Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Sunday 20 October 2013

সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন

সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ রাজনৈতিক অঙ্গনে আশার সঞ্চার করলেও গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার ঘোষণায় কিছুটা হতাশা ও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
গত শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের পাশাপাশি আলোচনারও প্রস্তাব দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, নির্বাচনকালীন সরকার-পদ্ধতি নিয়ে সৃষ্ট সংকট আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে প্রধানমন্ত্রী যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তাতে সংকট নিরসনে সরকারের সদিচ্ছা স্পষ্ট ছিল। কিন্তু গতকাল পুলিশের ঘোষণার পর সেই সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল করবে বলে তাঁরা মনে করেন।
ডিএমপির ঘোষণায় আজ রোববার সকাল ছয়টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ঢাকা মহানগরে সব ধরনের সভা-সমাবেশ-মিছিল, অস্ত্র বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি পুলিশের ঘোষণার ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে ‘চরম অগণতান্ত্রিক’ ও রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সরকারের দ্বিমুখী নীতির নিকৃষ্ট বহিঃপ্রকাশ বলে অভিহিত করেছে। দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেছেন, সরকার এখন ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে জনগণের পরিবর্তে পুলিশ-নির্ভর হয়ে পড়েছে। তিনি সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণার নিন্দা জানিয়ে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
এদিকে গত রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা চলাকালে বাইরে এসে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের জানান, রাজধানীতে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে আজ রোববার সারা দেশে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ-সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। রাজধানী ঢাকায় এ কর্মসূচি পালন করা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা কাল (রোববার) দেখতে পারবেন।
২৫ অক্টোবর বিএনপির পাশাপাশি রাজপথে থাকার ঘোষণা ছিল আওয়ামী লীগেরও। পুলিশের ঘোষণার পর সরকারি দলের সেই ঘোষণা বহাল থাকবে কি না, জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বলেন, তাঁরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন।
এ ছাড়া জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ওয়ার্কার্স পার্টি, সিপিবি-বাসদ, বাম মোর্চা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার নিন্দা ও সমালোচনা করেছেন। তাঁরা একে অপ্রয়োজনীয় ও পরিস্থিতি জটিলতর করার একটি প্রয়াস বলে অভিহিত করেছেন।
জানতে চাইলে বিশিষ্ট আইনজীবী রফিক-উল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি অনেক আগে থেকেই ২৫ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশের কথা বলে আসছে। এরপর গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে একটা সুন্দর সমঝোতার প্রস্তাব দিলেন। আমরা আশা করেছিলাম, বিএনপি তাদের স্থায়ী কমিটির সভার পর এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দেবে। কিন্তু পুলিশের নিষেধাজ্ঞা সার্বিক পরিস্থিতি অন্য রকম করে দিয়েছে। এখন বিএনপি বলতে পারে যে, প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব, আলোচনার আহ্বান সবই সাজানো। তাই তারা সমঝোতার পথ থেকে সরে যেতে পারে। তাতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিলতর হবে।
পুলিশি ঘোষণা কেন: রাজনৈতিক সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের পরদিনই পুলিশ ঢাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার ঘোষণা কেন দিল, জানতে চাইলে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা সমাবেশের নামে সড়ক দখল করে স্থায়ীভাবে অবস্থান করতে শুরু করবেন। তাই কেউ যাতে কোথাও অবস্থান নিতে না পারেন, সে ব্যাপারে পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়।
গতকাল শনিবার সকালে ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), উপ-কমিশনার, যুগ্ম কমিশনার ও অতিরিক্ত কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন। রাজনৈতিক কর্মসূচির সময় কীভাবে পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে, তা নিয়ে সভায় আলোচনা হয়। সভার পরই নিষেধাজ্ঞা জারির আদেশ দেন কমিশনার।
ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ২০ অক্টোবর থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়া আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল সভা-সমাবেশের অনুমতি চেয়ে পুলিশের কাছে আবেদন করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০ অক্টোবর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছেন পুলিশ কমিশনার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত পরস্পরবিরোধী মোট ১২টি সংগঠন ঢাকায় সভা-সমাবেশের জন্য পুলিশের অনুমতি চেয়েছে।
আজ রোববার বিকেলে বিএনপির চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের জাতীয় কনভেনশনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। বেলা দুটো থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা। এ অনুষ্ঠান পুলিশের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে কি না, জানতে চাইলে ডিএমপির তেজগাঁও অঞ্চলের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, এটিও সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধের আওতায় পড়বে। তিনি বলেন, ‘এই অনুষ্ঠান হতে পারবে বলে আমরা মনে করি না।’
তবে রাতে বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার সাংবাদিকদের বলেন, আজ বেলা তিনটায় খালেদা জিয়া সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
এদিকে ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, সভা-সমাবেশ করা যেকোনো দলের গণতান্ত্রিক অধিকার। হঠাৎ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সভা-সমাবেশ বন্ধ করে দিলে সরকারের সঙ্গে বিরোধী দলের দূরত্ব আরও বাড়বে।
মহাজোটের আরেক শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘ঢাকা মহানগর পুলিশের এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো প্রয়োজন দেখছি না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে একটা ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। পুলিশের এই পদক্ষেপ সেটা বিঘ্নিত করতে পারে।’
জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান এক বিবৃতিতে বলেছেন, মিছিল, সভা-সমাবেশ করা প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার। সরকার নাগরিক অধিকার হরণ করে গণতন্ত্র ও সংবিধানকে পদদলিত করেছে। দেশের মানুষ সরকারের এ অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক ও স্বৈরাচারী ঘোষণা প্রতিহত করবে।
সিপিবি-বাসদের নেতারা বলেছেন, সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে। দেশকে রাজনৈতিক সংকট ও অনিশ্চয়তার পরিবেশ থেকে মুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নিয়ে সরকার উল্টো পথ ধরেছে।
সিপিবি-বাসদের এক সভায় নেতারা এ কথা বলেন। গতকাল মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে সিপিবির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সভায় অন্যান্যের মধ্যে বাসদের খালেকুজ্জামান, সিপিবির সৈয়দ আবু জাফর প্রমুখ বক্তব্য দেন।
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা অনতিবিলম্বে অসহিষ্ণু ও অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত বাতিল করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
@Prothom-alo