Thursday, 30 January 2020

অসাধারণ এক দৃশ্য দেখল ক্রিকেট


অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে কাল খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতার অসাধারণ নজির দেখালেন নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা
ক্রিকেটে ‘স্পোর্টসম্যানশিপ’ শব্দটা নতুন না। নানা সময়ে এর উদাহরণ রেখেছেন ক্রিকেটাররা। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট যেমন আউট হলে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকতেন না। কিংবা ২০০৫ অ্যাশেজে শ্বাসরুদ্ধকর জয়ের পর ব্রেট লির পাশে বসে যেভাবে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ; কোর্টনি ওয়ালশ ১৯৮৭ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে নন স্ট্রাইকিং ব্যাটসম্যান সেলিম জাফরকে রান আউট করার সুযোগ পেয়েও করেননি, তাতে ম্যাচটা হেরে গেলেও ওয়ালশের সেই খেলোয়াড়ি মানসিকতা এখনো ক্রিকেট-কিংবদন্তির অংশ। পাকিস্তানের সেই জয় অনেকেই ভুলে গেছে। কিন্তু ওয়ালশ কিন্তু ঠিকই চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বেনোনিতে কাল এমন কিছুরই দেখা মিলল।

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে কাল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। অসাধারণ দৃশ্যটার জন্ম হয়েছে এ ম্যাচেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে ব্যক্তিগত ৯৯ রানে ব্যাটিং করছিলেন কির্ক ম্যাকেঞ্জি। ৪৩তম ওভারে সেঞ্চুরি থেকে ১ রান দুরে থাকতে পায়ের মাংসপেশিতে টান পড়ে তাঁর। ছেড়ে যান মাঠ। এর ৫ ওভার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ নবম উইকেট হারালে মাঠে ফেরেন ম্যাকেঞ্জি। কিন্তু আউট হন প্রথম বলেই। হাঁটা দূরের ব্যাপার, ম্যাকেঞ্জি তখন ঠিকমতো দাঁড়াতেই পারছিলেন না। এ অবস্থায় হেঁটে মাঠ ছাড়া তার জন্য ছিল প্রায় অসম্ভব।

সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন নিউজিল্যান্ডের দুই যুবা ক্রিকেটার। জেসে তাশকফ ও জোসেফ ফিল্ড। দুজনে মিলে ম্যাকেঞ্জিকে দুই হাতে বহন করে নিয়ে যান মাঠের বাইরে। এ সময় দুই দলের ড্রেসিং রুম থেকে শুরু করে গ্যালারির দর্শকেরা করতালিতে সিক্ত করেন ক্রিকেটারদের। উইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটারদের ধন্যবাদ জানাতে ভোলেনি। তাদের টুইট, ‘খেলোয়াড়ি মানসিকতার অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য নিউজিল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে ধন্যবাদ।’ নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলের ক্রিকেটার জিমি নিশামও টুইটে প্রশংসা করেছেন কিউই যুবাদের, ‘অসাধারণ দেখিয়েছ ছেলেরা!’

ইরানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের এত পতাকা কেন

ইরানে বিভিন্ন সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পতাকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ করেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি: রয়টার্সইরানে বিভিন্ন সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পতাকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ করেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি: রয়টার্সইরানে এখন পতাকার ব্যবসা বেশ চাঙা। এলাকায় এলাকায় গড়ে উঠেছে পতাকা তৈরির কারখানা। মজার কথা হচ্ছে সেখানে তৈরি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইসরায়েলের পতাকা। এসব পতাকা তুলে দেওয়া বিভিন্ন সমাবেশে। সেখানে বিক্ষোভকারীরা এই পতাকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ করছেন।
তেহরানের খোমেইন শহরে তেমনি একটি পতাকার কারখানায় দেখা যায় তরুণ–তরুণী কাপড়ের ওপর হাতে এঁকে তৈরি করছেন পতাকা। এরপর সেগুলো শুকাতে দেওয়া হয়। এই কারখানা থেকে মাসে প্রায় দুই হাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পতাকা তৈরি হয়। বছরে প্রায় ১৫ লাখ বর্গফুট পতাকা বানানো হয় এই কারখানায়।
গত ৩ জানুয়ারি বাগদাদে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন ইরাকের শীর্ষ মার্কিন সেনা কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি। এর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ওই ঘটনার পর মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে প্রতিশোধ নেয় ইরান। সেই সঙ্গে প্রতিদিনই সরকার সমর্থিত র‌্যালি ও বিক্ষোভে বিক্ষোভকারীরা যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ও যুক্তরাজ্যের পতাকা পোড়াচ্ছে।
দিবা পাচাম ফ্ল্যাগ ফ্যাক্টরি একটি কারখানার মালিক ঘাসেম ঘানজানি। তিনি বলেন, ‘আমাদের যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের বিরুদ্ধে কোনো ক্ষোভ নেই। আমাদের সমস্যা ওই সব দেশের সরকারকে নিয়ে। তাদের প্রেসিডেন্টদের দিয়ে যাদের নীতিই ভুল। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের জনগণ জানে যে তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। মানুষ যদি বিভিন্ন সমাবেশে ওই সব দেশের পতাকা পোড়ায় তবে তা কেবল তাদের প্রতিবাদ দেখানোর জন্যই।’
রিজিয়া নামের এক নারী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র জেনারেল সোলাইমানি হত্যা করে যে অ্যাকশন নিয়েছে সেটির তুলনায় এই পতাকা পোড়ানো খুবই সামান্য প্রতিবাদ।
যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী মনোভাব সর্বদা ইরানের ইসলামি বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দু।

চীন থেকে দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ লোক আসছে

ইফতেখার মাহমুদ, ঢাকা


আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২০, ১২:২৮
প্রিন্ট সংস্করণ
চীনের করোনাভাইরাস যাতে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্য হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেওয়া হয়েছে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। বিমানবন্দরে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা ভাইরাস থেকে সতর্ক থাকতে মাস্ক ব্যবহার করছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। প্রথম আলোচীনের করোনাভাইরাস যাতে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্য হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেওয়া হয়েছে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। বিমানবন্দরে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা ভাইরাস থেকে সতর্ক থাকতে মাস্ক ব্যবহার করছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। প্রথম আলোপ্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ জন যাত্রী চীন থেকে বাংলাদেশে আসছেন। তাঁদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি চীনা নাগরিক। তবে তাঁদের শরীরে করোনাভাইরাস আছে কি না, তা পরীক্ষা করে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অতিক্রম করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষায় এ পর্যন্ত কারও শরীরে ওই ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। 
এর বাইরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতায় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) থেকে করোনাভাইরাস বিষয়ে একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে যেসব লক্ষণ শরীরে দেখা দেয়, তা থাকলে সেখানে ফোন করে সহায়তা নেওয়া যায়। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ জন সেখানে ফোন করে সহায়তা চাইছে, যাদের মধ্যে গড়পড়তা ৮ থেকে ১২ জন চীনা নাগরিক। এদের সবাইকে পরীক্ষা
করে সংস্থাটি তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। আইইডিসিআরর এক হিসাবে বলা হয়েছে, গত আট দিনে চীন থেকে ৩ হাজার ৩৪৮ জন বাংলাদেশে এসেছেন।
এদিকে গত ১৪ দিনে চীন থেকে ফেরা ব্যক্তিদের তালিকা করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ রোগের কোনো লক্ষণ কারও মধ্যে দেখা গেলে তা স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে জানাতে বলা হয়েছে। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)–কে চীনে ভ্রমণসংক্রান্ত একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায় প্রায় ১০ হাজার চীনা নাগরিক আছেন বলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা সূত্রে জানা গেছে। পদ্মা সেতু থেকে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র, যেখানেই বড় প্রকল্প, সেখানেই চীনা প্রযুক্তিবিদেরা বাংলাদেশে কাজ করছেন। তবে তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, প্রায় চার হাজার চীনা নাগরিক কাজ করছেন বিভিন্ন জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে, যাঁদের এক–তৃতীয়াংশই দেশে ছুটি কাটিয়ে এখন কর্মস্থল বাংলাদেশে ফিরছেন।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি
দেশে প্রায় ১০ হাজার চীনা নাগরিক আছেন
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের ভেতরে যেসব চীনা নাগরিক আছেন, তাঁরা নিরাপদে আছেন। কারণ, বাংলাদেশে এই রোগ সৃষ্টি হয়নি, দেখাও যায়নি। আর যাঁরা আমাদের বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করেন এবং ছুটি কাটিয়ে দেশে ফিরছেন, তাঁদের বিমানবন্দরে পরীক্ষা করা হচ্ছে। ওই রোগ নেই এটা নিশ্চিত হয়েই আমরা তাঁদের দেশে প্রবেশ করতে দিচ্ছি।’
এদিকে জ্বর ও কাশি নিয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে গত সোমবার দুপুরে এক চীনা নাগরিক ভর্তি হয়েছিলেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত—এমন সন্দেহে তাঁকে একটি বিশেষ কক্ষে রাখা হয়। পরে পরীক্ষায় তাঁর শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো জীবাণু পাওয়া যায়নি। 
আইইডিসিআরর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা প্রথম আলোকে গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘বিমানবন্দরে কারও মধ্যে আমরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ পাইনি। আমাদের হটলাইন নম্বরে ফোন করে যাঁরা সহায়তা চেয়েছেন, তাঁদের পরীক্ষা করেও আক্রান্ত কোনো মানুষ পাইনি।’ এ বিষয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সাবধান হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
চীনের বাইরে ফ্রান্স, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, নেপাল, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ভিয়েতনামে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত করা গেছে। সারা বিশ্বের মানুষ বর্তমানে করোনাভাইরাসের আতঙ্কে ভুগছে। এরই মধ্যে চীনে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত মানুষের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে।

AD BANNAR