এটুকু জেনেছি উনি উর্দু, অংক ও বাংলায় পাস করেছেন। অন্যান্য বিষয়ে কত নাম্বার পেয়েছিলেন তা আপনারাই জানেন।

দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ভূমিপ্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ ও আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সতীশ চন্দ্র রায়, এলজিইডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ আলী, এলজিইডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোতাহার হোসেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান হোসেন খান, ইকবালুর রহিম এমপি, মনোরঞ্জনশীল গোপাল এমপি, ফজলে রাব্বী এমপি, জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান প্রমুখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী। জনসমাবেশটি সঞ্চালন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের প্রশাসক আজিজুল ইমাম চৌধুরী।

প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে ওঠার পূর্বে ৪টা ৩ মিনিটে ৫শ শয্যা বিশিষ্ট দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুতল বিশিষ্ট ড. এম এ ওয়াজেদ ভবন, আত্রাই নদীতে দেশের বৃহত্তম ১৩৫ মিটার রাবার ড্যাম, বোঁচাগঞ্জের টাঙ্গন নদীর উপর ১শ মিটার রাবার ড্যাম, বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, পাঁচবাড়ী আত্রাই নদীর উপর ১শ মিটার ব্রিজ, দিনাজপুর সরকারি কলেজের ৪ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক কাম পরীক্ষা হল, বোঁচাগঞ্জে আব্দুর রউফ অডিটরিয়াম, বিরল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, দিনাজপুর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, সেতাবগঞ্জ মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন, স্বাধীনতা স্তম্ভ শহীদ আসাদুল্লাহ স্কোয়ার, বোঁচাগঞ্জে আঁটগাঁও দাখিল মাদ্রাসার একাডেমিক ভবন, বিরলে রাজুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, মঙ্গলপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, হাকিমপুর ফায়ার স্টেশন, কাঞ্চন থেকে রাধিকপুর পর্যন্ত রেললাইনকে ডুয়েল গেজ ও ব্রড গেজে রূপান্তর, হাকিমপুরে সম্মুখ সমরের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, বীরগঞ্জে গাঙ্গর ব্রিজ, কাহারোল উপজেলা মত্স্য ভবন, বিরলে হালজায় উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, ওকড়া দাখিল মাদ্রাসার একাডেমিক ভবন এবং বোঁচাগঞ্জ উপজেলা ডাক বাংলো উদ্বোধন করেন। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী সেতাবগঞ্জ পৌরসভাকে দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীতকরণ এবং বিরল পৌরসভার উদ্বোধন ঘোষণা করেন এবং মোট ৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এগুলো হলো-দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের প্রশাসনিক ভবন, দিনাজপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত ভবন, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ইন্স্যুরেন্স জোনসহ মাইনিং এলাকায় বসবাসকারী ভূমিহীন পরিবারের পুনর্বাসনের গৃহ নির্মাণ, দিনাজপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবন, দিনাজপুর স্টেডিয়ামের সমপ্রসারিত ভবন, বিরল ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, হাকিমপুরে তিন তলা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন এবং বীরগঞ্জের পাথরঘাটা নদীর উপর ব্রিজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য শেষে দিনাজপুর মহিলা কলেজ ও সরকারি কলেজে দুটি করে বাস দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।