বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) কমিশনের সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের উপপরিচালক আসিফ ওয়াহিদ স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনাটি এসএমএস সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পাঠানো হয়।
Friday, 22 December 2023
নির্বাচনে বিএনপির ভূমিকা নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি
জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক সমর্থন অর্জনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি ও তাদের মিত্রদের একটি অংশ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাধা দিচ্ছে বলে দাবি করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ক্লিক করুন ক্লিক করুন
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুকে পেজে প্রচারিত এক বিবৃতিতে এ দাবি করা হয়।বিবৃতিতে বলা হয়, জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক সমর্থন অর্জনে ব্যর্থ হয়ে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও তাদের মিত্রদের একটি অংশ আসন্ন নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতা তৈরির লক্ষ্যে অবরোধ কার্যকর করার জন্য তাদের প্রচেষ্টা জোরদার করেছে। বিএনপির এ কৌশলগত পদক্ষেপের ফলে সারাদেশে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তাদের সমর্থকরা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে এবং তাদের বিতর্কিত দাবিগুলো মেনে নিতে সরকারের ওপর অযথা চাপ সৃষ্টি করতে এ ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে। এ সহিংসতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ ১৩ ডিসেম্বর ঘটে, যখন বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা ইচ্ছাকৃতভাবে রেলওয়ে ট্র্যাকের ২০ ফুটের একটি অংশ সরিয়ে দেয়। ফলে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। ভোর ৪টার দিকে ঘটে যাওয়া এ দুর্ঘটনায় একজন নিহত এবং ৫০ জনের বেশি যাত্রী আহত হন। এ ঘটনা বিএনপির ডাকা ৩৬ ঘণ্টার অবরোধের প্রত্যক্ষ পরিণতি। পাশাপাশি এসব দল জাতীয় স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে কতটা বিপজ্জনক দৈর্ঘ্যের দিকে যাবে, তার উদাহরণ।
আবার ১৯ ডিসেম্বর ঢাকার তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় নাশকতাকারীরা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের তিনটি বগিতে আগুন দিলে একজন নারী ও তার তিন বছরের ছেলেসহ অন্তত চার যাত্রী নিহত হন। বিএনপি-জামায়াত জোটের কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক অস্থিরতার বাইরে প্রসারিত; তারা নাগরিকদের শারীরিক এবং সরকারি সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি করেছে। পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা গোষ্ঠীগুলোর রেলের ট্র্যাক ছিন্ন করার জন্য ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডারসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ উন্মোচন করেছেন।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ট্রেন লক্ষ্য করে হামলার এ ধরন নতুন নয়। বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রায় চার হাজার যানবাহনে অগ্নিসংযোগ এবং একাধিক রেলে আগুনসহ একই ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। এ ধরনের কৌশলের সাম্প্রতিক পুনরুত্থান ধ্বংসাত্মক পদ্ধতিতে ফিরে আসার ইঙ্গিত দেয়।
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সরকার বিরোধী সমাবেশের পর দেশব্যাপী প্রায় ৪০০টি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের হরতাল-অবরোধের কৌশল অতীতের কর্মকাণ্ডেরই উদ্বেগজনক পুনরাবৃত্তি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে বিএনপি-জামায়াত জোট শুধু শারীরিক ও সম্পদের ক্ষতিই করেনি, পুলিশ হাসপাতাল এবং অ্যাম্বুলেন্সসহ অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবাগুলোতেও আক্রমণ করেছে।
আসন্ন নির্বাচন ব্যাহত করতেই এ ধরনের আক্রমণ করা হচ্ছে জানিয়ে বিবৃতি বলা হয়, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও দমকল বিভাগ দ্রুত সাড়া দেয়। নাশকতার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, কাজটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল। এ মারাত্মক কাজের পরিকল্পনা করার জন্য মিটিং করা হয়েছিল। এই নাশকতা রাষ্ট্র ও জনগণের ওপর সরাসরি আক্রমণ, যার লক্ষ্য আগামী নির্বাচন ও জাতির অগ্রগতি ব্যাহত করা।
সরকারের অবস্থান জানিয়ে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ সন্ত্রাস ও এ ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে অবস্থান করছে। তারা এ চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও শান্তি বজায় রাখতে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর।
কপাল খুলেছে চীনের
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর কপাল খুলেছে চীনের। যুদ্ধ পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে চলতি বছরের ১১ মাসেই রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির বাণিজ্য ছাড়িয়েছে ২০ হাজার কোটি ডলার। বাণিজ্য এতটা বাড়বে, তা প্রত্যাশায় ছিল না দুই দেশের। ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় এ বছর রাশিয়ায় চীনের রপ্তানি বেড়েছে ৬৯ শতাংশ। অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞার পর নিষেধাজ্ঞায় কুপোকাত রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপ ছেড়ে তরী ভিড়িয়েছে চীনে। সুযোগ বুঝে বেইজিংও একেবারে কম দামে মস্কোর কাছ থেকে কিনেছে তেল, গ্যাস ও খাদ্যপণ্য। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের
এই দুই দেশের বাণিজ্য কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা সহজেই অনুমান করা যায় সীমান্তের একটি গাড়ির ডিলার প্রতিষ্ঠানের আয় থেকে। তুষারে ঢাকা রাশিয়া সীমান্তের চীন অংশে ট্রাক বিক্রয়কারী ডিলার প্রতিষ্ঠানটি মূলত রুশ গ্রাহকদের কাছেই গাড়ি বিক্রি করে। গত বছর প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি আগের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে। প্রতিবেশী দেশটিতে চীনের রপ্তানি এত বেশি যে এই গ্রীষ্মে সীমান্তে গুদাম এবং ২০ তলা অফিস ভবনও তৈরি করা হয়েছে। সীমান্ত শহর হেইহে রাশিয়ার সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্কের অন্যতম প্রধান দ্বার। স্থল সীমান্ত দিয়ে রেলপথে রাশিয়ায় গাড়ি পরিবহন করতে পারে চীন। কারণ দেশটির যানবাহন রপ্তানির জন্য আন্তঃমহাসাগরীয় জাহাজের বহর নেই।
এদিকে যুদ্ধের কারণে গাড়ি থেকে শুরু করে কম্পিউটারের চিপ– সব কিছুই পশ্চিমা দেশের পরিবর্তে এখন চীন থেকে কিনছে রাশিয়া। আর তেল-গ্যাস ছাড়াও চীনের সুপারমার্কেটগুলো এখন রাশিয়ান চকলেট, সস ও অন্য ভোগ্যপণ্যে ঠাসা।
চীনের নেতা শি জিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই দেশের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা দেখিয়েছেন নানা সময়। গত সেপ্টেম্বরের শুরুতে চীনের সবচেয়ে উত্তরের প্রদেশ হেইলংজিয়াংয়ের রাজধানী হারবিন পরিদর্শন করেন জিনপিং। এ সময় হেইলংজিয়াংকে চীনের ‘উত্তরের প্রবেশদ্বার’ হিসেবে ঘোষণা করেন তিনি।
গত বুধবার বেইজিংয়ে জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রুশ প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্টিন। এ সময় জিনপিং বলেন, ‘চীন-রাশিয়ার সম্পর্ক দৃঢ়ভাবে বজায় রাখা ও উন্নয়ন দুই দেশের মানুষের মৌলিক স্বার্থের ভিত্তিতে উভয় পক্ষের একটি কৌশলগত পছন্দ।’
ইউক্রেনে হামলা শুরুর আগে জার্মানি, ফ্রান্স এবং অন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতারা চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে মানবাধিকারের মতো ইস্যুতে মতপার্থক্য সামনে আনেনি। অন্যদিকে চীনের কর্মকর্তারাও চেয়েছেন ইউরোপ ও রাশিয়া উভয়ের সঙ্গেই যাতে ব্যবসা করতে।
রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে চীনে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে গাড়ি নির্মাতারা। চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সাংহাই অটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশনের একটি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি নতুন গাড়ির বহর রপ্তানি করেছে দেশটিতে। বিক্রি এত বেড়েছে যে চলতি বছর জাপানকে ছাড়িয়ে বিশ্বের বৃহত্তম গাড়ি রপ্তানিকারক হিসেবে পরিণত হয়েছে চীন।
মার্সিডিজ-বেঞ্জ এবং বিএমডব্লিউর মতো জার্মানির কোম্পানিগুলো রাশিয়ায় গাড়ি রপ্তানির শীর্ষে ছিল। ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্রদের নিষেধাজ্ঞায় এখন তারা রাশিয়াকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এদিকে রাশিয়ায় বিলাসবহুল গাড়ির বিক্রি কমেছে। কিন্তু নিম্ন-মধ্যবিত্ত এবং দরিদ্র রুশ পরিবারগুলো কম দামে চীনা গাড়ি কেনা বাড়িয়েছে।
থিংক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের পরিচালক আলেকজান্ডার গাবুয়েভ মনে করেন, যারা গাড়ি কেনা বাড়িয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন।
গাবুয়েভ বলেন, রুশ সরকার এবং বিমাকারীরা দেশটির সেনাদের পরিবারকে মৃত্যু অথবা অঙ্গহানির ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। মৃত্যুর ক্ষেত্রে যা ৯০ হাজার ডলারের মতো।
রুশরা ব্যাপকভাবে জ্বালানির গাড়ি কেনে। কিন্তু চীনের ক্ষেত্রে বিষয়টি পুরো উল্টো। চীনের মানুষ এখন দ্রুত বৈদ্যুতিক গাড়ির দিকে ঝুঁকে পড়েছে। ফলে দেশটির কাছে এখন জ্বালানি দিয়ে চলা গাড়ি উদ্বৃত্ত।