Sunday, 5 January 2014
সেন্সর ছাড়পত্র পেল শম্পার 'মনের মধ্যে লেখা' চলচ্চিত্র
দেড় শতাধিক ভোটকেন্দ্রে আগুন পুড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
১৮ হাজার ২০৮টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হচ্ছে
ইত্তেফাক রিপোর্ট
দশম
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের ৩৮টি জেলায় অন্তত দেড়শতাধিক ভোট
কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সে অর্থে
দুর্বৃত্তরা আগুন দেয় আসলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এতে অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হয়
ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। এদিকে নির্বাচন কমিশন (্ইসি) বেশি ক্ষতিগ্রস্ত
কেন্দ্রগুলোর পরিবর্তে পার্শ্ববর্তী কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা
করেছে। আর অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্ত কেন্দ্রগুলো সংস্কার করে বা বিকল্প
ব্যবস্থায় ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করেছে ইসি।অনেক কেন্দ্রে পেট্রোল
বোমা ও ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। গাইবান্ধায় ব্যালট পেপার ও বাক্সসহ
নির্বাচনের বিভিন্ন সরঞ্জাম আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।১৪৭টি আসনে
অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে এবার মোট ১৮ হাজার ২০৮টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হচ্ছে।
এর মধ্যে গত শুক্রবার রাত থেকে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেড়শতাধিক
কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের তথ্য পাওয়া গেছে। ভোট কেন্দ্র
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে: গাইবান্ধা, লক্ষ্মীপুর,
ফরিদপুর, ফেনী, বগুড়া, সাতক্ষীরা, বরগুনা, রাজশাহী, বাগেরহাট, বরিশাল,
পটুয়াখালী, যশোর, ঝিনাইদহ, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, রংপুর,
কুষ্টিয়া, খুলনা, নাটোর ও মানিকগঞ্জ। ক্ষতিগ্রস্ত ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সম্পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ গতকাল শনিবার বিকালে বলেন, 'ভোটকেন্দ্রে নাশকতার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কেন্দ্রগুলো তাত্ক্ষণিকভাবে মেরামত করে ভোট গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করা হবে। বিশেষ প্রয়োজনে বা অসুবিধা হলে অল্প কিছু কেন্দ্র পরিবর্তন করা হতে পারে। এক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী কেন্দ্রগুলোই গুরুত্ব পাবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।'
গতকাল সকালে রাজধানীর আবদুল্লাহপুরে দুর্বৃত্তরা একটি ভোট কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করলে এলাকাবাসী দ্রুত তা নিভিয়ে ফেলে। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর কদমতলী কেএম মাইনুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র থেকে ৬টি হাতবোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ। রাজধানীর আজমপুর ট্যালেন্ট স্কুল ও উইজডম স্কুল কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার রাত ২টার দিকে গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলার মহেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুলতানপুর উচ্চ বিদ্যালয়, বিশ্রামগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উপজেলা সদরের বঙ্গবন্ধু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। আগুনে বিশ্রামগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে, গতকাল বিকাল পৌনে ৪টার দিকে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের কুঞ্জমহিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে যাবার পথে হামলা চালিয়ে ব্যালট পেপার ও বাক্সসহ যাবতীয় সরঞ্জাম আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সাদুল্লাপুর গার্লস কলেজের উপাধ্যক্ষ শফিকুল আলম জানান, বেলা আড়াইটার দিকে একজন পুলিশ সদস্য, ৭/৮ জন আনসার সদস্যসহ ভোট গ্রহণের অন্যান্য কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে ভটভটি (শ্যালো ইঞ্জিল চালিত স্থানীয় যানবাহন) যোগে ব্যালট পেপার ও বাক্সসহ অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে সাদুল্লাপুর উপজেলা পরিষদ থেকে ভোট কেন্দ্র অভিমুখে রওনা হন। পথে ওই স্থানে জামায়াত-শিবিরের ৩০/ ৪০ জন নেতাকর্মী হামলা চালিয়ে তাদের মারধর করে। পরে ব্যালট পেপার ও বাক্সসহ যাবতীয় সরঞ্জাম আগুনে দিয়ে পুড়িয়ে দেয় জামায়াত শিবির । গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে জেলার আরো ৫ টি কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা।
গভীর রাতে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের পশ্চিম সোনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রসুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম করপাড়া নূরে মদিনা দাখিল মাদ্রাসা, কালিডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রামগতির চরবাদাম মাস্টারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ মোট ৯টি ভোট কেন্দ্রে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। গতকাল ভোরে কমলনগর উপজেলার পশ্চিম চর মার্টিন প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে সীতাকুণ্ড পৌরসভায় আলম শফী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বুথ তৈরির জন্য রাখা বাঁশ, কাপড় এবং চেয়ারে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। গতকাল বিকাল ৪টায় সাতকানিয়ার ছদাহা ফকিরহাট এলাকায় মোহাম্মদীয়া খায়রিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে ব্যালট বক্স ও ব্যালট পেপারসহ অন্যান্য নির্বাচন সামগ্রী নিয়ে ঢুকার সঙ্গে সঙ্গে চারদিক থেকে ৭০/৮০ জন জামায়াত শিবির কর্মী লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে পুলিশসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর হামলা করে। এ সময় এসআই এনামুল ও কনস্টেবল শরীফুল ইসলামসহ ৩ জন আহত হন। হামলাকারীরা এক আনসার সদস্যের রাইফেলও লুট করে নিয়ে যায়। একই সময়ে তারা হামলা করে ছদাহা আদর্শ মহিলা মাদ্রাসা কেন্দ্রের মালামালবাহী গাড়িতে।
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে হামলা হয় দক্ষিণ চরতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের মালবাহী গাড়িতে ও এঁওচিয়া চুড়ামনি সিকদার বাড়ি এলাকা কেন্দ্রের মালবাহী গাড়িতে। এখানেও নির্বাচনী মালামাল পুড়িয়ে দেয় তারা। এছাড়া দক্ষিণ ঢেমশা বোর্ড অফিস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ও আলমগীর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হামলা করে জামায়াত শিবির কর্মীরা ব্যাপক ভাংচুর চালায়।
শুক্রবার রাত ১১ টায় ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার হরিরামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা নবাবপুর ইউনিয়নের গোয়ালিয়া গ্রামে অন্নদাচরণ সরকারি বিদ্যালয় কেন্দ্রে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়া হয়। এতে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ পুরোপুরি পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও এক চৌকিদারকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। গতকাল ভোরে আরো দুইটি কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবারও ফেনীর পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয়া হয়।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় নরসিংদীর বানিয়াছল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে আগুন দেয় ১৮ দল কর্মীরা। একই সময়ে সেখানে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণও ঘটে। শনিবার সন্ধ্যা ৭ টায় সদর উপজেলার নুরালাপুর ইউনিয়নে নুরালাপুর হাইস্কুল ভোট কেন্দ্র পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে প্রিজাইডিং ও পুলিশ অফিসারদের বহনকারী একটি বাস।
রাত ৯ টার দিকে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাদুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বামুনিয়া ইউনিয়নের গোবাচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। গভীর রাতে ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নের চিলাহাটি বটতলী ফোরকানিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। গতকাল রাত ৮ টার দিকে ডিমলা উপজেলা সদরের ঠুটারডাঙ্গা নিজপাড়া ভোটকেন্দ্র ও সংলগ্ন বাজারে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় বাজারের ১০ টি দোকান ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা ইউনিয়নের বাহ্মণপাড়া কেন্দ্রের ব্যালট পেপার ও নির্বাচনী উপকরণ ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় মাধবপাশায় শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মাধবপাশা স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং রাত ১০টায় বরিশালের বাবুগঞ্জ দেহেরগতি ঈশ্বর নারায়ণ বিদ্যালয় ও রাকুদিয়ার আবুল কালাম ডিগ্রি কলেজ ভোট কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। হিজলা উপজেলার দক্ষিণ গুয়াবাড়ির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুক্রবার রাত ৩টায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। অপরদিকে মেহেন্দীগঞ্জের কাজীরহাট থানার ১ নম্বর আন্দারমানিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের একটি পরিত্যক্ত ভবনে আগুন দেয় দুর্বৃৃত্তরা। মুলাদীর বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রেও গতকাল ভোরে আগুন দেয়া হয়।
শুক্রবার মধ্যরাতে ঝিনাইদহের শৈলকুপা পৌরসভার ললিত ভুঁইয়া সরকারি প্রাইমারি স্কুল ও ত্রিবেনী সরকারি প্রাইমারি স্কুলের ভোটকেন্দ্রে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনে বিদ্যালয়ের জানালা, দরজা ও আসবাবপত্র ভস্মিভূত হয়। গতকাল ভোর ৬টার দিকে সদর উপজেলার বিষয়খালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মহারাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একদল মটর সাইকেল আরোহী পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়। এতে স্কুলের দরজা, জানালা ও বেঞ্চ পুড়ে যায়।
শুক্রবার গভীর রাতে সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে দেলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দৌলতপুর ইউনিয়নের চর নবীপুর কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রের ৪টি কক্ষ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তামাই বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও অগ্নি সংযোগ করা হয়।
শুক্রবার রাত ৯টার দিকে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। কার্যালয়ের পেছনে পাইপে আগুন লাগিয়ে দেয়া হলে নিরাপত্তারক্ষীরা দ্রুত তা নিভিয়ে ফেলে। এ সময় বাগেরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটে। গতকাল ভোরে মোরেলগঞ্জ উপজেলার মধ্য বড়পরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের কক্ষে আগুন দেয়া হয়।
রাত সাড়ে ১০টায় ময়মনসিংহের গফরগাঁও কান্দিপাড়া আশকর আলী উচ্চ বিদ্যালয়, বারুলি সফিরউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র দুইটিতে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। তবে এলাকাবাসী দ্রুত তা নিভিয়ে ফেলে।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় কুমিল্লা নগরীর দারোগাবাড়ি এলাকায় সদর আসনের ন্যাপ মনোনীত প্রার্থী আলী ফারুকের বাড়ির সামনে তার নির্বাচনী প্রতীক 'কুঁড়েঘর' আগুনে পুড়িয়েছে দুর্বৃত্তরা। লাকসামে আটটি ভোট কেন্দ্রে আগুন, ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।
গভীর রাতে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ভ্যান্দাবাড়ি ভিমশহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়আলমপুর পত্নীচড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সদর উপজেলার মূলটন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পীরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মহিন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ মোট ১১টি ভোট কেন্দ্রে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে স্কুলের বেঞ্চসহ নানা আসবাবপত্র পুড়ে যায়। গতকাল ভোরে পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারী ইউনিয়নের দামুরচাকলা গ্রামের সালেহ মোহাম্মদ দাখিল মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে পুলিশকে আটকে রেখে প্রিজাইডিং অফিসার ও দেবী চৌধুরীনী ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আসাদ আলিকে মারধর করে ব্যালট পেপার ও বাক্সসহ সকল নির্বাচনী সরঞ্জাম ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রাতে পীরগাছার ইটাকুমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ও ইটাকুমারী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ব্যালট বক্স ও ব্যালট পেপার ছিনতাই ও কর্মকর্তাদের মারধর করে দুর্বুত্তরা। সকালে পীরগাছা উপজেলার কান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কল্যাণ চন্দ্র বর্মণের বাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। রাত সাড়ে ৮টায় পীরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শক্তিশালী ককটেল বিস্ফোরণে এক আনসার সদস্য আহত হয়েছে। এছাড়া নগরীর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, মেডিক্যাল পাবলিক স্কুল ওসালমা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ককটেল ও সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ কেন্দ্রে পেট্রোল বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
রাতে পীরগাছার পাঠক শিকড় উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, দিলালপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিবদেব প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শাওলা প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। এসময় তারা ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যায়।
কুষ্টিয়ায় শুক্রবার রাত ২টার দিকে সদর উপজেলার আলমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে এলাকাবাসী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় এক বিএনপি কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার গভীর রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ আউখাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের দুইটি কক্ষে কেরোসিন দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। শনিবার ভোর রাতে উপজেলার চারটি কেন্দ্রে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় নাটোরের সিংড়া রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়নের কয়াপাড়া কমিউনিটি বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে আগুন দেয় ১৮দল কর্মীরা। পেট্রোল বোমা থেকে ছড়িয়ে পড়া এ আগুনে স্কুলের আসবাবপত্রের ক্ষয়ক্ষতি হয়।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে খুলনায় সুন্দরবন আদর্শ কলেজ, বিকে ইউনিয়ন ইনস্টিটিউট, রূপসা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, নজরুল নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনে বিকে ইউনিয়ন ইনস্টিটিউট স্কুলের নতুন বইসহ অনেক কিছু পুড়ে গেছে।
শুক্রবার রাত ১১টায় রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সারদা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, কালাবিপাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের চারটি কক্ষে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনে সারদা স্কুলের অফিস কক্ষ ও দরজা-জানালা এবং কালাবিপাড়া স্কুলের টিনসেটের চারটি কক্ষসহ বিপুল পরিমাণ আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। এছাড়া শলুয়া ডিগ্রি কলেজ এবং শিবপুর ভকেশনাল স্কুল কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
শুক্রবার মধ্যরাতে বগুড়ার নন্দীগ্রাম রিধইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাবতলী উপজেলার চক কাগইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য কাতুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শাহজাহানপুর উপজেলার শহীদ জিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আগুন দেয় ১৮দল কর্মীরা।
শুক্রবার গভীর রাতে ভোলার দৌলতখান উপজেলার চরসুফি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কলাকোপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তজুমুদ্দিন উপজেলার সোনাপুর চাপড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার হাসাননগর ইউনিয়নের একটিসহ ৪টি কেন্দ্রে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
শুক্রবার রাত তিনটায় মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার পয়লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নেহালপুর ব্র্যাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দু'টি ভোট কেন্দ্রে আগুন দেয়া হয়েছে। এতে উভয় কেন্দ্রের চেয়ার-টেবিল ও আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার ঘিওরে একটি ভোট কেন্দ্রে অগ্নি সংযোগ করা হয়।
গভীর রাতে নেত্রকোনা সদর উপজেলার মনাং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চন্দনকান্দি ও মদনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ তিনটি কেন্দ্রে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। গভীররাতে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার মান্নারগাঁও রামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধর্মপাশা উপজেলার সরিষাম প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বরাকাটা প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা।
শুক্রবার গভীর রাতে দিনাজপুর সদর উপজেলার বড়ইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাঁদগঞ্জ ভোটকেন্দ্র ও তবিরউদ্দিন মেমোরিয়াল বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। বড়ইল স্কুলের জানালা ভেঙে আগুন দেয়া হয়। গতকাল সন্ধ্যায় পাবর্তীপুর উপজেলার বড় হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে ব্যালট পেপার ও ব্যালট পেপার ছিনতাই করে। এসময় তারা প্রিজাইডিং অফিসারসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ১০ জনকে পিটিয়ে আহত করে। সন্ধ্যায় খানসামা উপজেলার বালাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রিজাইাডিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ভোটকেন্দ্রে পৌঁছলে সরঞ্জামসহ একটি ট্রাক্টর পুড়িয়ে দেয়। চিরিরবন্দরের পূর্ব সাইতাড়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সন্ধ্যায় দুর্বৃত্তরা ইটপাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করে।
গতকাল সকাল সাড়ে আটটার দিকে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ঢেলি করটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এইচএম ইনস্টিটিউট স্কুল, গোপালপুর উপজেলার হাদীরা ইউনিয়নের মাহমুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ভাদুরির চর চারটি কেন্দ্রে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের খামার পাড়া ও শিমলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে দুর্বৃত্তরা ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এসময়ে তারা নির্বাচনের কাজে জড়িত কর্মকর্তাদের নাজেহাল করে। গতকাল ভোর পৌনে ৬টায় পিরোজপুরের মিরুখালী দেবীপুর বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আগুন দেয়া হয়।
সকালে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুর কয়েলখালী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মনিরামপুর উপজেলার দুইটি কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়া একাধিক কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের গুজব ছড়ানো হয়। জেলার সাতটি কেন্দ্রে পেট্রোল বোমা ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে।
শনিবার ভোরে পটুয়াখালী জেলার পাঙ্গাশিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্রের পাশ থেকে দুইটি পেট্রোল বোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরতলীর ক্ষুদ্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সদর উপজেলার চর ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আগুনে স্কুলের বইসহ বিপুল আসবাবপত্র পুড়ে গেছে।
শনিবার ভোরে বরগুনা সদর উপজেলার দক্ষিণ লেমুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্যপাঠাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নলী মাইঠা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেলতাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমতলী উপজেলার মধ্য আড়পাঙ্গাশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মানিকজুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বেতাগি উপজেলার পূর্ব রানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র, কাগজপত্র ও দরজা-জানালা পুড়ে গেছে। পরে পুলিশ, নৌবাহিনী ও র্যাব সদস্যরা সতর্ক টহল বাড়িয়েছে।
গতকাল সকাল ৮টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগদাঁড়ি গদাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
গতকাল বেলা ১১ টার দিকে মেহেরপুর পৌরসভার পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। পরে বড় বাজার এলাকায় মোহাম্মদ আলী মার্কেটের সামনে দুইটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
রাজশাহীর ছয়টি ভোট কেন্দ্রে শুক্রবার মধ্যরাতের দিকে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। জেলার চারঘাট উপজেলার সরদহ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, হাবিবপুর কালাবিপাড়া স্কুল, শিবপুর ভকেশনাল ইনস্টিটিউট, শলুয়া ডিগ্রী কলেজ ও বালিয়াডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় এবং পবার শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগুন দেয়া হয়। গভীর রাতে শ্যামপুর মধ্যপাড়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানীয় আওয়ামী লীগের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি ও সাবেক সেনা সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা। রাজশাহীর পবা উপজেলার বায়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ও ককটেল হামলা হয়েছে। শনিবার রাত ৮টার দিকে স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডারদের এই হামলায় ভোটকেন্দ্রটির একটি কক্ষে আগুন ধরে যায়। এসময় স্থানীয় লোকজন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ৩টি পেট্রোল বোমা ও ১টি ককটেলসহ দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ছলিমগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে শনিবার ভোররাতে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে। এ দিন কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে দুইটি কেন্দ্রে, সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় ২টি ও বিশ্বনাথে একটি কেন্দ্রে, শেরপুরের কয়েকটি কেন্দ্রেও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যার পর চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ভোটকেন্দ্রের সামনে শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। নগরীর আশকার দিঘীর পাড় লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সামনে, মোমিন রোড কদম মোবারক এতিমখানার সামনে, জেল রোড, এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের নির্বাচন কমিশনের কন্ট্রোল রুমের সামনের রাস্তায়, আন্দরকিল্লা, বন্দর এলাকাসহ আরো ১০-১২টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
সংসদ নির্বাচন আজ ১৪৭ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৩৯০ প্রার্থী, অংশ নিচ্ছে ১২টি দল
সালেহউদ্দিন ও সাইদুর রহমান
উদ্বেগ-আতঙ্ক
থাকলেও কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আজ রবিবার দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন
অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জাতীয় সংসদের ৩শ'টি একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকার মধ্যে
১৪৭টি আসনে এ ভোট গ্রহণ হবে। ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিভিন্ন
দলের প্রার্থীরা ইতিমধ্যে বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচনে ১২টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক
দলের ৩৯০জন প্রার্থী বিভিন্ন প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এর একটি বড়
অংশ অর্থাত্ ১০৫ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এ নির্বাচনকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ
সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষার এবং প্রধান বিরোধী দল বিএনপি গণতন্ত্র হত্যার
নির্বাচন বলে অভিহিত করেছে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র রক্ষায় এবং ভোটের অধিকার
প্রয়োগের জন্য ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
বিএনপি দলমত নির্বিশেষে নির্বাচন বর্জনের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান
জানায়। দুই দলের এই পরস্পর বিরোধী অবস্থানের কারণে নির্বাচনকে ঘিরে
দেশজুড়ে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইতিমধ্যে ১৫০টির মতো ভোটকেন্দ্রে
অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিসংযোগ-অবরোধ এবং হরতালের মধ্যেই
ভোটগ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ভোটকেন্দ্রগুলোতে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সামগ্রী পাঠানো হয়েছে।
সেনাবাহিনী-র্যাব-বিজিবি-পুলিশ-আনসার নির্বাচনী এলাকায় টহল জোরদার করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ স্বচ্ছ নির্বাচন হবে বলে দাবি করেছেন। তিনি ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, বিকল্প ব্যবস্থায় ওইসব কেন্দ্রে অথবা তার পার্শ্ববর্তী স্থানে ভোটগ্রহণ হবে। রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ৬৪ জেলার মধ্যে ৫৯ জেলায় ভোট হবে। ভোট হচ্ছে না-চাঁদপুর, রাজবাড়ী, জয়পুরহাট, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলায়। এই জেলাগুলোর সব আসনেই প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রায় সাড়ে চার লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। নির্বাচনী সামগ্রী প্রেরণ ও নজরদারীর জন্য পাবর্ত অঞ্চলের ৩ জেলার ৩৩ কেন্দ্রে ব্যবহার করা হবে হেলিকপ্টার। ১৮ হাজার ২০৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭৫ ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে কমিশন। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে তিনস্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
নির্বাচনে বিরোধী জোটের নাশকতার পাশাপাশি কিছু আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লোকজন পেশিশক্তি ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে। বেশকিছু জেলাকে নাশকতা প্রবণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই জেলাগুলো হলো-ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা, সাতক্ষীরা, যশোর, মেহেরপুর, খুলনা, ঝিনাইদহ, রাজশাহী, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নীলফামারী, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, গাইবান্ধা, হবিগঞ্জ, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার। নির্বাচন উপলক্ষে সারাদেশে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। এবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাড়ে চার লাখ সদস্যের বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে সশস্ত্র বাহিনী ৫০ হাজার, পুলিশ ৮০ হাজার, র্যাব সাড়ে আট হাজার, বিজিবি ১৬ হাজার, আনসার আড়াই লাখ ও কোস্টগার্ড ২০০। ভোটকেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকবে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ। মহানগর এলাকার বাইরের সাধারণ ভোটকেন্দ্রে একজন পুলিশসহ ১৪ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে দু'জন পুলিশসহ ১৪ জন দায়িত্বে থাকবেন। মহানগর এলাকার প্রতি কেন্দ্রে তিন পুলিশসহ ১৬ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে পাঁচ পুলিশসহ ১৮ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত পুলিশ গতকাল থেকে দায়িত্ব পালন শুরু করেছে, অবস্থান করবে ভোট গ্রহণের পরদিন পর্যন্ত। আনসার বাহিনী গত বুধবার থেকে দায়িত্বে আছে। আর সশস্ত্র বাহিনী ২৬ ডিসেম্বর থেকে দায়িত্ব পালন করছে। তারা মাঠে থাকবে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। বিজিবি, কোস্টগার্ড, র্যাব ও আর্মড পুলিশ ১ থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্বে থাকবে।নির্বাচনে মোট ৯ কোটি ১৯ লক্ষ ৬৫ হাজার ৯৭৭ জন ভোটারের মধ্যে এবার ভোট দিবেন ৪ কোটি ৩৯ লক্ষ ৩৮ হাজার ৯৩৮ জন। অর্থাত্ অর্ধেকের বেশি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হবে। ১৪৭ আসনে মোট ভোটকেন্দ্র হচ্ছে ১৮ হাজার ২০৮টি। আর ভোটকক্ষ ৯১ হাজার ২১৩টি। এ আসনগুলোতে ১২টি রাজনৈতিক দলেরসহ মোট ৩৯০ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ভোটযুদ্ধে থাকছেন। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ১২০ জন, জাতীয় পার্টি-জাপার ৬৫ জন, জাতীয় পার্টি-জেপি ২৭, জাসদ ২১, ওর্য়াকার্স পার্টি ১৬, বিএনএফ ২২, গণতন্ত্রী পার্টি ১, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ৬, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ৩, গণফ্রন্ট ১, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ১ এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ২টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এছাড়াও ১০৫ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচনে দায়িত্বে আছেন রিটার্নিং অফিসার ৫৯, সহকারী রিটার্নিং ২৮৭ জন, প্রিজাইডিং অফিসার ১৮ হাজার ২০৮, সহকারী প্রিজাইডিং ৯১ হাজার ২১৩, পোলিং অফিসার ১ লাখ ৮২ হাজার ৪২৬, ইলেকটরাল ইনকোয়ারি কমিটি ১০৩ (২ সদস্য), জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১৪৭ এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ২৯৪ জন। এছাড়া দুর্গম এলাকা বিবেচনায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পার্বত্য তিন জেলার ৩৩টি কেন্দ্রে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের ২২টি সংস্থার ১০ হাজার ২০৫ জন, এবং অন্যান্য ৮টি সংগঠনের ৩ হাজার ১৩৬ জন পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। বিদেশীদের মধ্যে ভারত ও ভূটান এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছে।
নির্বাচন হচ্ছে না ১৫৩ আসনে
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৩ ডিসেম্বর প্রত্যাহারের শেষদিনে ১৫৪ আসনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিল না। ফলে স্ব স্ব আসনের রিটার্নি অফিসাররা প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন। এর মধ্যে হাইকোর্টের রায়ে কুমিল্লা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ এস এম কামরুল ইসলামের প্রার্থিতাকে বৈধ বলে ঘোষণা করে। ফলে ইসি ওই আসনে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে এখন ১৫৩ আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। এই আসনগুলোর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ১২৭, জাতীয় পার্টি (জাপা) ২০, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক পার্টি-জাসদ ৩, ওর্য়াকার্স পার্টি ২ এবং জাতীয় পার্টি-জেপি ১ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। ফলে এসব আসনে আর নির্বাচন লাগছে না।
ফলাফল পর্যবেক্ষণে ১২টি দলকে ইসির চিঠি
আজ রবিবার অনুষ্ঠিতব্য দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল পর্যবেক্ষণের জন্য অংশগ্রহণকারী ১২টি দলকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গত শুক্রবার রাতে কমিশনের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এ চিঠিটি দলগুলোর সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়। চিঠিতে জানানো হয়, নির্বাচনের ফলাফল পর্যবেক্ষণে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে ১২টি বুথ বসানো হবে। সকাল ৮টা থেকে শুরু করে ওই বুথগুলোতে প্রতিটি দলের প্রতিনিধিরা ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান করতে পারবেন। সেখান থেকে ফলাফলের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করতে পারবেন দলগুলোর দায়িত্বরত প্রতিনিধিরা।
ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে তত্পরতা
ইসি কর্মকর্তারা জানান, তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো ভোটে অংশ নিতে গ্রাহকদের এসএমএস দিচ্ছে। বার্তাগুলো হচ্ছে-'ভোট গণতান্ত্রিক অধিকার, নির্বাচনে ভোট দিয়ে আপনার অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখুন। নির্বাচনে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে; নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন।' বরাবরের মতো এবারো ভোটের আগের দিন বিশেষ নম্বরে এসএমএস করে কেন্দ্র ও ভোটার নম্বর জানানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ভোটকেন্দ্র-নির্বাচনী সরঞ্জামের বিশেষ নিরাপত্তা
ভোটকেন্দ্র ও ভোটের সামগ্রিক মালামালের বিশেষ নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে সব ভোট-কেন্দ্রের চারদিকে নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। সীমিত করা হয়েছে সব ধরনের যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচল। ভোট-কেন্দ্রের চারপাশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের টহলও জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনী সরঞ্জামের নিরাপত্তা বিবেচনায় আগামী সকালে ভোটগ্রহণের আগে স্থানীয় নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকিতে তা ভোটকেন্দ্রে পৌঁছানো হবে।
ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র স্থাপন
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রিটার্নিং অফিসারদের থেকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ভোট গ্রহণ চলাকালে পরিস্থিতি প্রতিবেদন ও ভোটগ্রহণ শেষে প্রাথমিক বেসরকারি ফলাফল সংগ্রহ করতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে একটি 'ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশ কেন্দ্র' স্থাপন করা হয়েছে। আগামীকাল সকাল ৮টা থেকে সর্বশেষ বেসরকারি ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত এ কেন্দ্রের কাজ অব্যাহতভাবে চলতে থাকবে। এছাড়া রেজাল্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আরএমএস) পদ্ধতিতে ইন্টারনেটের মাধ্যমেও সারাদেশের ফলাফল সংগ্রহ করবে কমিশন। ইতোমধ্যে সারাদেশে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে এজন্যে সফটওয়ার বিতরণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৯ নভেম্বর বর্তমান কমিশন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষােশষে ২৫ নভেম্বর দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। এতে ৫ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারণ করা হয়। ২ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে ৫ ও ৬ ডিসেম্বর তা যাচাই-বাছায়ের দিন ধার্য করা হয়। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ১৩ ডিসেম্বর। ১৪ ডিসেম্বর সব প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয় রিটার্নিং অফিসার (জেলা প্রশাসক)। ১৫ ডিসেম্বর থেকে প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়ে চলে ৩ ডিসেম্বর শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত। ৩০০ আসনে ভোটকেন্দ্র ছিল ৩৭ হাজার ৭০৮টি। আর ভোটকক্ষ ছিল ১ লক্ষ ৮৯ হাজার ৭৮টি।
Subscribe to:
Posts (Atom)