Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Friday 22 December 2023

কপাল খুলেছে চীনের


 ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর কপাল খুলেছে চীনের। যুদ্ধ পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে চলতি বছরের ১১ মাসেই রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির বাণিজ্য ছাড়িয়েছে ২০ হাজার কোটি ডলার। বাণিজ্য এতটা বাড়বে, তা প্রত্যাশায় ছিল না দুই দেশের। ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় এ বছর রাশিয়ায় চীনের রপ্তানি বেড়েছে ৬৯ শতাংশ। অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞার পর নিষেধাজ্ঞায় কুপোকাত রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপ ছেড়ে তরী ভিড়িয়েছে চীনে। সুযোগ বুঝে বেইজিংও একেবারে কম দামে মস্কোর কাছ থেকে কিনেছে তেল, গ্যাস ও খাদ্যপণ্য। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের

এই দুই দেশের বাণিজ্য কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা সহজেই অনুমান করা যায় সীমান্তের একটি গাড়ির ডিলার প্রতিষ্ঠানের আয় থেকে। তুষারে ঢাকা রাশিয়া সীমান্তের চীন অংশে ট্রাক বিক্রয়কারী ডিলার প্রতিষ্ঠানটি মূলত রুশ গ্রাহকদের কাছেই গাড়ি বিক্রি করে। গত বছর প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি আগের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে। প্রতিবেশী দেশটিতে চীনের রপ্তানি  এত বেশি যে এই গ্রীষ্মে সীমান্তে গুদাম এবং ২০ তলা অফিস ভবনও তৈরি করা হয়েছে। সীমান্ত শহর হেইহে রাশিয়ার সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্কের অন্যতম প্রধান দ্বার। স্থল সীমান্ত দিয়ে রেলপথে রাশিয়ায় গাড়ি পরিবহন করতে পারে চীন। কারণ দেশটির যানবাহন রপ্তানির জন্য আন্তঃমহাসাগরীয় জাহাজের বহর নেই।

এদিকে যুদ্ধের কারণে গাড়ি থেকে শুরু করে কম্পিউটারের চিপ– সব কিছুই পশ্চিমা দেশের পরিবর্তে এখন চীন থেকে কিনছে রাশিয়া। আর তেল-গ্যাস ছাড়াও চীনের সুপারমার্কেটগুলো এখন রাশিয়ান চকলেট, সস ও অন্য ভোগ্যপণ্যে ঠাসা। 

চীনের নেতা শি জিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই দেশের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা দেখিয়েছেন নানা সময়। গত সেপ্টেম্বরের শুরুতে চীনের সবচেয়ে উত্তরের প্রদেশ হেইলংজিয়াংয়ের রাজধানী হারবিন পরিদর্শন করেন জিনপিং। এ সময় হেইলংজিয়াংকে চীনের ‘উত্তরের প্রবেশদ্বার’ হিসেবে ঘোষণা করেন তিনি। 

গত বুধবার বেইজিংয়ে জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রুশ প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্টিন। এ সময় জিনপিং বলেন, ‘চীন-রাশিয়ার সম্পর্ক দৃঢ়ভাবে বজায় রাখা ও উন্নয়ন দুই দেশের মানুষের মৌলিক স্বার্থের ভিত্তিতে উভয় পক্ষের একটি কৌশলগত পছন্দ।’

ইউক্রেনে হামলা শুরুর আগে জার্মানি, ফ্রান্স এবং অন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতারা চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে মানবাধিকারের মতো ইস্যুতে মতপার্থক্য সামনে আনেনি। অন্যদিকে চীনের কর্মকর্তারাও চেয়েছেন ইউরোপ ও রাশিয়া উভয়ের সঙ্গেই যাতে ব্যবসা করতে। 

রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে চীনে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে গাড়ি নির্মাতারা। চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সাংহাই অটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশনের একটি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি নতুন গাড়ির বহর রপ্তানি করেছে দেশটিতে। বিক্রি এত বেড়েছে যে চলতি বছর জাপানকে ছাড়িয়ে বিশ্বের বৃহত্তম গাড়ি রপ্তানিকারক হিসেবে পরিণত হয়েছে চীন। 

মার্সিডিজ-বেঞ্জ এবং বিএমডব্লিউর মতো জার্মানির কোম্পানিগুলো রাশিয়ায় গাড়ি রপ্তানির শীর্ষে ছিল। ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্রদের নিষেধাজ্ঞায় এখন তারা রাশিয়াকে প্রত্যাখ্যান করেছে।

এদিকে রাশিয়ায় বিলাসবহুল গাড়ির বিক্রি কমেছে। কিন্তু নিম্ন-মধ্যবিত্ত এবং দরিদ্র রুশ পরিবারগুলো কম দামে চীনা গাড়ি কেনা বাড়িয়েছে। 

থিংক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের পরিচালক আলেকজান্ডার গাবুয়েভ মনে করেন, যারা গাড়ি কেনা বাড়িয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। 

গাবুয়েভ বলেন, রুশ সরকার এবং বিমাকারীরা দেশটির সেনাদের পরিবারকে মৃত্যু অথবা অঙ্গহানির ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। মৃত্যুর ক্ষেত্রে যা ৯০ হাজার ডলারের মতো। 
রুশরা ব্যাপকভাবে জ্বালানির গাড়ি কেনে। কিন্তু চীনের ক্ষেত্রে বিষয়টি পুরো উল্টো। চীনের মানুষ এখন দ্রুত বৈদ্যুতিক গাড়ির দিকে ঝুঁকে পড়েছে। ফলে দেশটির কাছে এখন জ্বালানি দিয়ে চলা গাড়ি উদ্বৃত্ত।